ছাত্রলীগে শিবির দুধকলা দিয়ে ॥ কালসাপ পোষা by মুহম্মদ শফিকুর রহমান

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি কথা বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল ঝড় তুলে দেন যে, ছাত্রলীগে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন রগকাটা শিবির ঢুকে পড়েছে।
ভয়ঙ্কর অনুপ্রবেশকারী এ রগকাটারাই ছাত্রলীগের কিছু কর্মীকে পথভ্রষ্ট করে অপকর্মগুলো করে যাচ্ছে আর দোষ চাপছে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকারের ওপর। তিনি এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ঘরে চোর ঢুকেছে, গেরস্থরা সাবধান_ বিষয়টা এমন নয়! হাসি পায় দুঃখও লাগে_ একদিন এই ছাত্রলীগ করেছি। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবগাথা রচনাকারী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও খড়কুটো ধরে বাঁচতে হবে। শিবিরের মতো একটি গণধিক্কৃত বর্বর রগকাটা ছাত্রচক্রকে ধারণ করতে হবে_ ভাবতেও গা ঘির ঘিন করে।
ছাত্রলীগের জন্মই হয়েছিল লড়াইয়ের মঞ্চ থেকে। ছিল একটা ভিশন, একটা টার্গেট_ স্বাধিকার ও স্বাধীনতা, সামনে বঙ্গবন্ধু, ভয় কি মরণে, আমরা এগিয়ে গেছি। আমাদের বুকে ছিল অর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলমুক্তির স্বপ্ন, ছিল ত্যাগের অবিনাশী চেতনা। সেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। ৬৩ বছর। সেই থেকে ছাত্রলীগ ঝড়ের মধ্যে থেকে লড়াই করে বড় হয়েছে, বিজয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিকশিত হয়েছে। ছাত্রলীগ তার ত্যাগ, আদর্শ, লড়াই আর ভিশন দিয়ে নবাগতদের আকৃষ্ট করেছে। সংগঠনের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে। বিঝাড়া কোন মাল কোলে নিয়ে ছাত্রলীগ বড় হয়নি। আজও খড়কুটো ধরে নয়, বিঝাড়া মাল নয়, নীতি-আদর্শ-লড়াই দিয়েই নবাগতদের আকৃষ্ট করতে হবে। সে সঙ্গে থাকতে হবে নেতৃত্বের সততা, নিষ্ঠা, কর্মস্পৃহা ও ত্যাগের মানসিকতা। নইলে একে বিলোপ করে দেয়াই উচিত হবে। সরকারকে তো অনত্মত অপবাদের বোঝা বইতে হবে না।
আমি ছাত্র রাজনীতির পরে মানুষ। বলা যায় বাঙালী জাতির গৌরবগাথা রচনায় ষাট প্রজন্মের একজন। শিা আন্দোলন থেকে ৬ দফা, ১১ দফা, অসহযোগ, মুক্তিযুদ্ধ_ এ সময়টায় ক্যাম্পাসে রাজপথে ছিলাম, মিছিল-মিটিং লড়াই_ গর্বে বুক ফুলে ওঠে। আমার মনেই আজ প্রশ্ন, ছাত্র রাজনীতি যদি নীতি-আদর্শ পায়ে দলে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-দখলবাজিতে নেমে পড়ে তার তো দরকার আছে বলে মনে করি না। ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে তারম্নণ্য, লেখাপড়ার সাথে সাথে সমাজ রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠার সুযোগ এনে দেয়। ভিসি বোশ প্রফেসর মতিন চৌধুরী স্যার না-কি বলেছিলেন, ছাগলও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর দিয়ে হাঁটলে মানুষ হয়ে যায়। তাহলে কি স্যারের কথা মিথ্যে হয়ে গেল?
