শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় by অলিউর রহমান ফিরোজ

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিবস ১ মে। যাদের রক্তঝরা ঘামের বিনিময়ে অর্জিত হয় কারখানা মালিকদের অর্থনৈতিক চাকা, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পদদলিত হয়ে আসছে। মালিকদের দমন-পীড়নের কারণে শ্রমিকরা এখন আর আগের মতো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করতে পারে না।
তাই সর্বক্ষেত্রে শ্রমিকদের লাঞ্ছনা আর বঞ্চনাই যেন তাদের এখন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বিশ্ব তাই এ দিবসটিকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য পাওনা আদায়ের দিবস হিসেবে ঘোষণা করে প্রতি বছর পালন করে আসছে। প্রতি বছরই মে দিবস পালন করা হয় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদয়ের জন্য; কিন্তু তাতে করে শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের কি কোনো পরিবর্তন সাধন হয়? বিশ্ব শ্রমিক দিবস এমন এক সময় পালন করার জন্য আসছে যখন বিশ্ববাজারে শ্রমিকরা লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং তাদের মুক্তির লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালে এদিনে শ্রমিকদের বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে ছিল। তাই এদিন এলেই শ্রমজীবী মানুষের মনে এক নবচেতনার অবতারণা ঘটে। শ্রমিকের বুকের রক্তে লেখা সে ইতিহাস এখন শ্রমিকরা তাদের বুকে লালন করে চলেছেন। শ্রমিকদের স্বার্থে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১২০ বছর আগে তা শ্রমজীবীদের মাঝে নতুন করে উদ্ভাসিত হবে এ দিবসটি।
১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রতি বছর পালিত হতে থাকে মে দিবস নামে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্যানারে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভা ঘটা করে পালন করে থাকে বিভিন্ন সংগঠনগুলো। কিন্তু তাতে করে আমাদের গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা এবং তাদের সঠিক মজুরি আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকরা কয়েক বছর আগে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললে সরকার এবং মালিক পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দিলেও তারা এখন পর্যন্ত সে বেতন কাঠামোর আলোকে তাদের প্রাপ্য মজুরি প্রদান করা থেকে বঞ্চিত করে আসছেন। এক সময় শিল্পের শ্রমিকদের কাছেই এ দিবসের তাৎপর্য থাকলেও এখন সর্বশ্রেণীর শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তারা সমাজ বিপল্গবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এদিনে নতুন করে শপথ নিচ্ছেন। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে ডাক দিতে এখন প্রস্তুত হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কলকারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে অন্য শ্রমিকরাও। আর তাতে করে এ দিবসের তাৎপর্য আরও বেড়ে যায়। এমনকি কৃষি খাতে নিযুক্ত শ্রমিকদের কাছেও পেঁৗছে গেছে এদিনের মর্মবাণী। দেশের মধ্যে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতে করে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় তারা কাউকে না পেয়ে মাঝে মধ্যে দুর্বার আন্দোলনের ডাক দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে দেখা গেছে তাদের। আজ সারাদেশে সুস্থ ও দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা শুধু সরকার বা বিনিয়োগকারীরাই নয়, শ্রমিক সমাজের পক্ষ থেকেও দাবি তোলা হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে, কোন পথে সম্ভব, সে ব্যাপারে কারও মাথাব্যথা খুব একটা আছে বলে মনে হচ্ছে না। দুর্মূল্যের বাজারে এমনিতেই শ্রমিকদের হিমশিম খেতে হয়, এখন সেখানে যদি তাদের বেতন কাঠামো কাজের পরিধি অনুসারে পরিশোধ করা না হয় তাহলে তাদের রাস্তায় নামা ছাড়া তো আর কোনো গত্যন্তর থাকে না। মহান মের এই ঐতিহাসিক দিবসে আসুন আমরা সরকার, মালিক, শ্রমিকসহ সব পক্ষ সবার স্বার্থে অঙ্গীকারবদ্ধ হই একটি জনকল্যাণমুখী, মানবিক ও উৎপাদনমুখী শ্রম আইন প্রণয়ন করতে, অসৎ মালিক ও শ্রমিক উভয়কে প্রতিরোধের মাধ্যমে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্কের বিকাশ ঘটাতে, সভ্যতা বিনির্মাণের নিয়ামক শক্তি দেশের লাখো কোটি শ্রমিকের ভাত-কাপড়-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও বিশ্রামের সুযোগ নিশ্চিত করতে, সর্বস্তরে মৌলিক মানবাধিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ও শান্তির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে।
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ
 

No comments

Powered by Blogger.