গ্রামে এনামুলের বিলাসী ভবন by সাইফুল হক মোল্লা ও সুমন মোল্লা

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এগোলেই বড়চর গ্রাম। গ্রামে ঢোকামাত্র দূর থেকে চোখে পড়বে আধুনিক নকশায় সমৃদ্ধ দ্বিতল, সুরম্য একটি বাড়ি। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিলাসী ভবনের মালিক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগের কমান্ড্যান্ট এনামুল হক।


গত সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের ফটকে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুকের যে গাড়িতে বিপুল অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়, তাতে এনামুলও ছিলেন। ওই ঘটনার পর তাঁকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বড়চর ও উপজেলা সদরে নানা আলোচনা হচ্ছে।
শনিবার বড়চর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রামে দ্বিতল ও বিলাসী ভবন বলতে একটি, সেটি এনামুলের। প্রায় ৫০ শতক জমির ওপর বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর। বাড়ির পুরো আঙিনা, সীমানাপ্রাচীরসহ অন্যান্য জায়গা টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত।
বাড়িটি দেখভাল করছেন এনামুলের ভাতিজা কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল প্রায় তিন বছর আগে। ছয় মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়।’ বাড়ির নির্মাণ খরচ কত জানতে চাইলে কামরুল দাবি করেন, ‘৭০-৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’
তবে গ্রামের কয়েকজনের জানামতে, বাড়িটি নির্মাণে খরচ হয়েছে অন্তত দুই কোটি টাকা।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনামুল স্থানীয়ভাবে রেনু মিয়া নামে পরিচিত। তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা ছিল না। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রেলওয়ের নিরাপত্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তখন থেকে রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন। কাউকে চাকরি দিয়েছেন, কাউকে দিতে পারেননি।
এনামুলের সাত ভাইবোনের মধ্যে পাঁচজন জীবিত। এর মধ্যে ছোট ভাই মোজাম্মেল হক রেলওয়ে হাসপাতালের গবেষণাগার সহকারী।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, এনামুল আওয়ামী লীগের কর্মী। কোনো পদে না থাকলেও ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণে বেশ প্রভাব রাখেন।
গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদোন্নতি পেয়ে বড় কর্মকর্তা হওয়ার পর এনামুল এলাকায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ জমি কেনেন। কিশোরগঞ্জের অনেককে রেলওয়ের জায়গা ইজারা পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার গুলশানে গড়ে তোলেন বড় একটি প্লাস্টিকের কারখানা। এ ছাড়া ঢাকায় এনামুলের একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন।
পাশের গোবরিয়া-আবদুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিয়া (৭০) বলেন, ‘রেনু (এনামুল) ভালা পথে নাই, বুঝতে পারতাম। কিন্তু মুখ খুইলা কইতে পারতাম না। এহন উচা বাড়িডার দিকে চাইলেই বুঝা যায় আমরার রেনু কোন পথে আছে।’
এনামুলের চাচাতো ভাই এমাদ মিয়া (৭০) দাবি করেন, ‘রেনু জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার। তিনি মানুষের ভালো ছাড়া মন্দ করেন না। তাঁর কল্যাণে গ্রামের অনেকের চাকরি হয়েছে। কুলিয়ারচরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অর্থের জোগান দেন।’
গ্রামে বিলাসী বাড়ি নির্মাণ করলেও বছরে এক থেকে দুবারের বেশি আসেন না এনামুল। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে এসেছিলেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.