মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানের সাক্ষ্য-‘নিজামীকে বেশ চিন্তিত ও গম্ভীর মনে হচ্ছিল’

১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে জড়িয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার ইমামুজ্জামান অস্ত্র ও চোরাচালান আইনে করা পৃথক দুটি মামলায় সাক্ষ্য দেন।
পরে তাঁকে নিজামীর কৌঁসুলি জেরা করেন। তাঁর অসমাপ্ত জেরা আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত আদালত মুলতবি রেখেছেন।
চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটি থেকে ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে গভীর রাতে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় ইমামুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান। আর বিসিআইসির অধীন হলো সিইউএফএল।
ইমামুজ্জামান আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল তিনি এ ব্যাপারে তৎকালীন শিল্পসচিব শোয়েব আহমেদের কাছে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান। তখন শোয়েব আহমেদ বলেছেন, ‘শিল্পমন্ত্রীকে আমি (শোয়েব আহমেদ) বিষয়টি জানিয়েছি। মন্ত্রী বললেন, এ ব্যাপারে তাঁর (মন্ত্রীর) করার কিছু নেই। আপনি সংস্থার প্রধান হিসেবে মন্ত্রী মহোদয়কে ঘটনা সম্পর্কে সব খুলে বলুন।’
ইমামুজ্জামান বলেন, ‘আমি শিল্পমন্ত্রীর কক্ষে গিয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাস সম্পর্কে বিবরণ দিচ্ছিলাম। এ সময় মন্ত্রী ঘটনাটা শুনছেন বলে জানান। মন্ত্রী বললেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জব্দ করেছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আলাদাভাবে করার কিছু নেই। আমি আবারও বলি, যেহেতু ঘটনাটি সিইউএফএলের জেটিঘাটে ঘটেছে, তাই শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি করলে ভালো হয়। উনি (নিজামী) কোনো উত্তর দেননি। মনে হলো বিষয়টা উনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। ওনাকে বেশ চিন্তিত ও গম্ভীর মনে হচ্ছিল।’
মন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে আবার শিল্পসচিবের কক্ষে যান বলে জানান ইমামুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি আদালতে বলেন, ‘শিল্পসচিবকে মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের সারসংক্ষেপ জানাই। এরপর আমি আমার নিজ দপ্তরে চলে যাই। অস্ত্র আটকসংক্রান্ত সিইউএফএল কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিবেদন ওই সপ্তাহে পাই। প্রতিবেদনটি সংক্ষিপ্ত ছিল। তাতে ‘অস্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘মালামাল’ আটক হয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। দায়সারা ওই প্রতিবেদন আমি না পাঠিয়ে প্রকৃত ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। পরে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কেউ পত্রালাপ কিংবা যোগাযোগ করেনি।’
গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণের সময় এই মামলার আসামি সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে সাবেক শিল্পসচিব শোয়েব আহমেদও একই আদালতে নিজামীকে জড়িয়ে প্রায় একই রকম সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.