বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড- পুলিশ প্রতিবেদন দ্রুত দাখিলের নির্দেশ

পুরান ঢাকায় গত ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলায় পথচারী বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় দ্রুত পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ মৌখিকভাবে এই আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, ‘ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চাক্ষুষ সাক্ষীও রয়েছে। ইতিমধ্যে দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। এর পরও কেন অভিযোগপত্র দিতে দেরি হচ্ছে? অভিযোগপত্র দাখিলে বিলম্ব হোক, এটা আমরা চাই না।’
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আদালত দ্রুত পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ চলাকালে ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ নিহত হন। এ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে ফৌজদারি কার্যবিধিতে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই ঘটনায় গণমাধ্যমে যাঁদের নাম-ছবি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন ও রুল জারি করেন। ২০ জানুয়ারি আদালত বিশ্বজিতের লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে গত মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপক্ষ প্রতিবেদন দুটি দাখিল করেন। ওই দিন আদালত ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মাকসুদুর রহমান ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক মো. জাহিদুল হককে প্রতিবেদন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গতকাল আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজ ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ডিভিও ফুটেজ দাখিল করতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী গতকাল ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে হাজির হন। শুনানিকালে এটিএন নিউজের ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়। ফুটেজ ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, প্রতিবেদনে বিশ্বজিতের পিঠে, কোমরের ওপর ও পায়ে হালকা জখম দেখা যাচ্ছে। ডান হাতের পাখনার নিচে তিন ইঞ্চি জখম, বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে ছেঁড়া জখম রয়েছে। ভিডিও ফুটেজে অনেক আঘাতের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মূলত একটি জখমের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আদালতের প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল হক বলেন, সুরতহাল করার সময় তিনি ডান হাতের পাখনার নিচে বড় ধরনের জখম দেখেন। ওখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে বিশ্বজিৎ মারা যান। একজন রিকশাচালক বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে নেন। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, কোনো পুলিশ তাঁকে নেয়নি? রিকশাচালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
মাকসুদুর রহমান বলেন, ডান পাখনার নিচে ধমনি (আর্টারি) কেটে যাওয়ার কারণে বিশ্বজিৎ মারা যান।
আদালত বলেন, ‘জরুরি বিভাগে রোগী ফেলে রাখা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রথম দায়িত্ব হলো রোগীর জীবন রক্ষা করা। আমরা (আদালত) যদি আরও কঠোর না হই, তাহলে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা বন্ধ হবে না। এসব ঘটনায় শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট নয়।’
আদালত চিকিৎসকের উদ্দেশে বলেন, ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভিকটিম কখনোই এক জায়গায় স্থির ছিলেন না। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে মাকসুদুর রহমান বলেন, না। যা পেয়েছেন, তা-ই লিখেছেন।
এ পর্যায়ে আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, গোটা জাতি এ বীভৎস ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। সঠিক বিচার হতেই হবে।
আদালত বলেন, একজন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে, এটাই বড় কথা। এখন কোনো আদেশ দেওয়া হলে মামলাটির বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
অমিত তালুকদার বলেন, বিষয়টি মুলতবি রাখা যেতে পারে। পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হলে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
আদালত বিষয়টি দুই মাসের জন্য মুলতবি করে দ্রুত পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। একই সঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদারকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানাতে বলেন।

No comments

Powered by Blogger.