এখন ফেব্রম্নয়ারি মাস। বলা যায় এটি ছাত্রদের মাস। রফিক-শফিক-জব্বার-সালাম-বরকতরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যার পথ ধরে এক রক্তগঙ্গা পেরিয়ে বাঙালী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নিজস্ব স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিল। '৫২ থেকে '৭১_ এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় শিবিরের জন্মদাতা মওদুদী-গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ মুসলিম লীগসহ অন্যান্য দণিপন্থী দলের ভূমিকা ছিল ঘৃণিত-ধিক্কৃত। তারা বাঙালীর নিজস্ব জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের বিরোধিতা করেছিল। একাত্তরে তো রীতিমতো পাকিদের সাথে হাত মিলিয়ে অস্ত্র হাতে গণহত্যায় শামিল হয়েছিল। তখন ছাত্রশিবিরের নাম ছিল ছাত্র সংঘ। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রানত্মে তখন ঐ নিজামী-মুজাহিদ-কামরম্নজ্জামানের নেতৃত্বে ছাত্রসংঘ হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর আদলে আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গড়ে তোলে এবং আমাদের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের ঘর থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার, মিরপুর প্রভৃতি স্থানে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় নোংরা পয়ঃনিষ্কাশন নালার মধ্যে। পিলখানায়ও দেখলাম সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে লাশ ফেলা হলো পয়ঃনিষ্কাশন নালার মধ্যে। একই চিত্র দেখলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকমর্ী ফারম্নকের লাশ ম্যানহোলে ফেলে দিতে। এর আগেও দেখেছি এই জামায়াত-শিবিরের সৃষ্ট বাংলা ভাই মানুষ মেরে, পা-উপরে টানিয়ে রাখতে। দেখেছি জজ সাহেব, উকিল সাহেবদের হত্যা করতে। এ তো হলো জামায়াত আর ছাত্রশিবির। চরিত্রগতভাবে এদের ধারণ করতে পারে কেবল ছাত্রদল। ছাত্রলীগ পারে নয়। কারণ প্রশ্নটি ঐতিহাসিক এবং নীতি-আদর্শের। ছাত্রলীগ তাদের সাথে সামাজিক সম্পর্কও রাখতে পারে না।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলেরও মুখপাত্র। তিনি যা বলেন, জেনে-শুনে বুঝে-সুঝেই বলেন। আলামতও আমরা দেখলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যা থেকে শুরম্ন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের ক্যান্টনমেন্ট থানার নেতা এবিএম ফারম্নক হোসেন ব্রাশফায়ারে খুন হয়েছেন। দৈনিক জনকণ্ঠ লিখেছে, ছাত্রশিবিরের ব্রাশফায়ারে ফারম্নকের মৃতু্য হয়েছে। রাজশাহীতে তারা তাদের নৃশংসতাও দেখিয়েছে। অনত্মত ৪ ছাত্রলীগকমর্ীর হাত-পায়ের রগ কেটেছে। কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রামে আট ছাত্রলীগ নেতাকমর্ীকে এমনিভাবে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছিল এই রগকাটা শিবিরচক্র, যা নিয়ে তখনকার সংবাদপত্রে অনেক লেখা হয়েছিল। পরিণতি কি হয়েছে খুব কম মানুষই জানেন।
