সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ আপাতত ভাঙ্গা হচ্ছে না by মিজান চৌধুরী

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আপাতত ভাঙ্গা হচ্ছে না। যদিও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিতে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই চিঠির আলোকে পরিচালনা পর্ষদ ভাঙ্গা হচ্ছে না।


যদিও আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর সঙ্গত রীতি নিয়মেই পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সুপারিশের কোন এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই, এটা তাদের দায়িত্ব নয়।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংকের আর্থিক অনিয়মের একটি প্রতিবেদন গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে একাধিক শাখার আর্থিক অনিয়মের তথ্য দেয়া হয়। প্রতিবেদনে টাকা আত্মসাত ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা, বর্তমান রূপসী বাংলা হোটেল থেকে ২০১০-১২ অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাত করে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া এই ব্যাংকের গুলশান ও আগারগাঁও শাখা থেকেও ১৪০ কোটি টাকা করে ঋণ দেয়া হয়েছে, যা তাদের ঋণসীমার অনেক বেশি।
অর্থমন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের সংঘটিত অনিয়মগুলোর প্রকৃতি অত্যন্ত গুরুতর। ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার অনেক স্তর থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি কারও নজরে আসেনি, তা কোনক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বা সম্মতিতে জালিয়াতির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় সমগ্র ব্যাংক খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
এসব আর্থিক অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে ব্যাংক কোম্পানি অধ্যাদেশ ১৯৯১-এর ৪৬ (৬) ধারার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, যাতে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সোনালী, জনতা, অগ্রণীসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিন বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। ফলে ওই সময়ের আগে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভাঙ্গা হচ্ছে না। কারণ নির্ধারিত সময়েই পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হলে পুনর্গঠন করা হবে।
পরিচালনা পর্ষদে পুরনো সদস্যদের নতুন করে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে পর্ষদ পুনর্বাসন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্য কয়েকজনকে অবশ্যই বাদ দেয়া হবে। তবে কাদের বাদ দেয়া হবে এখনও ঠিক করা হয়নি। পুরনো পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে নিয়োগ দেয়া হবে না। নতুন পরিচালনা পর্ষদে কিছু নতুন সদস্য অবশ্যই আনা হবে।
সোনালী ব্যাংকের আর্থিক অনিয়মের ঘটনার ব্যাপারে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিচালনা পর্ষদকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ মনে করলে সরকারের সহায়তা নিতে পারে।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের এই দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দশ জিএমকে তলব করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে ৫০ কর্মকর্তাকেই তলব করা হবে। ইতোমধ্যে জিএম পর্যায়ের নিচের কয়েক কর্মকর্তাকে ডেকে নেয়া হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.