স্বাধীন গণমাধ্যম-দায়িত্বশীল হতে হবে অন্যদেরও

বাংলাদেশ টেলিভিশনের চার যুগ পূর্তির অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ বা সম্প্রচারের ক্ষেত্রে এই দায়িত্বশীলতার কথা স্মরণ রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এ কথা মানতে হবে, দেশের গণমাধ্যমের চেহারা বদলে গেছে। গণমাধ্যম আগের চেয়ে আধুনিক হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে গণমাধ্যমে। পৃথিবী এখন একটি বড় গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে, তার খবর মুহূর্তেই চলে আসছে গণমাধ্যমে। গণমাধ্যম এখন পাঠক-দর্শকদের আস্থা অর্জন করেছে। সে ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের একটি দায়িত্ব আছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সংবাদপত্র ও রেডিও-টেলিভিশনের পাঠক ও দর্শকসংখ্যা বেড়েছে। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। গণমাধ্যম এখন তার প্রধান একটি লক্ষ্য অর্জন তথা জনমত সংগঠনের অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অবশ্যই গঠনমূলক হতে হবে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম, বিশেষ করে সংবাদপত্র আজ একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের একটি সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কিছুটা হলেও সেই সামাজিক দায়িত্ব সন্তোষজনকভাবে পালন করছে। তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আগের দিনের মতো এখন বাল্যবিয়ে হয় না, এটা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অন্যতম সাফল্য। দেশের গণমাধ্যম বাল্যবিয়ের মতো একটি ব্যাধি অনেকটা দূর করতে পেরেছে। একইভাবে সামাজিক কুসংস্কার দূর করতেও দেশের গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে পাঠক ও দর্শক রুচি তৈরিতে গণমাধ্যম একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের দর্শক ও পাঠক রুচিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাতে গণমাধ্যমের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মানুষের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক সামাজিক দায়িত্ব বাংলাদেশের গণমাধ্যম সাফল্যের সঙ্গেই পালন করছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে সংবাদ পরিবেশন ও ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি নিজস্ব রীতিও মেনে চলে। এর পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও গণমাধ্যম পালন করে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। স্বাভাবিকভাবেই হাতে গোনা একটি বা দুটি গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকাকে বড় করে দেখার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো নেতিবাচক ভূমিকার জন্য পুরো গণমাধ্যমকে দায়ী করা যুক্তিসংগত নয়। কোনো কোনো গণমাধ্যমের ভূমিকা বিতর্কিত হলে তার দায় পুরো গণমাধ্যমের ওপর বর্তায় না।
সব সরকারের আমলেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে নানা কথা হয়েছে। সব সরকারই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার কথা বলেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ করে, কিন্তু সেই স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়েছে, এভাবে একটি সরল সমীকরণ ও ঢালাও সিদ্ধান্ত টানা যাবে না।
সমাজের প্রতি যেমন গণমাধ্যমের দায়িত্ব আছে, তেমনি সমাজ যাদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেই শ্রেণীরও গণমাধ্যমের প্রতি দায়িত্ব আছে। গণমাধ্যম যেমন সমাজ পরিবর্তনে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, তেমনি সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল অংশটিকেও গণমাধ্যমের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। গণমাধ্যম যেন কারো রোষানলে না পড়ে, কারো দ্বারা শৃঙ্খলিত না হয়, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল অংশটিকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.