আরও অনেকের মতো আমি নিজেও মনে করি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্নর দিনটি যত দ্রম্নত এগিয়ে আসছে, শিবির তত বেশি হিংস্র হয়ে উঠছে। ওদের টার্গেট বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রসত্ম করা। এ বিচার হবে নুরেমবার্গ ট্রায়ালের চেয়েও ভয়ঙ্কর এবং দুনিয়া কাঁপানো। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব ব্যাপার জাতির সামনে চলে আসবে তা আজকের প্রজন্মের জন্য হবে চাঞ্চল্যকর এবং অবাক করার মতো। কারণ তারা তো একাত্তর দেখেনি। দেখেনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও পৌনে তিন লাখ মা-বোনের সভ্রমহানি ও আত্মত্যাগ। শিবিরকমর্ীদেরও অনেকে জানে না তাদের নেতা গোলাম আযমের ভূমিকা কি ছিল, তারা জানে না তাদের নেতা নিজামী-মুজাহিদ-কামরম্নজ্জামান-সাঈদীরা কতটা হিংস্র ছিল। কিভাবে আল-বদর, আল-শামস বনে বাহিনী বানিয়ে বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। চোখ উপড়ে কলজে ছিঁড়ে কি নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ পয়ঃনালায় ফেলে রেখেছিল।
এক আল-বদরের কাহিনী বলছি। অনেকবার মিডিয়ায় এসেছে। নাম তার চৌধুরী মইনুদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে থাকত। পাশাপাশি ক। রম্নমে এলে তো দেখা হতোই, প্রায়ই মসজিদে ক্যান্টিনে দেখা হতো এবং খুবই আনত্মরিকতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করত। সে ছিল প্রিলিমিনারির আর আমি অনার্স কোর্সের। কাসের দিক থেকেও মিল ছিল না, তবু একই হল একই ইয়ারের ছাত্র হিসেবে আমিও একেবারে অবজ্ঞা করতাম না। আমি ছাত্রলীগ, সে ছাত্রসংঘ। এক কাপ চা আনলেও অর্ধেক অফার করত। মাঝে মাঝে তার আদিখ্যেতা ভাল লাগত না। তবু মুখে কিছু বলতাম না। শুরম্ন হলো ঊনসত্তরের ৬+১১ দফা ছাত্র গণঅভু্যত্থান। তখন তাকে হলে ক্যাম্পাসে বড় একটা দেখা যেত না। আমরা আয়ুব-ইয়াহিয়া তাড়ানোর লড়াই করছি। সে তখন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও রিপোর্টারের কাজ করত। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলীয় মানুষের দুঃখভরা রিপোর্টও করেছে সে। তারপর এলো একাত্তরের মার্চ মাস, আমরা চলে গেলাম মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধশেষে জানতে পারলাম এই চৌধুরী মঈনুদ্দিনই ছিল ঢাকা সিটি আল-বদরের প্রধান। (তার ওপর নিজামী-মুজাহিদরা) এবং এই মঈনুদ্দিনই আমাদেরই ডিপার্টমেন্টের স্যার মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশাসহ মুহসীন হলের সিনিয়র হাউস টিউটর গিয়াসউদ্দিন স্যারসহ তিন শতাধিক শিক-সাংবাদিক, ডাক্তার, লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে পয়ঃচ্যানেলে ফেলে দিয়েছিল। সেই ছাত্রসংঘই আজকের ছাত্রশিবির। একটা মানুষ ওপরে কি ভদ্র, অথচ ভেতরে কি নৃশংস কি বর্বর কি আদিম! একদিকে হলমেট হওয়ায় আমার সাথে কি ভাল ব্যবহার, আরেকদিকে বুদ্ধিজীবী হত্যা, এমনকি তার সরাসরি শিকদের তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা_ এর নামই বুঝি ধর্মান্ধতা! কোন ধার্মিক মানুষ এমন নৃশংস কাজ করতে পারে না, পারে ধর্মান্ধরাই। ওরা রগ কাটে দুটো ল্য নিয়ে_ হয় রক্ত ঝরে ঝরে নিঃশেষ হয়ে যাবে, বেঁচে গেলেও পঙ্গু জীবন কাটাতে হবে। এ নৃশংসতার নামই জামায়াত, এরই নাম রগকাটা শিবির!
