খোকন জামিন পেয়েছেন, রিজভী কারাগারে

গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন আগাম জামিন পেয়েছেন। দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


গতকালও সুপ্রিম কোর্টের ফটকগুলোতে বাড়তি পুলিশি প্রহরা ছিল। আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মিছিল ও সমাবেশ করেন। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে দাবি করে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বিচারপ্রার্থীদের আদালতে আসার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
গত ২৯ এপ্রিল হরতাল চলাকালে বিকেলে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আসামি করা হয়। তাঁদের আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণে গত বুধবার হাইকোর্টে একটি দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি বিব্রত বোধ করেন। অপর একটি বেঞ্চ জামিন আবেদন দেখার ‘এখতিয়ার নেই’ বলে ফিরিয়ে দেন। পরে শুধু মাহাবুবউদ্দিন খোকনের জামিনের আবেদন করা হলে আরেকটি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জামিনের পক্ষে এবং কনিষ্ঠ বিচারপতি বিপক্ষে আদেশ দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। দুপুরে তিনি মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের একক বেঞ্চে পাঠান। এই বেঞ্চ এর আগে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির দেওয়া আদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করে আদেশ দেন।
বিকেল সাড়ে তিনটায় এই বেঞ্চে শুনানিকালে মাহবুবউদ্দিন খোকন আদালতে হাজির ছিলেন। তাঁর পক্ষে শুনানি করেন মওদুদ আহমদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও এম বদরুদ্দোজা বাদল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
শুনানিতে মওদুদ আহমদ বলেন, মামলার এফআইআরএ ঘটনার সময় রাত নয়টা পাঁচ মিনিট বলা হয়েছে। কিন্তু হরতাল শেষ হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। বলা হয়েছে আসামিরা ছয়-সাতটি মাইক্রোবাস করে আসেন। কিন্তু একটিরও নম্বর লেখা নেই। যে বাসটি পোড়ানো হয়েছে, সেই বাসের স্টাফকে আসামি করা হয়েছে। অথচ তারা সাক্ষী হওয়ার কথা। খোকন একজন পরিচিত আইনজীবী ও সাংসদ। এসব দিক বিবেচনা করে আদালত তাঁকে জামিন দিতে পারেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। যদি আবেদনকারীকে জামিন দেওয়া হয় তাহলে অন্যরা এই সুযোগ নেবে। তিনি বলেন, সাত কার্য দিবসের মধ্যে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের কথা। ইতিমধ্যে চার দিন পার হয়ে গেছে। পরে আদালত আদেশ দেন।
আদেশের পর মওদুদ আহমদ সাংবাকিদের বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সঙ্গে বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ একমত পোষণ করেছেন। ফলে তিনি (মাহাবুব) জামিন পেলেন। ৯ মে পর্যন্ত আগাম জামিনে থাকবেন তিনি। মওদুদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এখন অবরুদ্ধ। মাহবুবউদ্দিন আইনজীবী হওয়ায় বিভিন্ন কৌশলে আদালতে আসতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে সুপ্রিম কোর্টকে পাহারা দিচ্ছে তা সুপ্রিম কোর্ট, আইনজীবী, আমাদের সবার জন্য অবমাননাকর।’ তিনি সুপ্রিম কোর্টকে পুলিশ বেষ্টনী থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।
আইনজীবীদের মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ: বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে দুপুর সোয়া একটায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে মিছিল করে বিএনপির সমর্থক আইনজীবীরা। পরে সমিতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করে ক্ষান্ত হয়নি, গণতন্ত্রকে গুম করতে চায়।
সমিতির সভাপতির ব্রিফিং: বিএনপিপন্থী শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর দুপুর দুইটায় নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরার কারণে বিএনপি নেতারা সুপ্রিম কোর্টে জামিনের জন্য আসতে পারেননি। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
৭ মে বিক্ষোভ: বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আগামী ৭ মে দেশের সব বারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ফোরামের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক রাগীব রউফ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রিজভীর রিমান্ড-জামিন নাকচ: রুহুল কবির রিজভীকে দুটি মামলায় ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তা নাকচ করে দেন। একই সঙ্গে জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গত সোমবার হরতাল শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ফেরার পথে কাকরাইল মোড় থেকে গ্রেপ্তার হন রুহুল কবির রিজভী। পরদিন মঙ্গলবার শাহবাগ ও তেজগাঁও থানার পৃথক দুটি মামলায় রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তবে ওই দিন শুনানির সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (সিডি) উপস্থাপন করতে না পারায় আদালত গতকাল শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।
গতকাল বিকেল পৌনে তিনটার দিকে রিজভীকে আদালতে আনা হয়। শাহবাগ থানার মামলায় মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে হাজির করা হয় তাঁকে। পুলিশ পরিদর্শক বিপ্লব কুমার শীল ১০ দিনের রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে রিজভীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে রিজভীকে তেজগাঁও থানার গাড়ি পোড়ানোর মামলায় মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহর আদালতে হাজির করা হয়। এই মামলায় তেজগাঁও থানা পুলিশ পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। এ মামলায়ও আদালত রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে রিজভীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.