ভ্রমণবিলাস!-অপচয় বন্ধ করা প্রয়োজন

রাষ্ট্রের টাকা অপব্যয়-অপচয়ের নানা কৌশল আছে। রাষ্ট্রের অর্থে সরকারি কর্মকর্তাদের নানা বিলাসিতার খবর মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায়। রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করে সরকারি কর্মকর্তারা দেশের মধ্যে নানা ধরনের বিলাসিতা করে থাকেন। সেই বিলাসিতা এখন বিদেশ পর্যন্ত পেঁৗছে গেছে। সরকারি অর্থ খরচ করে সভা-সেমিনার-প্রশিক্ষণের নামে বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণ করছেন। এতে দেশের অর্থ খরচ হচ্ছে, কিন্তু দেশ এই বিদেশ ভ্রমণ থেকে লাভবান হতে পারছে না।


কর্মকর্তাদের এই বিদেশ ভ্রমণলব্ধ অভিজ্ঞতা দেশের কোনো কাজে আসছে না। মাঝখান থেকে সভা-সেমিনার-প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণের কারণে অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা।
এর আগে কর্মকর্তাদের গাড়িবিলাস নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। এবার কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ওয়াসার কর্মকর্তাদের ভ্রমণবিলাসের তথ্য। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে ঢাকা ওয়াসার প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা অজুহাতে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা একাধিকবার নানা অজুহাতে ওয়াসার অর্থে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। সংস্থাটির শীর্ষ কর্তাও এই ভ্রমণবিলাসের অভিযোগ থেকে মুক্ত নন। আবার প্রেষণে ওয়াসায় এসে বিদেশ ভ্রমণের উদাহরণও আছে। সব সময় তাঁদের এই বিদেশ ভ্রমণের অর্থ দেওয়া হয়েছে ওয়াসা থেকে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেই ব্যয় হয়েছে এই অর্থ। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ছাড়া ঠিকাদারদের কাছ থেকেও অনেক সময় বিদেশ ভ্রমণের অর্থ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারদের পণ্যের মান যাচাইয়ের নামে এসব প্রমোদ ভ্রমণ আয়োজন করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে কর্মকর্তাদের এই বিদেশ ভ্রমণের সময় প্রচলিত নিয়মনীতিও মেনে চলা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। ওয়াসার কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের একটি নিয়ম আছে। স্বতঃসিদ্ধ নিয়মটি হলো_পর্যায়ক্রমে সবাই বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সে নিয়ম মেনে চলা হয় না ঢাকা ওয়াসায়। ফলে একাধিক কর্মকর্তার একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে। উপরন্তু নির্দিষ্ট কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত নন_এমন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে। আবার এমনও দেখা গেছে যে যাঁদের সভা-সেমিনার-প্রশিক্ষণ-কর্মশালার নামে বিদেশে পাঠানো হয়, তাঁদের অনেকেই ওই কাজের জন্য উপযুক্ত নন। ফলে সভা-সেমিনার বা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গিয়ে তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এতে রাষ্ট্রের অর্থের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়।
রাষ্ট্রীয় অর্থে বিদেশ ভ্রমণ করে অনেকেই বিদেশে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়িয়ে সময় কাটিয়ে দেন। রাষ্ট্রীয় অর্থে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগও আছে। সে অভিযোগ অমূলকও নয়। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালার নামে বিদেশে গিয়ে নিছক বিলাসিতাই করেছেন এই কর্মকর্তারা। তাঁদের এই ভ্রমণবিলাসের ক্ষতি গুনতে হয়েছে দেশকে। এটা এক অর্থে অন্যায়। বোধ করি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালার নামে কর্মকর্তাদের এই ভ্রমণবিলাসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থই অপচয় হচ্ছে। দেশের স্বার্থেই এই অপচয় বন্ধ করতে হবে। সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সেই কর্মকর্তাদেরই পাঠানো হোক, যাঁদের সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লব্ধ জ্ঞান দেশের স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.