এ জামায়াত-শিবির কিভাবে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে করে একদিন দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধের প েকোন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে। অঢেল এদের অর্থ-অস্ত্র, হয় অর্থ নিয়ে দলে ভিড়ো, নয়ত জীবন দাও। দুর্ভাগ্যজনক হলো, আওয়ামী লীগের দুর্বলচিত্তের নেতারা অর্থের বিনিময়ে বা অন্য কোন সুবিধা পেয়ে তাদের দলে নিচ্ছে। আমার এলাকায় একটা শিা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এক আল-বদর। মুক্তিযুদ্ধ শেষে লন্ডন পালিয়ে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে চৌধুরী মঈনদ্দিনের মতোই। আশি দশকের প্রথম দিকে গ্রামে এসে বেশকিছু জমি কিনে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। স্কুলের চারদিকে ১০ ফুট উঁচু দেয়াল। উদ্দেশ্য বদ না হলে একটা শিা প্রতিষ্ঠানের দেয়াল এত উঁচু হবে কেন? গেটও লোহার। সারাণ দারোয়ান। প্রথম দিকে কিন্ডারগার্টেন হলেও এখন আর এগোচ্ছে না। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ওপরের কাসে পরীাও দিতে পারবে না। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকে পটিয়ে সাথে নিয়েছে, ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানও দিয়েছে। এখন এটি রেজিস্টার্ড বা এমপিওভুক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগাররাই দৌড়াচ্ছে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক দীর্ঘ ৪ বছর থেকে এক স্কুলে আছেন, থাকতেই পারেন। কিন্তু ভদ্রলোক কাস বাদ দিয়ে জামায়াতী রাজনীতি করে বেড়ান বলে এলাকাবাসী এক জোট হয়ে তার বিরম্নদ্ধে উর্ধতন কতর্ৃপরে কাছে অভিযোগ করলে তাকে পাশেই আরেকটি স্কুলে বদলি করা হয়। সবাইকে অবাক করে এক আওয়ামী লীগ নেতা তার বদলি ঠেকানোর জন্যে তদ্বিরে নেমে পড়েছেন। এখানে কোন্ আদর্শ কাজ করছে? অর্থ না কি আত্মীয়তা? মানুষ আজকাল খুবই অল্প দামে বিক্রি হয়। আর এর জন্যই দলকে মূল্য দিতে হয়, তারচেয়েও বেশি মূল্য দিতে হয় জাতিকে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে এসব খবর আছে বলেই তিনি প্রকাশ্যে কথাটা বলতে পেরেছেন। আমি তো মনে করি কেবল ছাত্রলীগে নয়, আওয়ামী লীগেও যে নেই তা কি নিশ্চিত বলা যাবে? কেউ এদের নিচ্ছেন টাকার জন্যে, কেউ নিচ্ছেন দলের মধ্যে নিজের পেশীশক্তি বৃদ্ধির ল্যে। অর্থাৎ দল বা সহযোগী সংগঠনে যেসব দুর্বলতা রয়েছে সেগুলোকে ওরা কাজে লাগিয়ে ঢুকে পড়ে। ঠিক সময়ে কাউন্সিল না করা, একই নেতার সবকিছু আয়ত্তে রাখার প্রবণতা, চাঁদাবাজি; সর্বোপরি গণবিচ্ছিন্নতা, পেশীশক্তিকে মোকাবেলার জন্য গণপ্রতিরোধ রচনার পরিবর্তে পেশীশক্তি ভাড়া করা ইত্যাদি দুর্বলতাই ওরা কাজে লাগায়। মুক্তিযুদ্ধে ওরা পরাজিত হয়েছে_ নিঃশেষ হয়নি। গা ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ জাসদে ঢুকে অসত্মিত্ব রা করেছে। জিয়ার সময় প্রকাশ্য রাজনীতিতে এসেছে সেই পুরনো রগকাটা ধারা নিয়েই। আজও তা অব্যাহত আছে।
ওরা এখন মরিয়া। একে তো বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন হলে ওদের বড় বড় নেতা জড়িয়ে পড়বেন। নেতারা জড়ালে কমর্ীরাও জড়াবে। দূরে সরে থেকেও বাঁচতে পারবে না। ঘৃণা জনরোষ তো আছেই, কোথাও দাঁড়াবারও জায়গা থাকবে না। তার ওপর আরেক বিপদ, ৫ম সংশোধনীও সুপ্রীমকোর্টে বাতিল, তাহলে ধর্মের নাম ব্যবহারকারী রাজনৈতিক দল থাকবে না। অর্থাৎ জামায়াত-শিবিরও থাকবে না। দল না থাকলে ওরা তো নাই হয়ে যাবে। এজন্যই তারা কিছুদিন ধরে বেপরোয়া, বিশেষ করে বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট মতায় আসায় বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে ব্যাপারটি বেশি ভয় পাইয়ে দিয়েছে তাদের, তা হলো