তেল মারতে ভারত গিয়েছিলেন খালেদা জিয়াঃ প্রধানমন্ত্রী by মিলন রহমান

ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে অন্ধ হয়ে খালেদা জিয়া ভারতে ‘তেল মারতে’ গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে তিনি সেখানে টিপাই মুখ বাঁধ ও সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবি করতেই ভুলে গেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর ঈদগাহ ময়দানে বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থাকলে ভারত প্রীতি বাড়ে, আর বিরোধী দলে গেলে ভারত বিরোধিতার নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে অন্ধ হয়ে এবার তিনি আগেভাগেই ‘তেল মারতে’ ভারতে গিয়েছিলেন।”

‘বিরোধী দলীয় নেত্রী ক্ষমতায় গেলে দেশের চেহারা পাল্টে দেবেন’ এ উদ্ধৃতি করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি প্রশ্ন করতে চাই, তারা কিভাবে দেশকে পাল্টাবেন? আওয়ামী লীগ যে দশ ভাগ দরিদ্র কমিয়েছে, তাদেরকে আবার দরিদ্র বানিয়ে দেবেন? ৫ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ মধ্যবিত্ত হয়েছে, তাদেরকে আবার নিম্নবিত্তে পরিণত করবেন?”

তিনি আরও বলেন, “৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে বাড়িয়ে বর্তমান সরকার ৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আপনারা কি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেশকে অন্ধকার করে পাল্টে দেবেন? নাকি বিনামূল্যের বই দেওয়া বন্ধ করে দেশের লাখ লাখ ছেলে মেয়েদের অশিক্ষিত করে রাখবেন?”

তিনি যশোরকে ডিজিটাল জেলা ঘোষণা করে বলেন, “এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে আওয়ামী লীগ সরকার গোটা দেশকেই ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করবে। মোবাইল ফোনের মত হাতে হাতে কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়া হবে।

সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া হবে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা। ঘরে বসেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, সচিবালয় থেকে জেলা প্রশাসনের সব অফিসের সব সেবা মানুষ গ্রহণ করতে পারবেন।”

প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সব সময়ই আন্তরিক। এ অঞ্চলের অন্যতম সঙ্কট- ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করা হচ্ছে। কপোতাক্ষ খননে আড়াইশ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যশোরে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। বেনাপোল স্থল বন্দরের উন্নয়ন করে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, পরবর্তী মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে যশোরকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি-বেসরকারি খাতে ৮০ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে।

এরমধ্যে ৪ লাখ বেকারকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। যুব ও যুব মহিলারা যাতে চাকরির পেছনে না ছোটে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে সে জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঋণও দেওয়া হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, “বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক ও নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছিলেন। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ করছে।

এ বছর পহেলা জানুয়ারি ২৭ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আর কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে আওয়ামী লীগ স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বস্তরের মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া একদিকে জামায়াত শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হরতাল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করছেন। তার ওই মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা শোভা পায় না।

বিএনপির লুটপাট ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া সরকারি কোষাগার থেকে দুই ছেলের লেখাপড়ার জন্য টাকা নিয়ে তাদেরকে দুর্নীতির ডিগ্রি দিয়েছেন। হাওয়া ভবন খুলে মানি লন্ডারিং, টাকা পাচার, লুটপাট আর কমিশন বাণিজ্য করেছেন।

তার এক ছেলের পাচার করা টাকা সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, আমেরিকায় তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে ৬ বছর জেল ও ৩৬ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। আর তিনি নিজেই এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন। আবার তিনিই বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সবাই চোর। একেই বলে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০১-এ আওয়ামী লীগ ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে ক্ষমতা থেকে গিয়েছিল। আর বিএনপি যখন ক্ষমতা ছেড়েছে তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ না দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে মানুষকে খাম্বা দিয়েছে আর লুটপাট করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। এ কারণে হলমার্ক, ডেসটিনির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ বিশ্বব্যাংক দিতে পারেনি। তারা বলেছে, দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। আর টাকা বন্ধ হয়েছে, তার (খালেদা জিয়া) সময়ের দুর্নীতির কারণে।”

২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে বলেন, “বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে যশোরসহ এ অঞ্চলে সংখ্যালঘু নির্যাতন ছাড়াও যে সন্ত্রাস ও অত্যাচারের রাজত্ব কায়েম করেছিল মানুষ তা ভুলে যায়নি।”

প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার দেওয়ার আহ্বান জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি আলী রেজা রাজুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, জাতীয় সংসদের হুইপ শেখ আব্দুল ওহাব, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক হারুন অর রশিদ, সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো, খান টিপু সুলতান ও রণজিৎ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার প্রমুখ।

জনসভার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ই সার্ভিসের উদ্বোধন এবং শহরের বকুলতলায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সর্ববৃহৎ ম্যুরাল উদ্বোধন করেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে যশোর বিমানবাহিনীর মতিউর রহমান ঘাঁটিতে ২৩তম শীতকালীন গ্রাজুয়েশন প্যারেড পরিদর্শন ও নবীন ক্যাডেটদের কুচকাওয়াজ এবং সালাম গ্রহণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.