ব্যারিস্টার রাজ্জাক নিজেও আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন- যুদ্ধাপরাধী বিচার- ট্রাইব্যুনালে মিজবাহুরের সাক্ষ্য

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিজবাহুর রহমান চৌধুরী।


তিনি জবানবন্দী প্রদানকালে বলেছেন, ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের দ্বারাই আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব। তার পরে ছিল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। তিনি আরও বলেন, লন্ডনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের এক বক্তব্যে জানতে পারি তিনি নিজেও আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। একাত্তর সালে তিনি পাক সেনাদের সঙ্গে থেকে আলবদর বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী এই জবানবন্দী প্রদানকালে এ কথা বলেন। একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এদিকে মিজবাহুর রহমান চৌধুরীর জবানবন্দীর এক অংশের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন আমার বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এটা করা হয়েছে।
মিজবাহুর রহমান চৌধুরী জবানবন্দীতে বলেন, সৌদি আরবে বাদশা ফয়সালের সঙ্গে দেখা করে গোলাম আযম সাহেব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কিছু কথা বলছিলেন। যা আমি প্রতিবাদ করি। রাজাকার আলশামসের ওপরে ছিল আলবদর বাহিনী। আলবদর বাহিনীর ছিল শিক্ষিত যুবকদের রেজিমেন্টাল সংগঠন। রাজাকার আলশামসের ওপর খবরদারী করতে পারত। তারা পাক বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করত। জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী একটি ফ্যাসিস্ট দল। যারা ধর্মের ছদ্মাবরণে বিভিন্ন কুৎসিত কাজ করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধবাদীদের দমন করার জন্য মিথ্যাচার ও গোপন হত্যা এই ধরনের পন্থা তারা অবলম্বন করে থাকে।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিজবাহুর রহমান চৌধুরী জবানবন্দীতে আলবদর বাহিনীর সঙ্গে নিজামীর সম্পৃক্ততাসহ জামায়াতকে স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর মীর ইকবাল হোসেন। পরে তাকে জেরা করেন জামায়াতের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
জবানবন্দীতে আলহাজ মিজবাহুর রহমান বলেন, আমার জন্ম তারিখ ১৯৫৫ সালের ১২ জানুযারি। তার বাবার নাম মরহুম আব্দুর রহমান চৌধুরী, মাতা সামছি খানম চৌধুরী। বর্তমান ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান। মৌলভীবাজার কিন্ডারগার্ডেন থেকে পড়াশোনা শুরু করি। পরবর্তীতে নারয়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হই। সেখান থেকে আবার মৌলভীবাজার সরকারী বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ঐ খানে পড়া অবস্থায় সিরাজুল ইসলাম মতলবী যিনি তৎকালীন মৌলভীবাজার জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তাঁর আহ্বানে পাকিস্তান শাহীন ফৌজে আমি যোগদান করি। একই সঙ্গে ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য পদ গ্রহণ করি। সেখান থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজিট স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হই। তবে মৌলভীবাজার ইসলামী ছাত্রসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি।
পাকিস্তান শাহীন ফৌজের মৌলভীবাজার কমিটির আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ছোট বেলা থেকেই ইসলামী সংগঠন এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। আমি যতদিন ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মী ছিলাম, ততদিনই মনোযোগ সহকারে দায়িত্ব পালন করেছি। ইসলামী ছাত্রসংঘ একটি নিয়মতান্ত্রিক ছাত্রসংঘ ছিল। এটা ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন বলে দাবি করেন। এই সংগঠনের শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এবং মাওলানা মওদুদীর বই পড়ানো হতো। এটা জামায়াতের ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছিল। জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রণ করত।
জবানবন্দীতে মিজবাহুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ বা জামায়াতে ইসলামী এর প্রতিবাদ বা এর বিরোধিতা করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। ’৭১ সালে মৌলভীবাজার ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মতলবী আমার শহরের বাড়িতে ২ বার এসে না পেয়ে চিঠি লিখে যান। ঐ চিঠির সারমর্ম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ১০ আগস্ট এর মধ্যে ইসলামী ছাত্রসংঘের সকলকর্মী আলবদর বাহিনীতে যোগদান করবে এবং ঐ চিঠিতে আমাকে নির্র্দেশ করেন যে, পাক বাহিনীর কমান্ড অফিস মৌলভীবাজার ওখানে মেজর ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে নিয়োগপত্র নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এই চিঠির মধ্যে উল্লেখ করেন যে, তদানীন্তন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামীকে তাকে তিনি নিজামী ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে, আমি যদি আলবদর বাহিনীতে যোগদান করি তাহলে নিজামী খুব খুশি হবেন এবং যারা যোগ দেবে না তারা ছাত্রসংঘের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, ওই চিঠি পেয়ে আমার বাবা অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রথমে ঢাকা, পরে লন্ডনে আমাকে পাঠিয়ে দেন। ঐ সময়ে ইসলামী ছাত্রসংঘ থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। মায়ের অসুস্থতার খবরে দেশে এলেও পরে আবার লন্ডনে চলে যাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার ব্রিটেনে চলে যাই এবং সেখানে পড়াশোনা করি। ১৯৭৪ সালে লন্ডনে বাকিংহাম কলেজে ভর্তি হই। সেখানে অধ্যায়নের সময় মুসলিম স্টুডেন্ট মুভমেন্টে যোগদান করি। এতে সদস্য হই। পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এই সদস্য থাকাকালে ১৯৭৪ সালে সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সলের দাওয়াতে সৌদি আরব সফর করি। সৌদি আরবের বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে দেখি, সেখানে আগে থেকে জামায়াত আমির গোলাম আযম, তার ভাই গোলাম মোয়াজ্জেমসহ কয়েকজন রয়েছে।
