অ্যাডভেঞ্চার থ্রিডি! by ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

বিদ্যুতের বেগে ছুটছে স্পাইডারম্যান। চোখের পলকে পেরিয়ে যাচ্ছে আকাশচুম্বী ভবন। এর মধ্যেই হঠাৎ থামল পলকের জন্য। ডিগবাজি খেল শূন্যে। আঙুল নাচাল দর্শকদের দিকে তাক করে।
যেন তার সঙ্গে আশ্চর্য উড়ালে সঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ!
তারপর তার রুপালি তন্তু ছুড়ল দর্শকদের দিকে। চকচকে রুপোলি সুতো ছুটে আসছে ঠিক আমাদের দিকেই। প্রায় চোখে লেগে গেল বলে! হলের দর্শকদের মধ্যে উল্লাসধ্বনি। আহ্লাদে-উত্তেজনায় চেঁচাচ্ছে কেউ কেউ। এমনভাবে বহুকাল উড়ে গেছে খ্যাতিমান সুপার হিরো স্পাইডারম্যান। কিন্তু মাকড়সা মানবের উড়ে যাওয়া এমন রোমাঞ্চকর মনে হয়নি আর কখনো। এই রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার আসল বাহাদুরির বেশ খানিকটা আসলে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির। যার প্রচলিত সংক্ষেপিত নাম ‘থ্রিডি’।
ত্রিমাত্রিক ছবির সঙ্গে মানুষের পরিচয় ঘটেছে বহু আগেই। উইকিপিডিয়া বলছে, শ খানেক বছর আগেই ত্রিমাত্রিক ছবি ধারণের কায়দা রপ্ত করে ফেলেছে মানুষ। কিন্তু পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রের ইতিহাস ভিন্ন কথা বলবে। ত্রিমাত্রিক পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবির এমন জয় জয়কার খুব বেশি দিনের ঘটনা নয়। সেই জনপ্রিয়তা এমনই যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাংলাদেশ অবধি পৌঁছে গেছে পূর্ণদৈর্ঘ্য থ্রিডি ছবি। দ্য অ্যামাজিং স্পাইডারম্যান প্রথমবারের মতো থ্রিডি রূপে এসেছে স্টার সিনেপ্লেক্সে। তবে সেটাই শেষ নয়। রাজধানীর অভিজাত এই হলে স্পাইডারম্যানের সঙ্গে যোগ হয়েছে থ্রিডি দ্য অ্যাভেনজারস। শিগগির আসছে লাইফ অব পি। বাংলাদেশের সিনেমা হলে ত্রিমাত্রিক ছবির যুগ সগৌরবে শুরু হয়ে গেছে, বলতেই হচ্ছে।
নির্বাক থেকে ছায়াছবি যেদিন সবাক হলো, সেদিনও নিশ্চয়ই একই রকম বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছে মানুষ। একটা সময় ছিল, যখন ঢাকাই ছবির পোস্টারে কোনার দিকে লেখা থাকত সম্পূর্ণ রঙিন। ছায়াছবির গায়ে রং লাগাটাই বিশাল ঘটনা মনে হয়েছিল দর্শকদের কাছে। অশনি সংকেত ছবি স্রেফ ‘রঙিন’ বলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল স্বয়ং সত্যজিৎ রায়কে। তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘অশনি সংকেত সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, এ কাহিনির জন্য আমি রং ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম কেন?’
পরে সত্যজিৎ রায় নিজের সিদ্ধান্তটি দিয়েছেন এভাবে।
‘অশনি সংকেত-এর দৃশ্য গ্রহণের কাজ শেষ করে আজ আমার বিশ্বাস হয়েছে যে রং জিনিসটা সব রকম বিষয়বস্তুর পক্ষেই উপযোগী।’
অ্যাভাটার থেকে স্পাইডারম্যান কিংবা লাইফ অব পি—এখন পর্যন্ত মূলত অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চারধর্মী ছবির জগতেই বিচরণ ত্রিমাত্রিক ছবির। কিন্তু মনে হচ্ছে, এই গণ্ডি ভেঙে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। জেমস ক্যামেরনের টাইটানিক আর যা-ই হোক অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ছবি নয়। ছবিটা আগে দেখাও হয়ে গেছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে যখন দেখলাম সেই ছবি চলছে, তখন মুক্ত কচ্ছ হয়ে ছুটেছি টাইটানিক নতুন রূপে আবার দেখব বলে।
সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকলে কী বলতেন কে জানে!

No comments

Powered by Blogger.