সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একুশে অনুষ্ঠানমালা শুরু কাল

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে একুশের অনুষ্ঠানমালা। জাতির সম্মিলিত শক্তির আধার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল ৪টায় দুই সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন ভাষাসংগ্রামী আলোকচিত্রী আমানুল হক।
একুশে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানে এবারের অনুষ্ঠানের সেøাগান ‘একুশ আছে জয়োদ্ধত, একুশ বাঁচে অবিরত’।
যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানে এবারের অনুষ্ঠানমালায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, সংস্কৃতি কর্মী ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। অনুষ্ঠানমালার বিস্তারিত কর্মসূচী তুলে ধরেন একুশে উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগামীকাল থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি এবং ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্তমঞ্চে ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় থাকবে গান, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ২২ সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়াও থাকবে ৬টি সেমিনার। এগুলোর শিরোনাম হলো একুশের চেতনা ও আমাদের নাটক, একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের আবৃত্তি, একুশের চেতনা ও আমাদের গণসঙ্গীত, একুশের চেতনা ও নারী অধিকার, একুশের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং ভাষা আন্দোলন ও সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচার। এর মধ্যে ৪টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং বাকি দুটি অনুষ্ঠিত হবে রবীন্দ্র সরোবরে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার পথনাট্যোৎসব ॥ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত পথনাট্যোৎসবের বুধবার ছিল ষষ্ঠ দিন। এদিন সন্ধ্যায় ৭টি দল নাটক মঞ্চায়ন করে। প্রতিটি দলের পরিবেশিত নাটকের প্রেক্ষাপট ছিল মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক। এদিন বিকেল থেকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, দিতে হবে, রাজাকারের ফাঁসি চাই’ সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে শহীদ মিনার চত্বর। নাট্যানুষ্ঠান শুরুর পূর্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এক প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়।
জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝুনা চৌধুরী, জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. কামরুল হাসান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সহসভাপতি ড. মোহাম্মদ সামাদ, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বোগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক চক্র নানাভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিকভাবে নানা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করবার লক্ষ্যে এই অপশক্তি আজ জঙ্গীবাদে রূপ নিয়েছে। কয়েকদিন আগে যে অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়, সেই একই অপরাধে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা চাই সরকারপক্ষ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত এই অপরাধীদের শাস্তির বিধান করুক। আমরা এই রায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা ॥ বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ১৪১৫, ১৬ ও ১৭ বাংলা সালের ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার’প্রাপ্ত সাহিত্যিকদের নাম ঘোষণা করেছে। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন যথাক্রমে শাহ্জাহান কিবরিয়া, শাহরিয়ার কবির ও আলী ইমাম। শিশুসাহিত্যে সামগ্রিক অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর একজন সাহিত্যিককে এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে। এ পুরস্কারের আর্থিক মূল্যমান পঞ্চাশ হাজার টাকা। একাডেমীর পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, পুরস্কারপ্রাপ্তদের আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.