রক্তে ভেজা ক্যাম্পাস নয়

'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...'_ চিরন্তন এই ভাষা আন্দোলনের মাসে আমরা আবারও ভাই হারালাম। সে আবু বকর।
সে ছিল আমার বন্ধু,সহপাঠী। তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল জাতীয় কবির মাজারে। গিয়ে দেখি সহজ-সরল মুখের একজন বসে আছে। ২০০৭ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারি। কিছুৰণ বসে থেকে উঠে আসার সময় পেছন থেকে ডাক আসে, মেহেদী ভাই ? আগে যে চেহারাটা দেখেছিলাম সে চেহারাটা মনে হয় না এর আগেও দেখেছি। তারপরও ডাক শুনে দাঁড়ালাম। উঠে আসলেন সরল মুখের মানুষটি। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমি আবু বকর ছিদ্দিক। ইসলামের ইতিহাসে পড়ছি। পরিচয় পর্ব শেষে বললেন, "আপনাকে চিনি চিত্রশিল্পী হিসেবে বা কবি হিসেবে নয়, কণ্ঠশিল্পী হিসেবে।" আসলেই আমি দু'টির একটিতেও ভাল নই। আমার চারুকলা, গান, সাংবাদিকতা, ছাত্র রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। প্রথম পরিচয়েই আপন করে নিয়েছিলেন আবু বকর ছিদ্দিক। কখনও আপনি থেকে তুমিতে আসা হয়নি। তাই আজও যাচ্ছি না তুমির উঠোনে। সেদিন হাঁটতে হাঁটতে টিএসসির গেটে চলে আসি। আনসার মামা (টিএসটির গেটকীপার) প্রতিদিনের মতো একটা হাসি দিয়ে কুশল বিনিময় করেছিলেন। দীর্ঘৰণ পর্যনত্ম কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
কাসের সময় হতেই তাড়া দিয়েছিলাম। পরে প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো। ২০০৭ ও ০৮-এ তাঁর কোন সেল ফোন ছিল না। এ দু'বছর আবু বকর কথা বলতে শাহনেওয়াজ হলে চলে আসতেন। কথা হতো। তিনি প্রায়ই বলতেন, 'আপনি আলাদা বলেই আপনার কাছে আসি।'
জীবনের এলোমেলো পথ বড়ই অপছন্দ ছিল তাঁর। একবার আমাদের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ। টিএসসির ক্যাফেটারিয়ায় অনুষ্ঠিত গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে আবু বকর এসেছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরম্ন থেকে শেষ পর্যনত্ম ছিলেন। মাঝে মাঝে এসে বলেছেন, মেহেদী ভাই, গান যেন হয়।
গান অনেক পছন্দ ছিল তাঁর। মাঝে মাঝে গাইতেন। আমি তাঁর গান শুনে পুলকিত হতাম। কথা ছিল পরীৰা শেষ হলে আমার কাছে গিটার শিখবেন। আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি আমার কাছে আসলেই ভুলে যেতেন তিনি। বলতেন, 'আসলে মানি ইজ নট ম্যাটার। আজ নেই কাল হবে।' এই স্বপ্নই দেখাতাম আমি সবার মতো আবু বকরকে। তাঁর নামটা বড় হওয়ায় আমি সব সময় আবু ভাই নামেই ডাকতাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে, এতটা নীরব আর সরল মুখের মানুষ দেখে ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানে আমাদের সংগঠনের মহাপরিচালক শানত্মা ফারজানা বলেছিলেন, খুবই ভাল ছেলে। সারাজীবন সহজভাবে কথা বলেছেন, পথ চলেছেন। আর এ কারণেই তাঁর মৃতু্যটা শরীরে আগুন ধরায়। প্রতিবাদে নেমে পড়ি প্রতিদিন। আবু আমার বন্ধু, আমার ভাই। ভাই হারানোর ব্যথা নিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে ঘোষণা দিতে চাই, আবু ভাইর হত্যার সঙ্গে যুক্তদের বিচার ও শিৰাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করা না হলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হবে। শুধু তাই-ই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট-বালুকেও আন্দোলনে নামিয়ে দেয়া হবে। কারণ, আমরা আমার ভাইয়ের রৃ।...
মোমিন মেহেদী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.