দেশ পরিচালনায় দুই নেত্রীর প্রকৃত মেধা নেই

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামনিস্ট এ বি এম মূসা বলেছেন, দিল্লি ও ক্যান্টনমেন্ট থেকে দুই নেত্রীকে জনগণ নিয়ে আসেনি। দলের মধ্যম সারির নেতারা নিয়ে এসেছেন। জনগণকে নয়, যারা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন দায় তাদেরই নিতে হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকাল আয়োজিত ‘দুই নেত্রীর ওপর দায় চাপিয়ে কি গণতন্ত্র রক্ষা হবে?’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তোজার উপস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক ও কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গোলাম মওলা রনি এমপি ও আজকালের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক জাকারিয়া মাসুদ জিকো।
এ বি এম মূসা তার বক্তৃতায় বলেন, স্বামীতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্র থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। এক সময়ের মূর্তি পূজার অনুসারীরা এখন দেশে ব্যক্তি পূজা করছেন। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুই নেত্রীর দেশ পরিচালনায় প্রকৃত মেধা নেই। তিনি বলেন, সরকারের সমালোচনা করায় আমাকে ‘মধ্যরাতের সিঁধেল চোর’, ব্যারিস্টার রফিকুল হক-কে ‘কার খালু রে’ প্রভৃতি বলা হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে যারা ডুগডুগি বাজিয়েছে তারা আজ কার পাশে বসে আছে? এক সময় বঙ্গবন্ধুর সামনে তার সমালোচনা করা গেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা যায় না। আবুল মকসুদ বলেন, দেশে এখন মিডিয়ানির্ভর রাজনীতি হচ্ছে বলে জনগণের রাজনীতি নেই। নেতারা আর মাঠে ময়দানে জনগণের কাছে যান না। প্রতিদিন টিভি খুললেই কিছু মুখ ঘুরে ফিরে দেখতে হয়। এ মিডিয়া রাজনীতি অত্যন্ত কুৎসিত মনে হয়। তিনি বলেন, দুই নেত্রীর ব্যর্থতার চেয়ে দলগুলোর প্রেসিডিয়াম সদস্যদের ব্যর্থতা বেশি দেখি। তারা কোন সময় সাহসী কোন সিদ্ধান্ত নেন না। প্রতিবাদ করেন না। ক্ষমতা ও এমপি হওয়ার লোভে মিডিয়া মালিকরাও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিভিন্ন সময় দলের সমালোচনা করায় হলুদ কার্ড খেয়েছি। দেশে নতুন নেতৃত্বের পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নির্বাচন হলেও ডাকসু নির্বাচন হয় না। স্বৈরাচার এরশাদের আমলে দু’বার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোর ২২ বছরেও একবার ডাকসু নির্বাচন হয় না। কারণ, দুই নেত্রী চান না নতুন নেতৃত্ব তৈরি হোক। এতে তাদের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। দুই নেত্রী দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান না করতে পারলে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে বিকল্প আমাদের ভাবতেই হবে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, সামরিক সরকারের চেয়ে দুই নেত্রীর অবস্থা খারাপ। খালেদা জিয়ার আমলে ক্রস ফায়ার, শেখ হাসিনার আমলে গুম বিস্তার লাভ করে। তোফায়েল, আমুর মতো নেতারা আজ নিষ্ক্রিয়। যারা নেত্রীর প্রতি চরম আনুগত্য প্রকাশ করেছে তারাই কেবল নেতৃত্বে আসছেন। এখন চৈতন্যোদয় না হলে অনিশ্চিত ভবিষৎ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, তৃতীয় শক্তি বললেই আমরা সেনাবাহিনী নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিন্তু দু’দলের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত একটি বিকল্প শক্তি দাঁড়াতে পারে। গোলাম মাওলা রনি বলেন, লেখালেখি ও টকশোতে কথা বলায় অনেকেই আগামীতে আমার মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। আসলে কারও কোন ভুল হলে নেত্রী ডেকে নিয়ে শুধরে দেন। দলে সমালোচনার পথ উন্মুক্ত। শুধু মনোনয়ন নয়, আগামীতে আরও ভাল কিছু আশা করছেন বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.