সমরাস্ত্র ক্রয়- শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় অস্ত্র ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের প্রতিরক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্রবাহিনী থাকা যেমন প্রয়োজন, সেই সঙ্গে সেসব বাহিনীকে যুগোপযোগী ও সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন আধুনিক উন্নত সমরাস্ত্র।
সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী অপরাধ ও যুদ্ধঝুঁকির পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি তার ধরন এবং কৌশলও বদল হচ্ছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাই প্রতিটি দেশই তার সমরভা-ারে সাধ্যানুযায়ী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে চলেছে। আর শুধু দেশের প্রতিরক্ষার জন্যই নয়, বিদেশে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সংশ্লিষ্ট দেশের সৈন্যদের যুগোপযোগী করার জন্য বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র ক্রয়ের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশও তেমনটি করে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে। তবে এই অস্ত্র ক্রয় সব সময় যথাযথ প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী এবং পরিপূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছে কিনা তা অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক রাশিয়া সফরকালে আট হাজার কোটি টাকার সমরাস্ত্র ক্রয়ের একটি ঋণচুক্তি হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে। সোমবার ঢাকায় সশস্ত্র বাহিনীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, শতকরা বার্ষিক সাড়ে ৪ শতাংশ সুদের এই ঋণ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ব্যবহার করে রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয় করা হবে; আর ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে দশ বছর মেয়াদে মোট কুড়ি কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা হবে সশস্ত্র বাহিনীর নিজস্ব তহবিল ও জাতিসংঘ থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনগুলোয় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয় অস্ত্র ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে। দেশের প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং এই সমরাস্ত্রের বড় অংশ জাতিসংঘ মিশনে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে।
সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে সমরাস্ত্র ক্রয়ের যে যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। বিশেষ করে, জাতিসংঘ শান্তি মিশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশী সেনারা বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় অত্যন্ত প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন; সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিলে আধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয়ের বর্তমান উদ্যোগটি খুবই সময়োপযোগী ও বাস্তবানুগ। এর ফলে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশী সেনাদের সক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি এই খাতে তাদের নিয়োগের পরিসরও অনেক বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সেনাসদস্যদের আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করা একান্ত জরুরী। আর যে অস্ত্র যে দেশ থেকে ক্রয় লাভজনক, সরকার সে অস্ত্র সে দেশ থেকেই ক্রয় করবেÑ এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। সবচেয়ে বড় কথা হলোÑক্রয়কৃত অস্ত্র প্রয়োজনমাফিক, যুগোপযোগী, কার্যকর এবং তার ক্রয়পদ্ধতি স্বচ্ছ কিনা। সেই সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বলা যায়, বর্তমান সরকার রাশিয়ার সঙ্গে সমরাস্ত্র সম্ভার ক্রয়ের যে ঋণচুক্তি করেছে তা খুবই বাস্তবানুগ। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.