সংবাদ সম্মেলনে রবার্ট ব্লেক-গ্রামীণ ব্যাংক, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি

গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন রাখা নিয়ে এবং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এখনো দূর হয়নি। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন।


জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রবার্ট ব্লেক মত দিয়েছেন, বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে পথ খুঁজে বের করা উচিত।
সরকার ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক বিরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, দুই নেত্রী ও দুই দল তাদের রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করবেন। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ তাঁরা খুঁজে বের করতে পারবেন।’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে রবার্ট ব্লেক বলেন, ‘আমরা সব ধরনের সামরিক ক্যুর নিন্দা জানাই। আর বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
নাগরিক সমাজের সঙ্গে তাঁর আলোচনার উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা বলেন, নাগরিক সমাজ তাদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে খসড়া এনজিও অধ্যাদেশ তাদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, খসড়া আইনটির বিষয়ে বেসরকারি সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসুন, যাতে করে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্র নিশ্চিত হয়।’
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা এবং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের উদ্বেগের বিষয়টি ব্লেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি আলোচনায় তুলে ধরেছেন। এ সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে ব্লেক বলেন, ‘সরকার তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। আর আমি আমার সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমার সব বৈঠকেই আমি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ড. ইউনূসের একজন যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে বের করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছি, যিনি একই সঙ্গে ব্যাংকের সততা, কার্যকারিতা এবং এর অংশীদারদের স্বার্থ বজায় রাখতে পারবেন।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্লেক বলেন, ‘গত বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে যে বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে তাতে আমরা উল্লেখ করেছি, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত রূপরেখা বাণিজ্য চুক্তি সই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্লেক বলেন, ‘চুক্তিটি সই করার জন্য আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। দুই দেশের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। কাজেই সম্প্রসারিত বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে একটি কাঠামো তৈরি করার এখনই সবচেয়ে ভালো সময়।’
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র লোকজন হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ভারতের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তা ছাড়া হত্যার ঘটনা কমে আসছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর দুই দেশের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এতে শুধু দুই দেশেরই নয়, সামগ্রিকভাবে পুরো অঞ্চলের লোকজন উপকৃত হবে। কাজেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এ অগ্রগতি আমাদের উৎসাহিত করছে।’
তিন দিনের সফরে রবার্ট ও ব্লেক গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসেন। এ সফরের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া ব্লেক ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির বাংলাদেশ সফরের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি সোনারগাঁয়ে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম ও চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন পরিদর্শন করেন।

No comments

Powered by Blogger.