লাঙ্গলবন্দের মহাঅষ্টমী স্নান

ঢাকা থেকে প্রায় ২০ কি.মি. পূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোলঘেঁষে ব্রহ্মপুত্রের পারে এক শ্যামল জনপদের নাম লাঙ্গলবন্দ। প্রতিবছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হাজার হাজার ধর্মাবলম্বী ভক্তপ্রাণের আগমন ঘটে এই স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদে পুণ্য স্নানার্থে।
ভক্তগণের বিশ্বাস, এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পুণ্যের। এ স্নানে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপ মোচন হয়। এ বিশ্বাস নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে এই স্থানে অংশ নেয়ার জন্য এই উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন এই লাঙ্গলবন্দে। নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দের জনপদ হয়ে ওঠে এক মহামিলন কেন্দ্র। পাপ স্খলনের এই উৎসবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে সমবেত হয়।
স্নান সম্পন্ন করা যাতে সবার জন্য সহজ হয় তার জন্যে বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি যুগে যুগে বেশ কয়েকটি ঘাট নির্মাণ করেন। এখন এমন ১৩টি ঘাট বাঁধানো আছে। এ ঘাট দিয়ে লোকজন নদীতে নেমে স্নান করেন। ১৩টি ঘাট হলো প্রেমতলা ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, বরদেশূরী ঘাট, গান্ধীঘাট, জয়কালী ঘাট, পাঠানকালী ঘাট, শ্রীরামপুর ঘাট, কালীবাড়ী ঘাট, কালীদাহ ঘাট, শংকর ঘাট, শ্যাকলী ঘাট ও রৰাকালী ঘাট। এই ঘাটগুলোর পাশাপাশি সেখানে রয়েছে ১০টি মন্দির, কয়েকটি আশ্রম। স্নানের সময় ছাড়াও এখানে অসংখ্য মানুষ আসেন বিভিন্ন সময়ে। পবিত্র ঘাটের পদতল বিধৌত করে যেমন নদী বয়ে চলে তেমনি অবিরাম অবিশ্রানত্ম ধারায় পবিত্র স্থানে সমবেত হতে থাকে পুণ্যাথর্ীদের দল।
স্নান উপলৰে লাঙ্গলবন্দের ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই তীর্থস্থানটি বিভিন্ন বয়সের ধর্মপ্রাণ ও পুণ্যাথর্ী মানুষের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে। দীর্ঘ এলাকাজুড়ে এক বিরাট আয়োজনের মেলা বসে। মেলা চলে প্রায় ৩/৪ দিন। এ মেলায় লোক ও কারম্নশিল্প থেকে শুরম্ন করে সব রকম জিনিস পাওয়া যায়। মেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক ভিড় করেন। আশপাশের অঞ্চল থেকে মানুষ আসেন সওদা করতে। লাঙ্গলবন্দের জনপদ হয়ে ওঠে সকল সম্প্রদায়ের এক মহামিলন কেন্দ্র।
- মোফাজ্জল হোসেন

No comments

Powered by Blogger.