সংসদে মহাজোটের আসন সংখ্যা। যে কোন সিদ্ধানত্ম নিতে পারবে। আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যাও এককভাবে দুই-তৃতীয়াংশের অনেক বেশি। সংবিধানের যে কোন পরিবর্তন পরিমার্জন করার জন্য অন্য কারও দ্বারস্থ হতে হবে না, সে ৫ম সংশোধনী বাতিলের প্রশ্নই হোক বা সংবিধানের মৌলনীতি পুনর্স্থাপনই হোক। তাদের মরিয়া হয়ে ওঠার পেছনে আরও কারণ আছে। এখন আর বিএনপির ওপর খুব একটা ভরসা করতে পারছে না। বিএনপিই-বা কেন এ বোঝা বইবে। অতীতেও বিএনপি বাংলা ভাই, শায়খুল হাদিসদের রার জন্য প্রথম দিকে চেষ্টা করেছিল কিন্তু জনরোষ, জাতীয় ও আনত্মর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। শায়খুল-বাংলা ভাইদের ত্যাগ করতে হয়েছে। বিগত নির্বাচনের পর বিএনপি তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় এনে তাদের মতামত নিয়েছে। আমরা টিভি স্ক্রিনে দেখেছি তৃণমূল নেতারা দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিএনপির বিপর্যয়ের জন্যে জামায়াতের সাথে জোট বাঁধাকে দায়ী করেছে। তারা পরিষ্কার বলেছে, রাজাকারদের নিয়ে রাজনীতি করা যায় না। জামায়াতই এখন শিবিরকে দিয়ে তাদের হিংস্র কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছে। কিছুটা সুবিধাও আছে। আজকে যারা শিবির করছে তাদের গায়ে একাত্তরের রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের ছাপ নেই, আছে দুর্গন্ধ, আছে মওদুদী-গোলাম-নিজামী-মুজাহিদদের ভ্রানত্ম আদর্শের কালিমা। তাছাড়া তারা বয়সে তরম্নণ হওয়ায় সাধারণ মানুষও তাদের সহজেই গ্রহণ করে। দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষে।
এ তরম্নণদের মূলত বিভ্রানত্ম করা হয়েছে জিহাদের নামে। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী_ এ মন্ত্র তাদের আকৃষ্ট করেছে বলেই তারা শিবিরের ফাঁদে পা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আবুল বারকাতের গবেষণা অনুযায়ী বছরে ১৫০০ কোটি টাকার মৌলবাদী অর্থনীতির ঘুষ ভা-ার তো রয়েছেই। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরম্ন হবার পর যখন একটার পর একটা বীভৎস ঘটনা বেরিয়ে আসবে, জামায়াত-শিবির মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে যা যা ঘটিয়েছে একে একে বেরিয়ে আসতে শুরম্ন করবে তখন এই তরম্নণরা দেখবে মরলে শহীদ হবার নিশ্চয়তা আর কেউ দিচ্ছে না, বাঁচলেও গাজী (?) হয়ে হয় বাংলা ভাই নয় তো জেলখানায় কাটাতে হবে। তখন তাদের আর করার কিছু থাকবে না। মানুষ যখন, বিশেষ করে কোন তরম্নণ যখন সঠিক পথে (সিরাতুল মুসতাকিম) ধর্মভীরম্ন না হয়ে বিভ্রানত্মির পথ ধরে ধর্মান্ধ হয়ে ওঠে তখন সে তার মানবিক মূল্যবোধ জীবনাচারের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলো খুইয়ে বসে। তার আর ফেরার পথ থাকে না। এরাই সমাজ, মানুষ, জাতিরাষ্ট্রের জন্য বড় বিপদ।
তবে আমি বিশ্বাস করি, জামায়াত-শিবির যতটা না নিজেদের শক্তিশালী হিসেবে জাহির করে, ততটা নয়। তাদের যদি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বর্জন করা যায়, তাদের সাথে কোন আত্মীয়তা নয়, সমাজ নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, এভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া যায়_ তাহলেই তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। রাজপথ তো আছেই। এ রাজপথে থাকবে সবার আগে ছাত্রলীগ। দৈনিক প্রথম আলোর (১৫/০২/১০) প্রধান খবর হলো ছাত্রলীগের ৮২ জেলা কমিটির নেতারা চাকরি ও ব্যবসায় জড়িত। কোন কোন উপজেলায় একযুগেও কাউন্সিল হয়নি। এ বন্ধ্যা থেকে বেরোতে হবে। বন্ধ্যা শরীর থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হয় না।
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.