আয়কর মেলার সাফল্য-কর কার্যালয় ভীতির উৎস না হোক

মানুষ আয়কর দিতে চায় না_রাজস্ব বিভাগের এমন ধারণা সত্য নয়। এবারের আয়কর মেলার অভূতপূর্ব সাফল্য তা-ই প্রমাণ করে। ঢাকা মহানগর এবং সাতটি বিভাগীয় শহরে আয়োজিত ছয় দিনের এই মেলায় মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বেশি এবং গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। অথচ এবার মেলায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০০ কোটি টাকা। মেলার শেষ দিনেও ছিল করদাতাদের উপচেপড়া ভিড়।
আয়োজনের কিছু দুর্বলতার কারণে অনেকেই কর দিতে এসেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন। অফিস খোলা থাকার দিনগুলোতে মেলা হওয়ায় এবং প্রায় অফিস সময় অনুযায়ী মেলা চলায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মেলায় আসতে পারেননি এবং কর দিতে পারেননি। মেলার আয়োজকরা বিষয়টি মাথায় নিয়ে মেলার সময় নির্ধারণ করলে এর চেয়েও বেশি সাড়া পাওয়া যেত বলে মেলায় আগতদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
বাস্তবতার নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণ না করে কোনো বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য করাটা সম্ভবত আমাদের চরিত্রেরই একটি বৈশিষ্ট্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা কিংবা মন্ত্রী-আমলারাও এর ব্যতিক্রম নন। আর সে কারণেই অতীতে আমাদের এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে মানুষ আয়কর দিতে চায় না, রাষ্ট্র উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করবে কিভাবে? কিন্তু দ্বিতীয় বছরের মতো এবার যে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়েছিল, তাতে আসা আয়করদাতাদের বক্তব্য থেকে আমরা ভিন্ন ধারণাই পাই। পত্রিকাগুলোতে মেলায় আগত করদাতাদের অনেকেই তাঁদের সেই সব দুঃখজনক অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তাই আয়কর দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও কর কার্যালয়ের এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের হয়রানির ভয়ে অনেকে আয়কর দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। মেলায় সহজে কর দিতে পেরে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মেলার মতো করে সারা বছরই কিছু ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে তাঁরা কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া সহজে কর দিতে পারেন। তদুপরি সেখানে কর্মরত একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসততার কারণেও সরকারের রাজস্ব আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানা যায়। মেলায় আগত মানুষের এসব বক্তব্য ও পরামর্শকে আমলে নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যদি ভবিষ্যতে তাদের কর আদায়-প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করে, তাহলে রাজস্ব আদায় যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় সমৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আরো গতিশীল করার স্বার্থেই দেশের কর-ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন। কর কার্যালয় ভীতির উৎস হলে তা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। আমরা আশা করি, এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টি উপলব্ধি করবেন এবং কর কার্যালয়ের কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আনবেন। আগামী বছর অনলাইনে কর প্রদানের সুযোগ থাকবে বলে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেটিও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে_এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.