সেবার মডেল- কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

নড়াইল জেলার সদর উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকার স্বাস্থ্যচিত্র হতাশার হলেও ব্যতিক্রম শুধু কালিয়া। ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের ফিল্ড ট্রিপে সরেজমিন গিয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় দেখা গেছে,
একজন চিকিৎসকই পাল্টে দিয়েছেন কালিয়া উপজেলার মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যচিত্র। গ্রামবাসী ও হাসপাতাল কর্তৃপও তা স্বীকার করেছেন। তিনি হলেন ডা. বিকাশ চন্দ্র মলিস্নক। সহকারী সার্জন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি অপারেশন থিয়েটারে অপারেশনে ব্যসত্ম। এভাবে প্রতিদিন তিনি ব্যসত্ম থাকেন রোগীদের সেবায়। নিজের সনত্মানের চেয়ে ভালবাসেন রোগীদের। রোগী দেখে তিনি কখনও বিরক্ত হন না। বরং খুশি হন। এ লোকটি আবার মাঠকমর্ীদের পাঠায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের তালিকা তৈরি করতে। তারাও ছুটে যায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সবার আনত্মরিক চেষ্টায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রসূতি বিভাগে ৬৩ ভর্তি রোগীর মধ্যে ৪০ জনই ভর্তি হয়েছে প্রসব জটিলতা নিয়ে। এদের মধ্যে ২১ জনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সনত্মান প্রসব করানো হয়। জীবিত প্রসব করানো হয় ৩৮টি নবজাতকের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যায় একটি শিশু। প্রসূতিসংক্রানত্ম অস্ত্রোপচার হয় ৪ জনের। অন্যত্র স্থানানত্মর করা হয় ১০ জনকে। ওই মাসে প্রসব জটিলতায় মৃতু্যবরণ করতে হয়নি কোন মাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে সিজারিয়ানের মাধ্যমে সনত্মান প্রসব করেন ২৫-৩০ জন। সাধারণ ডেলিভারি হয় ৫৫-৬০ মায়ের। পাশাপাশি এলাকার গর্ভবতী মায়েদের সমীা কার্যক্রম চলছে। চিহ্নিত গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকল ধরনের স্বাস্থ্য পরামর্শ দেন। এ কার্যক্রমে অংশ নেয় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত মাঠকর্মীরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নড়াইল জেলা সদর হাসপাতাল ও কালিয়াসহ দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য ইনফরমেশন ডেস্ক থেকে গর্ভবতী-প্রসূতি মা ও ভূমিষ্ঠ শিশুদের অধিকার ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরামর্শ দিচ্ছে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। হাসপাতাল বা কমপেস্নক্সে থেকে কিভাবে সুবিধা নিতে হয় তা গ্রামের অধিকাংশ মানুষই জানেন না। এজন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে পৃথক ইনফরমেশন ডেস্ক। ডেস্ক থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ২০০৯ সালে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যনত্ম কালিয়া উপজেলায় তথ্য ডেস্ক থেকে পরামর্শ পেয়েছেন ৩২৮ পুরম্নষ এবং এক হাজার ৭৮২ নারী। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে গঠন করা হয়েছে নড়াইল স্বাস্থ্য সেবাগ্রহীতা ফোরাম। এ ফোরামের কাজ হচ্ছে হাসপাতাল বা ডাক্তার থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নেয়া। একই সঙ্গে সচেতনেতা সৃষ্টি করা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএফএম রফিকুল হাসান বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পেলে চিকিৎসার মান আরও উন্নত করা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রথম শ্রেণীর মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৩৪। বর্তমানে কাজে নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ৪। ৩০ জনের পদই শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। তৃতীয় শ্রেণীর ১২৭ পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৭৭। ৫০ জনের পদই শূন্য এবং চতুর্থ শ্রেণীর মোট ২৫টি পদের মধ্যে রয়েছেন ১৮ জন। বাকি ৭ পদ শূন্য। মোট ১৮৬ পদের মধ্য ৮৭ পদই শূন্য। তিনি আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসক রয়েছে চারজন। উপজেলার মোট ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন করে মোট ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। এত কমসংখ্যক ডাক্তার নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সুকুমার কু-ু সনত্মোষ প্রকাশ করেন কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে। তিনি বলেন, সেখানে যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে তা সদর উপজেলাতেও সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামের মানুষের কল্যাণে কমিউনিটি কিনিক জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। সিভিল সার্জন বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃতু্যর হার প্রতি হাজারে ২০১৫ সালের মধ্যে শতকরা ৫০-এ নামিয়ে আনাব। এক বছরের কম বয়সী শিশুমৃতু্য হার ৩১-এ নামিয়ে আনা। নবজাতক শিশুমৃতু্যর হার ২০ এবং মাতৃমৃতু্যর হার প্রতি লাখে ১৪৩ জনে নামিয়ে আনার ল্য নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘ। যার নাম মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি।

No comments

Powered by Blogger.