আর্সেনিক প্রতিরোধেও তৈরি হচ্ছে সচেতনতা

নিজাম উদ্দিন এ যুবকের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাঐসোনা ইউনিয়নে। তিনি দুঃখ ভারাক্রানত্ম হৃদয়ে বললেন এভাবে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান মোকাবেলা করছে ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর মরণব্যাধি তখনও আর্সেনিক আতঙ্কে আমরা দিন কাটাচ্ছি।
শুধু তিনি নন, উপজেলার অধিকাংশ মানুষ এমন আতঙ্কে আছে কখন কার আর্সেনিক দেখা দেয়। এ ভয় নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে তাদের। উপজেলাটিতে বর্তমানে চিহ্নিত আর্সেনিক রোগী আছেন ৬৫ জন। এরপরও সব এলাকায় নিরাপদ পানি না থাকায় জেনেশুনে প্রতিনিয়ত ওই এলাকার বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষকে পান করতে হচ্ছে আর্সেনিকযুক্ত পানি। ইউনিসেফের সহায়তায় বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতের কর্মসূচী চলমান থাকলেও স্থানীয়দের দায়িত্বহীনতার কারণে তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তবে স্থানীয় কর্তারা দাবি করেছেন তারা প্রায় ৪৫ ভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি পান করাতে সৰম হয়েছেন। পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে তারা শত ভাগ মানুষকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এজন্য আরও সহায়তার দাবি করেছেন তারা।
আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে উলসী সৃজন সংঘ (ইউএসএস)। এ সংঘের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালিয়া উপজেলায় ৪১ হাজার ৬১০ পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৬৪৯টি পরিবারকে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা দিতে পেরেছে তারা। বাকি ২২ হ্জার ৯৬১ পরিবার রয়েছে নিরাপদ পানি সুবিধা বঞ্চিত। তাদের প্রতিনিয়ত পান করতে হয় আর্সেনিকযুক্ত পানি। এখনও ওই এলাকায় আর্সেনিকযুক্ত পানির উৎস বেশি। যেখানে আর্সেনিকমুক্ত পানির উৎস আছে ৪ হাজার ৫২২টি। অন্যদিকে আর্সেনিকযুক্ত পানির উৎস রয়েছে ৫ হাজার ৫৫৮টি।
আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য গভীর নলকূপ রয়েছে ৩২০টি। এর মধ্যে বড়নাল-ইলিয়াছাবাদ ইউনিয়নে কোন গভীর নলকূপ নেই। তবে এই ইউনিয়নে ২টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। আরও ২টি অগভীর নলকূপ রয়েছে বাবরা হাচরা ইউনিয়নে। বাকি ১১টি ইউনিয়নে কোন অগভীর নলকূপ নেই। এছাড়াও ৩৯টি রেড-এফ, ৩৭২টি অলকান, ৫৩৯টি সনো ফিল্টার এবং ২টি সিডকো পস্নান্ট এর মাধ্যমে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে নিরাপদ পানির বড় উৎস হচ্ছে কলাবাড়ি ও বাঐসোনা ইউনিয়নে স্থাপিত সিডকো পস্নান্ট দুইটি। একটি পস্নান্ট থেকে পুরো ইউনিয়নের মানুষ পানি সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু স্থানীয় পরিচালকের তদারকির অভাবে বাঐসোনা ইউনিয়নের সিডকো পস্নান্টটি অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কতদিন ধরে অকার্যকর সঠিক তথ্য কেউ বলতে পারেনি। যার জন্য নিজামউদ্দিনদের জেনেশুনে খেতে হচ্ছে আর্সেনিকযুক্ত পানি। অর্থাভাবে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে পারছে না তারা।
ইউনিসেফের সহায়তায় নিরাপদ পানির কর্মসূচী যখন শুরম্ন হয় তখন ১৩০ জনের একটি তালিকা স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের আর্সেনিক ধরা পড়ে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কপেস্নক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের কেউ এখনও পুরোপুরি ভাল হয়নি বলে জানা গেছে। আর্সেনিকের লৰণ দেরিতে দেখা দেয়ার কারণে এ পর্যনত্ম আর কোন রোগী চিহ্নিত করা যায়নি। তবে হঠাৎ করে কখন কার আর্সেনিক দেখা দেয় সে শঙ্কা সবার মধ্যে বিরাজমান। শত ভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আরও সহায়তার কথা বললেন উলাসী সৃজনী সংঘের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার আজিজুল হক মনি। তবে পর্যাপ্ত সহায়তার কারণে এ উপজেলা শতভাগ আর্সেনিকমুক্ত করতে না পারলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ সৃষ্টি করতে পেরেছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, যে লৰ্য নিয়ে ইউনিসেফ কার্যক্রম শুরম্ন করেছে তার জন্য সংস্থাটির সহায়তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.