টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি- রেজা ফারম্নক

প্র্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশনের রূপেও যেন সম্প্রতি একটা পরিবর্তন লৰণীয়ভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে পোশাকের মধ্য দিয়ে ফ্যাশনের ছন্দটা, ফ্যাশনের সুরটা ক্রমশ সততই বেজে উঠতে শুরু করেছে প্রাকৃতিক নিয়মে।
বসন্তের মখমলি লাল কৃষ্ণচূড়াজ্বলা, নরম দুপুর, ফাগুনের মিহি বাতাসের মোহনীয় আমেজ কেটে গিয়ে খুব দ্রুতই গরম তথা চৈত্র আর বৈশাখের ঝা-ঝা রোদ্দুরে ঘামে ভিজে ওঠা শরীরটাকে একটু আরামপ্রদ আবহের ঘেরাটোপে ঢেকে দিতে চলছে প্রবল প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক, তেমনি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলোরও। যেহেতু ফ্যাশন হাউসগুলো ঋতুভিত্তিক পোশাকের প্রতি বরাবরের মতো মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে, এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে ফ্যাশনেবল নারী-পুরম্নষ, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরাও নিচ্ছে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রস্তুতি। গরমের যে প্রস্তুতিপর্ব চোখে পড়ছে তার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো শাড়ি। বিশেষ করে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের সুতি শাড়ি। রঙবেরঙের বিভিন্ন দামের নতুন ডিজাইন আর আধুনিক মোটিফের টাঙ্গাইল শাড়ির খোঁজে ইতোমধ্যে ঢাকাসহ জেলা, শহর, এমনকি মফস্বলের ফ্যাশন সচেতন বিভিন্ন বয়সের নারীরা বিভিন্ন শপিংমল, শাড়ি বিপণিতে ঢুঁ মারছে। বাঙালী নারীর এই গরমে প্রথম পছন্দ হলো টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। ঈদ, পুজো, ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন উৎসবে টাঙ্গাইলের শাড়িই হলো রমণীদের ফেবারিট শাড়ি। হোক সে শাড়ি সুতি, সিল্ক, মার্সলাইস বা ভিন্ন আঙ্গিকের। তাছাড়া টাঙ্গাইল শাড়ির সহনীয় দামের কারণে যেমন মহিলারা টাঙ্গাইল শাড়িকে পছন্দের শীর্ষে রাখে, তেমনি গত দুই দশককাল ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জমিনে গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ নানা কারম্নকার্যম-িত আধুনিক ডিজাইন উৎকীর্ণ হওয়াও এর প্রধান আকর্ষণের পাশাপাশি টাঙ্গাইল শাড়ি বুননের ৰেত্রটি অত্যনত্ম প্রাকৃতিক। ফলে এ শাড়ি পরতেও বেশ ভাল লাগে। এর আরামদায়ক ফেবারের কারণে। মাত্র চার শ' টাকা থেকে শুরম্ন করে পাঁচ হাজার টাকা দামের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। তাছাড়া টাঙ্গাইল শাড়ি যেমন রাফ ইউজ করা যায়, তেমনি বিভিন্ন পার্টিতে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার ৰেত্রেও টাঙ্গাইলের গর্জিয়াস কারম্নকাজের শাড়ি বেশ মানিয়ে যায়।
এছাড়া বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির রয়েছে আদি আর অকৃত্রিম অনত্মরঙ্গ। টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্যময় অতীত বাংলার প্রখ্যাত মসলিন আর জামদানির সঙ্গেই অনেকটা তুলনীয়। টাঙ্গাইল শাড়ি সহজলভ্য হওয়ার প্রেৰিতে যে কোন ঋতুময় উৎসবেই তরম্নণী, যুবতী বয়সী নারীর কাছে টাঙ্গাইল শাড়ি পেয়েছে একটা আলাদা কদর এবং ভিন্ন মর্যাদা আর টাঙ্গাইল শাড়ির এ অর্জনের পেছনে রয়েছে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত কিছু ফ্যাশন হাউস ও এর কর্ণধারদের অপরিসীম পৃষ্ঠপোষকতা। আর রয়েছে টাঙ্গাইল শাড়ি বুননের বংশপরম্পরায় গৌরবময় তাঁত শিল্পীরা। আটপৌরে গ্রামীণ নারী থেকে শুরম্ন করে কর্মজীবী নারী এবং বিভিন্ন মাধ্যমের সেলিব্রেটিদের কাছে টাঙ্গাইল শাড়ি আজ সমান মর্যাদা লাভে সৰম হয়েছে। বসনত্মের ঝিরিঝিরি বাতাসের বিদায় মুহূর্তে চৈত্রের শুরম্নতে প্রকৃতিতে লেগেছে গরমের উত্তাপ আর এই উত্তাপ হাওয়া হল্কা শরীরে ছড়িয়ে দেবে অসহিষ্ণু অনুভূতি আর এই অসহনীয় গরম আবহাওয়ায় যে কারও জন্য আরামদায়ক সুতির পোশাক পরাটা হলো বিশেষ প্রয়োজন। পোশাকটি অবশ্যই হতে হবে নান্দনিক ডিজাইনের ।
যখন প্রচ- গরমে মানুষ হাঁপিয়ে উঠবে, তখন যদি প্রশানত্মিময় বৃষ্টি নামে প্রকৃতির মতো মানুষের শরীর ও মন জুড়িয়ে যাবে নিমিষে। আর সুন্দর এমন এক পরিবেশে গৃহিণী কর্মজীবী থেকে শুরম্ন করে সব বয়সী নারীর কাছেই টাঙ্গাইলের তাঁতের সুতি শাড়ি অন্যরকম এক আবেদন নিয়ে উপস্থিত হবে।

শাড়ি : মনে মন্টু
ডিজাইন: মনে মন্টু বসাক

No comments

Powered by Blogger.