অঞ্জন'স কথা

১৯৯৪-৯৫ সালের কথা তখন আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ১ম বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোন কাজ হাতে নেই। কিন্তু বার বারই চিনত্মা হতো পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করা যায় কি-না।
মালিবাগের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে আমাদের একটি দোকান ছিল। ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে দোকানে ডেকোরেশনের কাজ চলছিল। আমি মাঝেমধ্যে গিয়ে দোকানের কাজ দেখাশোনা করতাম। রোজার ঈদ হতে মাত্র দু'মাস বাকি ছিল। তাই কাজে তাড়াহুড়া চলছিল। এ সময় চিন্তা করলাম দোকানটি ভাড়া না দিয়ে যদি নিজেই চালাতে পারি তাহলে কেমন হয়। চিন্তানুযায়ী কথাটা বাবাকে বলতে বাবা বেশ রাশভারি হয়ে জবাব দিলেন, দোকান চালানো বেশ কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেৰ ব্যাপার। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে। চিন্তা করে দেখ যদি মনে কর পারবে তাহলে চালাও। আমিও বললাম, রোজার মাসটা দেখি। এরপর না হয় ভাড়া দিয়ে দেব। সে মোতাবেক দোকানের ডেকোরেশনের কাজ শেষ করে কিছু কিছু প্রোডাক্ট উঠাতে লাগলাম এবং সেই থেকে শুরম্ন। কথাগুলো বলছিলাম দেশখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার এবং ফ্যাশন হাউস অঞ্জন'স-এর কর্ণধার শাহীন আহমেদ। বলেছেন তার এ জগতে উঠে আসার নেপথ্য ঘটনাবলী। তিনি জানান, রোজার মাসে ব্যবসা শুরম্ন করার কারণে কাস্টমার পেতাম ভালই। আমাকে সাহায্য করার জন্য ভার্সিটির কিছু ফ্রেন্ড সময় দিত আমার সঙ্গে। আমরা কাস্টমারদের সঙ্গে খুব ফ্রেন্ডলি বিহেভ করতাম যা কাস্টমারদের পছন্দ হতো। দেখা গেছে তারাও পরবর্তীতে অনেক বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসত প্রোডাক্ট কিনতে। আমরাও ভাল প্রোডাক্ট দিয়ে সাহায্য করতাম। সে কারণে কাস্টমাররা ঘুরে ফিরে আসত। রোজার মাসে ভাল একটা রেসপন্স পাওয়ার পর চিনত্মা করলাম আরেক মাস দেখি। দেখলাম মাস শেষে যে সেল তাতে লাভ-লস সমান হতো। সে কারণে চিনত্মা করলাম রাখা যায় দোকানটা। আর ড্রেস তৈরির কাপড়ের সন্ধানের জন্য আমাকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। কারণ আমাদের কাপড়ের মিল রয়েছে নরসিংদীতে। সে কারণে অনেক কাপড় ব্যবসায়ীকে আমি চিনতাম। এভাবে ঘুরে ঘুরে কাপড় সংগ্রহ করে ডিজাইন করে করে ড্রেসে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতাম। দেখলাম, কাস্টমাররা ভাল রেসপন্স করছে এবং তারাও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করত। '৯৬-৯৭ সালে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করি। মেলায় প্রচুর সাড়া পাই। দেখা গেল মাসের খরচ উঠে কিছু প্রফিটও যোগ হতে লাগল। '৯৭ সালে ভোরের কাগজে অঞ্জন'স নিয়ে একটি ফিচার বের হয়। এরপর অনন্যা, সাপ্তাহিক ২০০০, বিচিত্রায় ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। তখন অনুভব করলাম আরেকটা শো-রম্নম নেয়া যায়। কথানুযায়ী '৯৮ সালে সোবহানবাগে অঞ্জন'স-এর আরেকটি শাখা চালু করি। আমাদের প্রোডাক্ট কোয়ালিটির গুণে সেখানেও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সৰম হই। এরপর ২০০০ সালে অন্যদিন ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। তখন মনে সাহস সঞ্চার হলো যে, এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া যায়। এর বছর তিনেক পর বনানী এবং রাইফেল স্কয়ারে আরও দুটি শোরম্নম নিলাম। বুঝতে পারলাম বিজনেস রানিং। বর্তমানে অঞ্জন'স-এর ১২টি শাখা। ফ্যাশন ডিজাইনিং কি পেশা হিসেবে নেয়া যায় এর জবাবে শাহীন আহমেদ জানান এখন তো অনেকেই আসছে এ পেশায় এবং ভালও করছে। এছাড়া নতুন প্রজন্ম এ দিকে ঝুঁকছে, এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত ডিজাইনারদের, তাহলো তাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। তাদের মেন্টালিটিকে সব সময় আপ গ্রেড রাখতে হবে। চলমান বিশ্বের সব ধরনের খবর মাথায় রাখতে হবে। দেশ-জাতির পরিবর্তনের দিকগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে দেশীয় পণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে অনত্মত দেশের অর্থনীতি সচল থাকবে। অঞ্জন'স বরাবরই চেষ্টা করে দেশীয় ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

তৌফিক অপু
ছবি: আরিফ আহমেদ

No comments

Powered by Blogger.