সেখানে গোলাম আযম সাহেব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কিছু কথা বলছিলেন। যা আমি প্রতিবাদ করি। তিনি (গোলাম আযম) বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের অধিকাংশ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছে। মাদ্রাসা ভেঙ্গে ফেলেছে। মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। তেলয়াতের জন্য দেশে কোরান শরীফও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন করত তেমন ৪০ হাজার লোককে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে। ৪০ হাজার পরিবারের জন্য মসজিদ মাদ্রাসা পুনর্নির্মাণের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা চালু করার জন্য বাদশাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন। গোলাম আযমের সাক্ষাতের পর আমি যখন বাদশাহর সঙ্গে সাক্ষাত করি তখন আমি বাদশাহকে এই মর্মে অবগত করি যে, মুক্তিযোদ্ধারা সিংহভাগ মুসলমান। তাদের দ্বারা মসজিদ, মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং ধর্মীয় শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়নি। রাজপ্রাসাদ থেকে বের হওয়ার পরে আব্দুর রশীদ তর্কবাগীসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়। তাদের আমি ঐ সমস্ত ঘটনা জানাই।
সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, সৌদি আরব থেকে ব্রিটেন ফিরে আসার পর আমরা একটি নতুন যুবসংগঠন তৈরি করি। যার নাম ছিল ইয়ং মুসলিম অর্গানইজেশন। এর ছিলাম প্রতিষ্ঠিতা সম্পাদক। এই সংগঠন করাকালে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক (ঐ সময় তিনি ব্যারিস্টার হননি।) আমার সঙ্গে দেখা করেন। উনি আমাকে ইসলাম পছন্দ লোকেরা বসবেন বলে সেখানে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ঠিকানা দেয়া হয় ৫৭ প্লাস রোড। আমি এবং তৎকালীন ইয়ং মুসলিম অর্গানাইজেশনের সভাপতি বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এজেড শাহ ঐ বৈঠকে যাই। সেখানে আমরা দেখি গোলাম আযম এবং পাকিস্তান জামায়াতে ইসলমীর আমির মিয়া তোফায়েল এবং কয়েকজন বিখ্যাত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আব্দুল আজিজ ওখানে উপস্থিত আছেন।
আমরা এ ধরনের মিটিং ডাকার জন্য বিশেষ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি অসন্তুষ্ট হই এবং তাঁর কিছু বক্তব্য শুনে আরও ক্ষুব্ধ হই। তাঁর বক্তব্য থেকে জানতে পারলাম, তিনি নিজেও আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পাক বাহিনীর সঙ্গে থেকে আলবদর বাহিনীর দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি পালিয়ে ভারত যান। সেখান থেকে নেপাল যান। নেপাল হয়ে পাকিস্তান যান। পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডনে চলে আসেন। আমি এবং এজেড শাহ ঐ বৈঠক ত্যাগ করে চলে আসি। আমি লক্ষ্য করি, জামায়াতে ইসলামবিরোধী এবং মানবতাবিরোধী একটি সংগঠন।
জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী একটি ফ্যাসিস্ট দল। হায়দ্রাবাদে ১৯৪১ সাল জন্ম হওয়ার পর থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত এর কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে গবেষণা করে উপনীত হয়েছি যে, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী একটি ফ্যাসিস্ট দল। যারা ধর্মের শ্রদ্ধাবরণে বিভিন্ন কুৎসিত কাজ করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধবাদীদের দমন করার জন্য মিথ্যাচার হত্যাচার ও গোপন হত্যা এই ধরনের পন্থা তাঁরা অবলম্বন করে থাকেন। ধর্মের কথা বলে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই অর্থ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা ব্যয় করে। এই অর্থের সাহায্যে তেমন কোন হীন কাজ নেই যা তারা করে না।
ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের দ্বারাই আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। রাজাকার ও আলশামস বাহিনী যেভাবে গঠিত হয়েছিল, আলবদর বাহিনী সেভাবে গঠিত হয়নি। আলবদর বাহিনী ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের দ্বারাই গঠিত হয়েছিল। সাক্ষী পরে বলেন, রাজাকার আলশামসের ওপরে ছিল আলবদর বাহিনী। আলবদর বাহিনীর ছিল শিক্ষিত যুবকদের রেজিমেন্টাল সংগঠন। রাজাকার আলশামসের ওপর খবরদারী করতে পারত। তারা পাক বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করত। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ব্যক্তি দল ও প্রতিষ্ঠানের খবর পাক বাহিনীর কাছে দিত এবং ওদের ধ্বংস ও হত্যা করার জন্য পাকবাহিনীর সঙ্গে অংশগ্রহণ করত।
তিনি জবানবন্দীতে আরও বলেন, একাত্তরের ডিসেম্বরের বিজয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পাক বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে তাদের হত্যা করেছে কিংবা করিয়েছে। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট জামায়াতের ইসলামী এবং তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ দ্বারা গঠিত আলবদর বাহিনী দেশ জাতি ও মানবতাবিরোধী যে কাজ শুরু করেছিল এখনও তা অব্যাহত আছে। ২০০৮ সালে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা উপস্থাপন করেছিলেন বলেও ট্রাইব্যুনালকে জানান। জবানবন্দীর পর সাক্ষীকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেন। আজ আবার তাকে জেরা করা হবে।

ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ
সাক্ষী আলহাজ মিজবাহুর রহমান চৌধুরীর একটি বক্তব্য কেন্দ্র করে আসামিপক্ষের আইনজীবী, সাক্ষী এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের মধ্যে বাগ্বিত-া দেখা দেয়। সাক্ষী মিজবাহুর রহমান একপর্যায়ে বলেন, আমাকে এখানেই এমন কথা বলা হচ্ছে। বাইরে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, উনি ট্রাইব্যুনালে ফ্রিস্টাইলে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ওনার কাছ থেকে আমাদের আইন শিখতে হবে। তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, আইন শিখাতে আসেননি। উনি সাক্ষী দিতে এসেছেন। একপর্যায়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কি হুমকি দিচ্ছি। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, সাক্ষী আসছে উনাকে কথা বলতে দিন। আপনি উনার সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারেন না।

রাজ্জাকের বিবৃতি
এদিকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, নিম্ন লিখিত বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় রবিবার রাষ্ট্রপক্ষ মিজবাহুর রহমান চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য হাজির করেন। তিনি তার দীর্ঘ জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামী সম্পর্কে শুধু একটি বাক্য বলেছেন : নিজামী আলবদরের প্রধান ছিলেন। কিন্তু তিনি তার দীর্ঘ জবানবন্দীতে আমার বিরুদ্ধে অনেক বিষোদ্গার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ১৯৭৪ সালে লন্ডনে আমি তাঁকে একটি বৈঠকে ডেকে পাঠাই যে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম এবং পাকিস্তানের তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির মিয়া তোফায়েল মোহাম¥দ উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, ঐ বৈঠকে আমি আলবদরের সদস্য ছিলাম মর্মে স¦ীকারোক্তি দিয়েছি। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, আমি নেপাল এবং অন্যান্য দেশ হয়ে লন্ডনে গিয়েছি। এসব অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আশ্চর্যের বিষয় জনাব চৌধুরী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাতে আমার নাম পর্যন্ত উল্লেখ নেই। অতীতে তিনি আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিলে আমি তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তার অতীতের বক্তব্যের সঙ্গে আজকের বক্তব্যের কোন মিল নেই। মুক্তিযুদ্ধের ওপরে সরকারী প্রকাশনাসহ শত শত বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব কোন বইয়ে আমাকে আলবদর সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। লক্ষণীয়, বিগত ৪১ বছরে জনাব চৌধুরী ছাড়া বাংলাদেশের কোন নাগরিক আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন অভিযোগ উত্থাপন করেননি। প্রতিবারই চৌধুরী আমার বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এটা পরিষ্কার যে, জনাব চৌধুরীর বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা। ডিফেন্স টিমের প্রধান হিসেবে আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করা।’

এটিএম আজহারুল ইসলাম
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কারাগারে আজহারুল ইসলামের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
২২ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জামায়াত নেতা এটিএ আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে মগবাজারের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। ওইদিন শুনানি শেষে রবিবার আদেশের দিন রেখে আজহারকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল প্রধান বিচারপতি নিজামুল হক।
আজহারুলের পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, তার মক্কেলের স্বাস্থ্যের অবস্থা ভাল নয়। চিকিৎসার জন্য তার জামিন প্রয়োজন। তাছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারাগারে আটকে রাখার জন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর বিরোধিতা করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, আজহারের বিরুদ্ধে একাত্তরে রংপুরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, কারাগারে রেখেই আজহারুল ইসলামের চিকিৎসা সম্ভব। তাকে জামিন দেয়ার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিভিন্ন মামলায় কয়েক মাস কারাগারে থাকার পর গত ১৬ আগস্ট জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন আজহার।

No comments

Powered by Blogger.