রাবিতে শিবিরের তাণ্ডব পুলিশের ভূমিকায় বিস্মিত উপাচার্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান বলেছেন, গত বছরের ১৩ মার্চ সংঘটিত ছাত্র সংঘর্ষের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রার দায়িত্ব পুলিশের উপর ন্যসত্ম রয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি মহানগর পুলিশ প্রশাসনকে শিবিরের সম্ভাব্য ভয়াবহ হামলার ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছিল এবং সারারাত ধরে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির অনুরোধও জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে কিভাবে ক্যাম্পাসে নৃশংসতা চলতে পারল তা বিস্ময়কর। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে তদনত্ম করবেন এবং এই ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিরূপণ করবেন। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন শৈথিল্য ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্বেচ্ছাপ্রণোদিত শিকবৃন্দ সম্ভব সবকিছুই করেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে উপাচার্য ভবনের লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বিভিন্ন হলের প্রাধ্যগণের উদ্ধৃতি দিয়ে উপাচার্য বলেন, দু'টি হল ব্যতীত অন্য হলে সর্বণিকভাবে কর্তব্যরত পুলিশ শিবিরের হামলার সময় হলে উপস্থিত ছিল না। এ বিষয়টি প্রশাসনকে বিস্মিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরম্নরী সভায় সামগ্রিক ঘটনা তদনত্মে একটি কমিটি গঠন এবং কমিটিকে যথাশীঘ্র সম্ভব রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটি তদনত্মের কাজ শুরম্ন করেছে। তদনত্ম রিপোর্টের প্রেেিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরম্নদ্ধে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধানত্ম মোতাবেক সরকারের কাছে একটি বিচার বিভাগীয় তদনত্ম কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প থেকে মতিহার থানায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইজিপি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে সংশিস্নষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে পুলিশ প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিার সুষ্ঠু ও শানত্মিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার ও সংশিস্নষ্ট সকলের আনত্মরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
উপাচার্য বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যনত্ম স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির মনসত্মাত্তি্বকভাবে কোণঠাসা হয়ে থাকে। এজন্য তারা হিংস্র হয়ে উঠে এবং যেকোন ভাবেই হোক তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করতে চায়। সেজন্য তারা রক্তপাতের পথ বেছে নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এরই অংশ হিসেবে গত ৯ ফেব্রম্নয়ারি গভীর রাতে ছাত্রলীগ কর্মী ও ঘুমনত্ম সাধারণ ছাত্রদের ওপর শিবির পরিকল্পিতভাবে পৈশাচিক আক্রমণ ও নারকীয় হত্যাকা- চালায়। আমরা সরকার ও দেশবাসীর কাছে এই ফ্যাসিস্ট ও বর্বর শক্তিকে আইনী ও সামাজিকভাবে মোকাবেলার জন্য আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এক আবাসিক ছাত্রের ক েউঠাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। হল কর্তৃপ হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোঃ আসাদুজ্জামানকে ১৩১ নম্বর কটি বরাদ্দ দেয়। আসাদুজ্জামান ওই ক েউঠতে গেলে শিবির সমর্থকরা তাকে বাধা দেয় এবং আসাদুজ্জামানকে বেদম প্রহার করে। ২১৮ নম্বর ক েকউসার আলম সরকার তাকে রা করতে গেলে শিবির কর্মীরা তাকেও গুরম্নতর আহত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাৎণিকভাবে ঘটনাস্থলে পেঁৗছে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হলে পুলিশ প্রশাসনকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার অনুরোধ জানানো হয়। প্রশাসনিকভাবেও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। প্রত্যেক হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিকগণ নিজ নিজ হলে অবস্থান নেন। প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রশাসনের গুরম্নত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও বেশ কিছু শিক বিভিন্ন ইউনিটে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি সরেজমিনে তদারক করেন এবং আমাকে অবহিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, প্রক্টরিয়াল বডি ও অন্যান্য সূত্র থেকে ক্যাম্পাসের বাইরের বিভিন্ন স্থান যেমন স্টেশন সংলগ্ন শেখ রাসেল সংসদ, বধ্যভূমি এলাকা, চারম্নকলার কাছাকাছি এলাকা ও কড়ইতলায় সন্দেহজনক লোকজন জড়ো হচ্ছে জেনে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাল দিতে পারে, এই বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সারারাত ধরে সর্বোচ্চ সর্তকাবস্থা বজায় রাখতে এবং ফোর্স বৃদ্ধি করতে বার বার অনুরোধ জানানো হয়। পুলিশের প থেকে অবহিত করা হয় যে, 'সম্ভব সর্বোচ্চসংখ্যক ফোর্স ক্যাম্পাসে নিয়োগ করা হয়েছে। ৯ ফেব্রম্নয়ারি রাতে পুলিশ কমিশনার নিজে ক্যাম্পাস পরির্দশন করেন এবং পরে উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবনের কার্যালয়েও আসেন। সেখানেও তাঁকে রাতে অবিরামভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। রাত ১২টার দিকে আরএমপি কমিশনার ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আমাকে (উপাচার্য) জানান যে, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবেই পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ব্যাপারে দুশ্চিনত্মার কোন কারণ নেই।'
উপাচার্যের ক েপ্রায় সারারাত ধরে উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ অনেক সিনিয়র শিক অবস্থান করেন এবং পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রাখেন। রাত দেড়টার দিকে যখন হামলা শুরম্ন হয় এবং ছাত্রদের আহত হওয়ার সংবাদ আসতে থাকে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারকে আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে এবং এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হলে প্রথম ঘটনার সূত্রপাত হবার সঙ্গে সঙ্গেই স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করা হয়। তাঁর সঙ্গে রাতে বেশ কয়েকবার (রাত ৩টা পর্যনত্ম) যোগাযোগ হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যকে আহত ছাত্রদের জরম্নরীভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করা হয়। তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন। রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি যখন শানত্ম হয়ে আসে, তখন প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র-উপদেষ্টা ও বিভিন্ন সিনিয়র শিক হল পরির্দশনে যান। সেখানে ছাত্ররা কি অবস্থায় আছে তার খোঁজখবর নেন। এসএম হলে গিয়ে তাঁরা ল্য করেন টিভি রম্নম থেকে হলের বাইরে বহুদূর পর্যনত্ম রক্তের দাগ দৃশ্যমান। তাঁদের সন্দেহ হয় যে, শিবির ক্যাডাররা কাউকে হত্যা করে হয়ত হলের বাইরে নিয়ে গেছে। তখন পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়। ঐ সময় আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করে আহত বা নিহত কাউকে পাওয়া যায়নি। সকালে পুলিশ গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মোঃ ফারম্নক হোসেনের লাশ আমীর আলী হলের সামনের সেফ্টিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে। ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, প্রভোস্ট ও ছাত্র-উপদেষ্টাসহ ২৫/৩০ জন শিক রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান এবং আহত ছাত্রদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। নিহত ছাত্রের লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় তার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটে পাঠানো হয়। দুইজন আহত ছাত্রকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি অন্য আহত ছাত্রদেরকে প্রয়োজনবোধে ঢাকায় পাঠানো হবে। ৯ ফেব্রম্নয়ারি সকাল ১০টায় হল প্রাধ্যদের সঙ্গে প্রশাসন জরম্নরীভিত্তিতে সভায় বসে। তাঁদের কাছ থেকে রাতের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
উপাচার্য বলেন, 'আমি এসএম হল ও গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেনের মৃতু্যতে এবং আহত ছাত্রদের জন্য গভীরভাবে শোকাভিভূত। এই মৃতু্য আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আছি বলে নয়, সামগ্রিকভাবেই আমি কোন হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করি না এবং মেনে নিতে পারি না। একজন বাবা বা তার সনত্মানকে সমাজের উঁচুসত্মরের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। সেই সনত্মানের লাশ হয়ে ফিরে যাওয়া কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.