সরকারের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই-পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে আবার নড়াচড়া শুরু হয়েছে। ১৪ বছর আগে সই হওয়া চুক্তির যে অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়নি, তা সবারই জানা। এ নিয়ে পাহাড়িদের অসন্তোষ ও হতাশার শেষ নেই। এখন চুক্তিটি বাস্তবায়নে সরকারের তরফ থেকে কিছু উদ্যোগ চোখে পড়ছে। অনেক দেরিতে হলেও এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।


পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, সন্দেহ নেই। সেখানে আর যুদ্ধাবস্থা নেই। এই চুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। কিন্তু পরে চুক্তি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বাকি মেয়াদে অনেক ক্ষেত্রেই আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারেনি। অন্যদিকে তখনই পার্বত্য চুক্তির সরাসরি বিরোধিতায় নেমেছিল বিরোধী দল বিএনপি। পরে তারা যখন ক্ষমতায় আসে, তখন চুক্তি বাতিল না করলেও চুক্তি বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ করে রাখে।
আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসার পরও বছর তিনেক চলে গেছে। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে অচলাবস্থা কাটেনি। বিশেষ করে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। সম্প্রতি জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর চুক্তি বাস্তবায়নে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গওহর রিজভীর রাঙামাটি সফর ও সন্তু লারমার সঙ্গে বৈঠক, পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সন্তু লারমার বৈঠক এবং এরই ধারাবাহিকতায় চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার গঠিত কমিটির বৈঠকে নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সন্তু লারমা নিজেই বলেছেন, ‘এযাবৎকালের মধ্যে এই প্রথম সরকারের একটি ইতিবাচক উদ্যোগ দেখলাম।’
পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ভূমিবিরোধের মীমাংসা। এ জন্য ২০০১ সালে যে আইন হয়েছিল, তা পার্বত্য চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় এ নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। এ নিয়ে জটিলতার কারণেই ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি ঝুলে থাকে। আশাবাদী হওয়ার কারণ হচ্ছে, চুক্তি বাস্তবায়নসংক্রান্ত কমিটি ২০০১ সালের আইনটিকে চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন সংশোধন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি প্রশাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্পিত হবে। এগুলো ভূমি মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকায় এত দিন ধরে সমস্যা হচ্ছিল। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা নানা সমস্যার সৃষ্টি করছিল। চেয়ারম্যানের এই একক ক্ষমতাও রদ করা হচ্ছে।
এসব অগ্রগতিকে ইতিবাচক বিবেচনায় নিয়ে আমরা দ্রুত এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। অনেক দেরি হয়ে গেছে, একটি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ১৪ বছর অপেক্ষা করার বিষয়টি পার্বত্যবাসীর জন্য খুবই হতাশার বিষয়। সব পক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে বলেই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.