নিষ্ঠুরতা!- মেয়েটির প্রতি যে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী

এই নির্মমতার যেন শেষ নেই। একের পর এক ঘটে চলেছে। ঘটছে দেশের নানা স্থানে। সম্প্রতি আবার ঘটেছে এমন ঘটনা। যৌতুকের জন্য গৃহবধূ নির্যাতন।
কুমিল্লার মুরাদনগর থানার এক গ্রামে এক নারী যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে এই তথ্য জানা গেছে। মেয়েটির কাছে যৌতুক হিসেবে টাকা দাবি করা হলে প্রথমে কিছু টাকা দেয়া হয়। কিছুদিন পর আবার দাবি করা হয় অর্থ। এমনই অশান্তির পরিবেশে একদিন মেয়েটির গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগানো হয়। দগ্ধ হয়ে মেয়েটির অবস্থা খুবই করুণ। প্রথমে শ্বশুরবাড়িতেই স্থানীয় চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা করা হয় মেয়েটির। পরে মেয়েটির বাবা তাকে নিয়ে এসে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিক্যালে। পরবর্তী পর্যায়ে মেয়েটির পরিবারকে নানাভাবে হুমকিও দেয়া হচ্ছে এবং সেজন্য মেয়েটির পরিবার রয়েছে আতঙ্কে।
ঘটনাটির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী যৌতুকের কারণে মেয়েটির প্রতি যে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। একই সঙ্গে প্রয়োজন মেয়েটির পরিবারের সবার জন্য পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কেউ কোনভাবেই যাতে মেয়েটি বা তার পরিবারকে হুমকি দিতে না পারে তার যথাযথ নিশ্চয়তা সৃষ্টি করাও প্রয়োজন।
যৌতুক দেয়া এবং নেয়া দুটোই অপরাধ। আইন করে যৌতুক দেয়া-নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে এবং সবচেয়ে বড় কথাÑ যৌতুক বহু নারীর জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। যৌতুকের টাকা যোগাড় করা যায় না বলে বহু দরিদ্র পিতা কন্যার বিয়ে দিতে পারেন না। আবার কোন রকমভাবে যোগাড় করে বা পুরোটা যোগাড় করে মেয়ের বিয়ে দেয়া হলেও কয়েকদিন পর বাকি টাকা দাবি করা হয় বা নতুন করে আরও টাকা চাওয়া হয়। এই নিয়ে সংসারে শুরু হয় অশান্তি। তারপর গৃহবধূর ওপর জুলুম। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চলতে থাকে। কোন কোন স্ত্রীকে পরিবার থেকে বের করে দেয়া হয়। কাউকে মেরে ফেলা হয়, কেউ কেউ ক্ষোভে দুঃখে অপমান এবং অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। এমন সব ঘটনা দেশে অনেক দিন ধরে ঘটে চলেছে।
অনেক সময় দেখা গেছে, ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অনেকেই ধরা পড়েছে, কিন্তু তারপরও দেখা গেছে যৌতুক নিয়ে নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। আমাদের সমাজের আরেকটি অভিশপ্ত জিনিস হচ্ছে এ্যাসিড নিক্ষেপ। প্রেম ভালবাসা, বিয়ে, যৌতুক, জমি-জায়গা নিয়ে বিরোধ ইত্যাদি নানা কারণে অনেক সময় এ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে এ্যাসিড সন্ত্রাস কমে, তবে কিছুদিন পর পর দুর্বৃত্তরা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ্যাসিড ছুড়ে মারা এবং যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করার ঘটনা দেশ থেকে সম্পূর্ণ দূর করতে হলে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি শুধু আইন থাকলেই হয় না, আইনের প্রয়োগও জরুরী, তেমনি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং যৌতুকের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারও। এটা যে অপরাধ, এতে যে অন্যের জীবন বিপন্ন হয়, সংসারের সুখ-শান্তি নষ্ট করে, এসব ছাড়াও ব্যাপকভাবে সবার সামনে তুলে ধরা দরকার এই সত্যটি যে, এটি বহু নারীর জীবনে অভিশাপ হয়ে বিরাজ করছে এবং বোঝাতে হবে এটা আইনের দিক থেকে অপরাধ।
আইনের দ্রুত প্রয়োগের ব্যবস্থার পাশাপাশি যৌতুকের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা এবং এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে। সমাজ থেকে এই অভিশাপ দূর করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.