অভিমত তাদের লক্ষ্য কেন শিক্ষাঙ্গন ॥ by ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু

১০ জানুয়ারি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর একদল বহিরাগত হামলা চালায়।
এ সময় মাইকের ব্যাটারির এ্যাসিড ছিটকে আন্দোলনরত দুই শিক্ষকের চোখে পড়লে তাঁদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শিক্ষকদের ওপর হামলার পর শিক্ষকরা অভিযোগ ওঠা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে। একই দিনে ঢাকায় এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব বেসরকারী মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ওপর তরল কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ হামলা চালায়। এসব ঘটনার মাত্র একদিন পরই ১২ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে ফিল্মী-স্টাইলে শিক্ষক লাউঞ্জে ঢুকে ইটপাটকেল ছুড়ে ২০ শিক্ষককে আহত করা হয়। অন্যান্য দেশে যেখানে শিক্ষকদেরকে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি অনেক সম্মানের চোখে দেখা হয়, সেখানে বাংলাদেশে শিক্ষকদের ওপর তরল কাঁদানে গ্যাস ও পানি নিক্ষেপ করাসহ তাঁদের ওপর চালানো হয় সন্ত্রাসী হামলা। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে লজ্জাজনক, দুঃখজনক ও বিস্ময়কর ঘটনা আর কি হতে পারে? এসব ঘটনা নিঃসন্দেহে অমানবিক, বর্বর এবং অন্যায়ও। একটি সভ্য দেশে শিক্ষকদের ওপর এ রূপ অন্যায় ও বর্বর হামলা কি কখনও কল্পনা করা যায়? শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদ- এবং শিক্ষকদেরকে বলা হয় জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদ- এবং শিক্ষকরা যদি জাতির কারিগর হয়ে থাকেন, তাহলে এ ধরনের হামলাকে নিশ্চয় জাতির মেরুদ- এবং জাতির কারিগরের ওপর হামলা বলতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির মেরুদ- এবং জাতি গঠনের কারিগরদের ওপর হামলা চালিয়ে সত্যিকার অর্থে কি কোন জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব? সেই জাতি কি কখনও মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারে? আর এসব ঘটনা দেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্ববাসীর কাছেই বা কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে?
এ কথা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসীরা অব্যাহতভাবে শুরু করে সন্ত্রাস, হত্যা, হামলা, ভাংচুর, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-। এখন শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানোর বিষয়টি অপকর্মের তালিকায় আরও একটি নতুন বিষয় হিসেবে যোগ হলো। একটি ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী ছাত্রের হতাহতের ঘটনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা অঙ্কের টাকার সম্পদ বিনষ্ট করার খবরসমূহ আজ আর কারও অজানা নয়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী কর্মকা- করেও এসব সন্ত্রাসী বারবার রেহাই পেয়ে যাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে পুনরায় লিপ্ত হয়ে পড়ছে। আর এসব ঘটনার ফলে একদিকে যেমন দেশ-জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তেমনি অপরদিকে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে বারবার মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে লেখাপড়ার সুষ্ঠু-স্বাভাবিক পরিবেশ। সৃষ্টি হচ্ছে সেশনজট, শিক্ষার্থীদের পেছনে তাঁদের অভিভাবকদেরকে ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বহিরাগতরা কি অপ্রতিরোধ্য? এদের কি সামলানো সম্ভব নয়? অথচ এরা সরকারী ছাত্র সংগঠনের নাম ব্যবহার করছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বলেছিলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির নামে গু-ামি বন্ধ করতে হবে। এসব বন্ধ না করলে তিনি যে-ই হোন না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিন্তু এর ফল যে শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে বা কি হচ্ছে? দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকা- রোধে অবিলম্বে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সরকারের অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদালয়গুলোর বিদ্যা দ্রুত ‘লয়’ (ধ্বংস) হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আর যদি তা হয়, তবে তা হবে দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতির একটি বিষয়Ñযা কখনও কারও কাম্য নয়।
শবশনধনঁ@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Powered by Blogger.