হলিউড ২০১২- সুপার হিরোদের জয়জয়কার

আমাদের সবার মনে একটা কিশোর বাস করে, যে কিশোরের বয়স আসলে আমরা বাড়তে দিই না। আপনি ত্রিশের তারুণ্যে থাকুন, চল্লিশের চালশেতে কিংবা পা দিয়ে ফেলুন ষাটের ঘরে; আপনার মনে একটা কিশোর থাকবেই।
সেই কিশোর আপনাকে কখনো প্রলুব্ধ করবে বৃষ্টিতে ভিজতে, উৎসাহ জোগাবে চক্ষুলজ্জার ভয় ডিঙিয়ে দুষ্টুমি করে ফেলতে। আমাদের সবার মনের মধ্যে একটা কিশোর বাস করে বলেই আমরা সব সময়ই সুপার হিরোদের পুজো করি। সেটা আবার প্রমাণ করে দিল হলিউডের ২০১২।
এ বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবিগুলোয় রয়েছে সুপার হিরোদের জয়জয়কার।
আয়রনম্যান, ক্যাপটেন আমেরিকা, হাল্ক ও থরদের নিয়ে বানানো অ্যাভেঞ্জার্স ২০১২ সালের সবচেয়ে আয় করা ছবি। পরেই আছেন আরেক সুপার হিরো ব্যাটম্যান। সেরাদের দলে আছেন স্পাইডারম্যানও। আয়রনম্যান, ব্যাটম্যান কিংবা স্পাইডারম্যানদের মতো কমিক সুপার হিরো নন; তার পরও ‘জেমস বন্ড’কে তো স্রেফ ‘হিরো’ বলার জো নেই। তাতে ‘জিরো জিরো সেভেন’-এর অপমান হয়। তিনিও সুপার হিরো বৈকি। বছরের সেরা ছবির তালিকায় আছে জেমস বন্ডও। সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় স্কাইফল তিনে। তবে ‘জেমস বন্ড’-এর ২৩তম ছবিটি এখনো সগৌরবে চলছে। চলবে আগামী বছরের শুরুতেও।
আমাদের কিশোর মনের আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যাবে এ বছরের সেরা ১০ ছবিগুলোর দিকে তাকালে। তাতে জায়গা পেয়েছে দুটো অ্যানিমেটেড ছবি। ‘আইস এজ’ সিরিজের কন্ডিনেন্টাল ড্রিফট এবং ‘মাদাগাসকার’ সিরিজের ইউরোপ’স মোস্ট ওয়ানডেট।
এ বছর বিলিয়নিয়ার ছবি হয়েছে দুটো। মানে দুটো ছবি শতকোটি ডলারের বেশি আয় করেছে। শীর্ষে অ্যাভেঞ্জার্স। আয় করেছে ১৫১ কোটি ডলার। দুইয়ে থাকা ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান’ সিরিজের ডার্ক নাইট রাইজেস আয় করেছে ১০৮ কোটি ডলার। বিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে আছে স্কাইফলও। ৯৫৫ কোটি ডলার আয় করা ছবিটি বন্ড সিরিজের ইতিহাসে প্রথম ছবি হিসেবে ১০০ কোটির মাইলফলক ছোঁবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কন্ডিনেন্টাল ড্রিফট আয় করেছে ৮৭৫ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবির তালিকার পাঁচে আছে ‘টোয়ালাইট’ সিরিজের শেষ ছবি ব্রেকিং ডন পার্ট টু। আয় করেছে ৭৮০ কোটি ডলার।
২০১২ সালটি ছিল বিশেষ বর্ষপূর্তির বছরও। এ বছরই শতবর্ষ পূর্ণ করেছে প্যারামাউন্ড পিকচার্স এবং ইউনিভার্সাল পিকচার্স। ‘জেমস বন্ড’ সিরিজ এ বছর পূর্ণ করেছে পথচলার ৫০ বছরও। স্কাইফল-এর সাফল্য দিয়েই সেই মাইলফলক স্মরণীয় করে রাখল ‘জেমস বন্ড’। এ বছর আগে মুক্তি পেয়েছে বক্স অফিস কাঁপানো এমন ছয়টি ছবি আবারও থ্রিডিতে নতুন করে মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের প্রথম ছবি। আছে টাইটানিকও। অ্যানিমেটেড ছবির মধ্যে থ্রিডিতে আবার মুক্তি পেয়েছে ফাইন্ডিং নেমো ও মনস্টার ইঙ্ক।
টাইটানিক আবারও লুফে নিয়েছে দর্শক। এই ছবির পুনর্মুক্তি পরিচালক জেমস ক্যামেরনকে অমরত্ব এনে দিয়েছে। টাইটানিক-এর মোট আয় দুই বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরিয়ে গেছে। ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি আয় করা দুটো ছবিই এখন ক্যামেরনের। অন্যটি অ্যাভাটার। ইতিহাসে ২০০ কোটি আয় করা দুটো ছবির পরিচালকই ক্যামেরন।
সবচেয়ে বেশি আয় করার তালিকায় আটে থাকলেও অস্কার মাতিয়ে দিতে পারে দ্য হাঙ্গার গেমস। অস্কার অবশ্য ঘোষিত হয় পরের বছরের শুরুর দিকে। এ বছর কানের সেরা ছবি হয়েছে আমর। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সোনার ভালুক জিতেছে সিজার মাস্ট ডাই। বছরের সেরা তিন উৎসবের অন্যটি, ভেনিসে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়ান পরিচালক কিম কি-দুকের পিয়েতা।
 রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.