পবিত্র কোরআনের আলো-ফিরআউন সময় থাকতে সত্যকে স্বীকার করে নিতে পারেনি

৮৮. ওয়াক্বা-লা মূছা- রাব্বানা- ইন্নাকা আ-তাইতা ফিরআ'ওনা ওয়া মালাআহূ যীনাতাওঁ ওয়া আম্ওয়া-লান ফিল হাইয়া-তিদ্ দুনইয়া-; রাব্বানা-লিইউদ্বিল্লু আ'ন ছাবীলিক্; রাব্বানাত্মিছ্ আ'লা-আমওয়া-লিহিম ওয়াশ্দুদ্ আ'লা-ক্বুলূবিহিম ফালা-ইউ'মিনূ হাত্তা-ইয়ারাউল আ'যা-বাল আলীম।


৮৯. ক্বা-লা ক্বাদ উজীবাদ্ দা'ওয়া-তুকুমা-ফাছ্তাক্বীমা-ওয়ালা তাত্তাবিআ'-নি্ন ছাবীলা ল্লাযীনা লা-ইয়া'লামূন।
৯০. ওয়াজা-ওয়ায্না-বিবানী ইছ্রা-ঈলাল বাহ্রা ফাআত্বাআ'হুম ফিরআ'উনু ওয়া জুনূদুহূ বাগ্ইয়াওঁ ওয়া আ'দ্ওয়া-; হাত্ত-ইযা- আদ্রাকাহুল গারক্বু; ক্বা-লা আ-মানতু আন্নাহূ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাযী আ-মানাত্ বিহী বানূ ইছ্রা-ঈলা ওয়া আনা- মিনাল মুছ্লিমীন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৮৮-৯০]

অনুবাদ : ৮৮. মুসা বললেন, হে প্রভু, তুমি ফিরআউন ও তার রাজন্যবর্গকে পার্থিব জীবনে বিপুল জৌলুশ ও ধন-সম্পদ দান করেছ। হে প্রভু, এর ফল হচ্ছে এই, তারা তোমার পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করছে। হে প্রভু, এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং (যেহেতু তাদের অন্তঃকরণ কলুষিত তাই) তাদের অন্তর শক্ত করে দাও, যাতে বিশ্বাস স্থাপন করার আগেই তারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
৮৯. আল্লাহ বললেন, তোমাদের দোয়া কবুল করা হলো। সুতরাং তোমরা আত্মবিশ্বাসী থাক এবং যারা সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের অনুসরণ করো না।
৯০. আমি বনি ইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম। তখন ফিরআউন ও তার বাহিনী চরম জুলুম-নির্যাতনের উদ্দেশ্যে তাদের পেছনে দাওয়া করছিল। পরিণামে সে যখন ডুবে মরার দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছল তখন বলতে লাগল, আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম সেই মাবুদের প্রতি, যার ওপর বনি ইসরাইলরা বিশ্বাস স্থাপন করে। তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং আমিও মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।

ব্যাখ্যা : ৮৮ নং আয়াতে ফিরআউনের উদ্দেশে নবী মুসা ও হারুন (আ.) আল্লাহর কাছে যে বদদোয়া করেছিলেন এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে বদদোয়া আল্লাহর পছন্দ নয়, কিন্তু কখনো কখনো বদদোয়াও প্রণিধানযোগ্য। ফিরআউন পথভ্রষ্টতা ও জুলুম-অত্যাচারে এতটাই সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল যে তার জন্য শাস্তি অবধারিত হয়ে উঠেছিল। সব কিছু মাফ করে দেওয়া ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত ব্যবস্থা নয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ফিরআউনের শাস্তি প্রাপ্য হয়েছিল। আল্লাহ বদদোয়া কবুল করে নিয়ে ন্যায় ও শান্তির পক্ষে সাড়া দিয়েছিলেন_এটাই এ আয়াতের মূল তাৎপর্য। বনি ইসরাইলের ওপর ফিরআউনের অত্যাচার-নিপীড়নের কাহিনী ছিল মর্মন্তুদ। আর এসব কারণেই ইমানের ভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছিল। তার নিজের কৃতকর্মের কারণে এ নিয়তি তার নির্ধারিত হয়েছিল। নবী মুসা ও হারুনের পক্ষ থেকে তার জন্য বদদোয়া এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তা কবুল করে নেওয়া এর যৌক্তিক পরিণতি মাত্র।
৯০ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইলদের মিসর ত্যাগ, আল্লাহর কুদরতে সাগর পার হয়ে আসা এবং ফিরআউন ও তার বাহিনীর ডুবে মরার ঘটনার সংক্ষিপ্ত উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতের মূল তাৎপর্য হলো ফিরআউন আল্লাহর রোষানলে পড়ে মৃত্যুবরণ করার সময় ঠিকই সত্যকে স্বীকার করেছিল এবং সে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেছিল। কিন্তু তখন আর কোনো স্বীকারোক্তি বা দাবি আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। এ আয়াতে ফিরআউনের মৃত্যুকালীন অবস্থা এবং তার ব্যর্থ স্বীকারোক্তিটি তুলে ধরা হয়েছে। এর জবাবে আল্লাহ কী ফরমান দিয়েছেন তা পরবর্তী আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.