ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিজিএমইএর সদস্য তাজরীনের মালিক- স্মার্ট গার্মেন্টসের দুই মালিক গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের চার দিন পর গত মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে ওই কারখানার দুই মালিককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ঘটনায় সাতজন শ্রমিক মারা যান।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শরীফ আহম্মদ ওরফে ছালাম (৫০) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকির আহম্মদ (৫৬)। তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে, ১১১ জন শ্রমিক মারা গেলেও আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার হোসেন এখনো বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে ধরার পরিবর্তে বরং রক্ষা করতেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তৎপরতা দেখাচ্ছেন। যদিও সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনেই ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য মালিকের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। আবার তাজরীনের ঘটনায় পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভাবমূর্তির সংকটেও পড়েছে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার না হওয়ার জন্য তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। অভিযাগ রয়েছে, বিজিএমইএও তাঁকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট তৎপর। শ্রম মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইসরাফিল হোসেন একাধিকবার অভিযোগ করেছেন যে, বিজিএমইএ তাজরীন মালিককে রক্ষা করছে। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গত সপ্তাহে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার না করার পক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। এ কারণে দেলোয়ার হোসেনকে ধরতে পুলিশের মধ্যে কোনো তৎপরতাই নেই।
অন্যদিকে, স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস তৈরি পোশাকমালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য নয়। তাদের রক্ষা করার জন্য কোনো সংগঠনই তৎপর নয়। ফলে আগুন লাগার মাত্র চার দিনের মাথায় গ্রেপ্তার করা হলো প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ মালিকের মধ্যে দুজনকে। অর্থাৎ সাত শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য গ্রেপ্তার হলেও ১১১ জনের মৃত্যুতে কিছুই করা হলো না।
এদিকে, গতকাল বুধবার এ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিবির উপকমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ডিবি পুলিশ আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁদের ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে দুজন বলেছেন, পোশাক কারখানায় ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনিরাপত্তার অনুমোদন নেওয়া হয়নি, কারখানার বিমাও করা হয়নি। আবার কারখানার ভেতরে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল না। এ ছাড়া শ্রমিকদের জরুরি অবস্থায় কারখানা থেকে বের হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
স্মার্ট গার্মেন্টস বন্ধ রাখতে নির্দেশ: অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা স্থাপন না করা পর্যন্ত স্মার্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে এই সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখতে কারখানাটির মালিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারির পাশাপাশি এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় স্মার্ট এক্সপোর্টের মালিকদের গ্রেপ্তার ও নিহত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে গত মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধিতে আবেদনটি করা হয়। গতকাল বিকেলে এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
রুলে আসামিদের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা স্থাপন না করা পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। শ্রমসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সমাবেশ: গতকাল স্মার্ট এক্সপোর্ট ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে সমাবেশ করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিহত শ্রমিকদের প্রতিটি পবিবারকে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ ও তাজরীনের মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.