এক বছরের কাজ শেষ হবে তিন বছরে?-মন্ত্রী আসছেন বলে

সওজের ‘ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’ পরিস্থিতি। বাগদাদের খলিফা হারুনর রশীদ দেশের অবস্থা জানতে গোপনে পরিদর্শনে বের হতেন। এখন আধুনিক যুগ, মন্ত্রীরা এখন প্রকাশ্যেই পরিদর্শন করেন। তাঁরা যেখানে যান, সবকিছু সাজানো গোছানো দেখতে পান। তাঁদের আগমন উপলক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম ও দায়িত্বের প্রদর্শন করেন।


এতে মন্ত্রীরাও ভাবার সুযোগ পান, সবকিছু ঠিকঠাকমতোই চলছে। যোগাযোগমন্ত্রী সাতক্ষীরা ও নড়াইল যাচ্ছেন বলে হঠাৎ সড়ক সংস্কারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। মন্ত্রীর জন্য তারা যা অল্প সময়ে করতে পারে, বছরের পর বছর ধরে জনগণের জন্য তা করতে পারে না কেন?
আজ যখন যোগাযোগমন্ত্রী সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়া বাজারসংলগ্ন সড়ক পরিদর্শন করছেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই পেয়েছেন সাজানো গোছানো একটি সড়ক। তাঁর সন্তোষের জন্য সবকিছু ‘ঠিকঠাক’ রাখা হয়। কিন্তু ওপরের দিকে কোথাও একটু মেরামত, কোথাও একটু রং করে আর পিচ ঢেলে যে তলার কত অনিয়ম, দুর্নীতি আর গাফিলতি লুকিয়ে ফেলা হয়েছে, তার হদিস কে করবে? সেটাও তো মন্ত্রী মহোদয়েরই দায়িত্ব!
এই সড়ক দুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ছিল। অতিষ্ঠ বাস ও ট্রাকচালকেরা একাধিকবার সংস্কারের দাবিতে যানবাহন চালানো বন্ধও করে দেন। কিন্তু সেই ফরিয়াদ সওজের কানে যায়নি। ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালের অক্টোবরে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এক বছরের কাজ তিন বছরে অর্থাৎ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
ঘটনাটি বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের একটি আদর্শ উদাহরণ। সময়ের প্রয়োজন, জনগণের চাহিদা বা রাষ্ট্রের গতির সঙ্গে চলা তো দূরের কথা, অনেক সময় তাদের গতির সঙ্গেই বাকি সবাইকে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। মন্ত্রী না গেলে কাজ হয় না, প্রধানমন্ত্রী তৎপর না হলে ফাইল নড়ে না—এমন অবস্থা সরকার বা আমলা উভয়ের জন্যই লজ্জাকর। আমরা আশা করব, এই জবাবদিহি তাঁরা ‘ওপর মহলের’ প্রতি যতটা করেন, ততটাই যেন ‘নিচের মহলের’ জনগণের প্রতিও বোধ করেন।

No comments

Powered by Blogger.