যাঁরা সংসদে আছেন তাঁদের গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে- ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রবিরোধীদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের সে সব খেলোয়াড় সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে যারা জনগণের ভাগ্যে নিয়ে খেলে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায়।
দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়। নির্বাচিত সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এটা ঠিক নয়। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে যাঁরা সংসদে আছেন তাঁদের সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বিভিন্ন টক শো ও গণমাধ্যমে কলাম লিখনের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনাকারীদের এক হাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু ব্যক্তি আছেন যাঁরা নিজেরা দল করতে পারেন না, দল করতে গিয়েও ব্যর্থ হন অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ রয়েছে। তারাই বিভিন্ন টক শোতে গিয়ে টেলিভিশন ফাটিয়ে ফেলেন, আবার কলম দিয়ে কিছু সংবাদপত্রে যা খুশি লিখে যাচ্ছেন। এদের জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার বা পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা নেই বলেই গণতন্ত্রকে ভয় পায়। সে জন্যই গণতান্ত্রিক সরকারকে কীভাবে ছোট করা যায় সেই চেষ্টাই করে। কারণ দেশে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। কিন্তু আমরা সংবিধান সংশোধন করে জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করেছি। আর কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৫ হাজার ২৯২টি নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচনেও কোন অনিয়ম বা লোকক্ষয় হয়নি। আর তাই কোন নির্বাচিত সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না যাঁরা বলেন তাঁরা ঠিক বলেন না। কারণ আওয়ামী লীগ কোন সামরিক শাসনের গর্ভে বা কোন জেনারেলের পকেট থেকে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগের জন্ম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, দেশের মাটি ও মানুষের জন্ম থেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অধ্যাপক ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও নগর আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। সভা পরিচালনা করেন নূহ-উল-আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিল। আলোচনাসভার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচটি বছর জোট সরকার যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে, তা একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আমরা চাই না দেশ ও জনগণের ভাগ্যে আবারও সেই দুর্দিন ও অমানিষার অন্ধকার ফিরে আসুক। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ওই পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে সব দিক থেকে দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছে। দেশের মানুষের জীবনের কোন মূল্যে ছিল না। হত্যা-খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও বাংলা ভাই সৃষ্টি, প্রতিদিন বোমা ও গ্রেনেডের আওয়াজ শুনতে হয়েছে দেশের মানুষকে।
দেশ ও জনগণের স্বার্থে যে কোন ত্যাগ স্বীকারের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার ক্ষমতায় আসার পর শুনলাম দেশ নাকি গ্যাসের ওপর ভাসছে। গ্যাস বিক্রির জন্য আমাদের ওপর চাপ দেয়া হলো। আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি এটাই ছিল আমার অপরাধ। গ্যাস বিক্রিতে রাজি হলেন বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমার বাবা-মা, ভাইসহ সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। আমারও জীবন যায় যাক, তবুও বাংলাদেশের জনগণের এতটুকু ক্ষতি আমি হতে দেব না। মৃত্যু বা জীবনের ভয় আমি করি না। দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা করার সাহস আমার আগেও ছিল এখনও আছে।
’৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের পরিবর্তে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করার জন্য জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী বানিয়ে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেছিলেন। জেনারেল এরশাদও বঙ্গবন্ধুর খুনীকে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী করেছিলেন। মানিক মিয়ার এক ছেলেও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দিয়ে রাজনৈতিক দল ‘প্রগশ’ বানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জেনারেল জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে আত্মস্বীকৃত খুনী রশিদ-হুদাকে এমপি বানিয়ে বিরোধী দলের নেতা পর্যন্ত বানিয়েছিলেন। খুনীরা দম্ভভরে বলত আমাদের বিচার কে করবে? কিন্তু দেশের জনগণের আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস ছিল বলেই আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছি, ইনশাল্লাহ এ বিচারের কাজও আমরা শেষ করব।
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল জিয়ার আমলে প্রায় ১৮/১৯টি ক্যু হয়েছে। কোনটারই সঠিক বিচার হয়নি। বিচারের নামে প্রহসন করে অসংখ্য সামরিক অফিসার ও সৈনিককে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে বিডিআরের ঘটনায় সত্যিকারের বিচার হচ্ছে। কিন্তু কারা সব সময় খুনীদের রক্ষা করে, বাঁচাতে চায়Ñ এ বিচারের ক্ষেত্রেও দেশবাসী একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবে।
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র তিন বছরেই আমরা বিদ্যুত উৎপাদন দ্বিগুণের মতো বাড়িয়েছি। স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি, খাদ্যেও স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের পরিচিত ছিল সন্ত্রাসী, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদের দেশ হিসেবে। আমরা সেই দুর্নাম ঘুচিয়েছি, বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে একটি সম্ভাবনাময় দেশ এবং উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচিত।

No comments

Powered by Blogger.