‘স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নন বলেই উনি বিদেশীদের ডেকে আনতে চান’- খালেদার বিষয়ে সংসদে হাসিনা

 প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদার লেখা নিবন্ধের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না বলেই অন্য দেশকে ডেকে এনে বাংলাদেশকে শায়েস্তা করতে চান! একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েও কিভাবে তিনি দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে লিখতে পারেন? এই বিচারের ভার আমি বাংলাদেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়াশিংটন টাইমসে প্রবন্ধ লিখে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বন্ধ করতে বলেছেন, দেশের ব্যবসাবাণিজ্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্য দেশের কাছে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই নিবন্ধ লিখেছেন।
নিবন্ধটি লেখার পর তা খালেদা জিয়া পড়ে দেখেছেন কি না এই সন্দেহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধে তিনি (খালেদা জিয়া) একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে সাহায্য করেছেন, সেভাবে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন! কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনভাবেই বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পর্যন্ত পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই খালেদা জিয়ার নিবন্ধটি পড়ে দেশের জনগণ বুঝতে পারবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাকি বিপক্ষের।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হঠাৎ করেই তিনি এমন নিবন্ধ লিখলেন কেন? আমার তো মনে হয় তিনি (খালেদা জিয়া) নিবন্ধটি লেখার পর নিজে পড়ে দেখেছেন কি না। তিনি দু’বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এখন বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি কিভাবে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এমন নিবন্ধ লিখতে পারেন। তাঁর লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে আসলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসই করেন না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব তাঁর পছন্দ নয়। এজন্যই তিনি অন্য দেশকে ডেকে এনে বাংলাদেশকে শায়েস্তা করতে চান। দেশের জনগণই একদিন এর বিচার করবে।
ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নিবন্ধ প্রকাশের পর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করলেন। রাশিয়ার সঙ্গে সমরাস্ত্র চুক্তির কারণেই বিরোধী দলীয় নেতা নিবন্ধ লিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করলেন কি না, মুজিবুল হক চুন্নুর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের বিপদের বন্ধু। মহান মুুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া আমাদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানসহ তাদের দোসরদের জাতিসংঘে আনা প্রতিটি প্রস্তাবে রাশিয়া ভেটো দিয়েছে। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশে যখন গণহত্যা চলছিল, লাখ লাখ মানুষকে হত্যা, মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়া ও নির্বিচারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ চলছিল তখনও বাংলাদেশের জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তিনি বলেন, শুধু রাশিয়া কেন, আমরা চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ থেকে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণে সমরাস্ত্র কিনেছি। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর। এজন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করতে অস্ত্র কেনা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। তাই সামরিক বাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী করতেই হবে। আর আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে কারও সঙ্গে বৈরতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব।
মাহফুজা বেগম বেবী মওদুদের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াত জোটের নীতিই হচ্ছে ক্ষমতায় থাকতে দেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে বিদেশ থেকে ভিক্ষা এনে দেশকে পরনির্ভরশীল করে রাখা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নীতিই হচ্ছে কারও কাছে হাত না পেতে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। তিনি বলেন, এবারও প্রায় ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাত্র চার বছরেই আমরা ৩ কোটি ৪০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা দেশপ্রেম নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি বলেই দেশের ১৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে বলেই ঘাটতি মোকাবেলা করে দেশকে আমরা আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারী দলের এ্যাডভোকেট রহমত আলীর মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ১০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে তিনটি হচ্ছে চুক্তি এবং সাতটি সমঝোতা স্মারক। সমঝোতা স্মারকের মধ্যে সন্ত্রাস দমন এবং আইন ও বিচার ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে। তাছাড়া রাশিয়া সফর বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। রাশিয়ায় সফলকালে উভয় দেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের চার বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ১৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বর্তমান সরকারের একই সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ হচ্ছে ৪৮ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ক্রমেই সাফল্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ ক্রমেই বেগবান হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.