পবিত্র কোরআনের আলো-চন্দ্র এবং সূর্যকে স্থাপন করা হয়েছে মানুষের সময় হিসাব করার জন্য

৯৪. ওয়ালাক্বাদ জি'তুমূনা ফুরা-দা কামা খালাক্বনা-কুম আউওয়ালা মার্রাতিন ওয়া তারাকতুম্ মা খাওওয়ালনা-কুম ওয়া রা-আ যুহূরিকুম; ওয়া মা নারা মাআ'কুম শুফাআ'আকুমুল্লাযীনা যাআ'ম্তুম আন্নাহুম ফীকুম শুরাকা-উ; লাক্বাদ তাক্বাত্ত্বাআ' বাইনাকুম ওয়া দ্বাল্লা আ'নকুম মা কুনতুম তাযউ'মূন। ৯৫. ইন্নাল্লাহা ফালিক্বুল হাবি্ব ওয়ান্নাওয়া; ইউখরিজুল হাইয়্যা মিনাল মায়্যিতি ওয়া মুখরিজুল মাইয়্যিতি মিনাল হায়্যি; যালিকুমুল্লাহু ফাআন্না তু'ফাকূন।


৯৬. ফা-লিক্বুল ইসবা-হি ওয়া জাআ'লাল লাইলা ছাকানান ওয়াশ্শামছা ওয়ালক্বামারা হুছবানা; যালিকা তাক্বদীরুল আ'যীযিল আ'লীম। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৯৪-৯৬]
অনুবাদ : ৯৪. (শেষ বিচার দিনে আল্লাহ বলবেন) আজ তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় এলে, যে অবস্থায় আমি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। এরপর আমি তোমাদের যা কিছু সম্পদ ও বৈভব দান করেছিলাম, তার সবটুকুই তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। তোমাদের মধ্যে আজ তোমাদের সেই সুপারিশকারীদের তো দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করতে তোমাদের উদ্দেশ্য সফল হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর অংশীদার। তোমাদের এবং তাদের মধ্যকার সেই মিথ্যা সম্পর্ক আজ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের ব্যাপারে তোমরা যা ধারণা করতে, তাও নিষ্ফল হয়ে গেছে। ৯৫. নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শস্যবীজ ও আঁটিগুলো অঙ্কুরিত করেন। তিনিই নির্জীব থেকে জীবন্ত বের করে আনেন, আবার তিনিই জীবন্ত থেকে প্রাণহীন কিছু নির্গত করেন। এই তিনিই তো তোমাদের আল্লাহ, অথচ তোমরা উল্টোপথে চলছো। ৯৬. তিনিই তো প্রভাত নিয়ে আসেন, তিনি রাতকে তোমাদের বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং চাঁদ ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন সময়ের হিসাব রাখার জন্য। এ সব কিছুই মহাপরাক্রমশালী মহাচৈতন্যময় সৃষ্টিকর্তার নির্ধারণ করা।
ব্যাখ্যা : ৯৪ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : মক্কার কোরাইশরা একাধারে আল্লাহ এবং দেব-দেবীদের ক্ষমতায় বিশ্বাস করত, তাদের মধ্যকার বিভিন্ন গোত্র ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবীতেও বিশ্বাস করত। তারা তাদের এ রকম বিশ্বাসের সমর্থনে মুসলমানদের সঙ্গে তর্কও করত। কথিত আছে : নাজার ইবনে হারেছ নামে এক কোরাইশ সরদার রাসুল (সা.)-এর সামনেই বলছিল, 'আমার কিসের পরোয়া, লাত ও মানাত দেবতাদ্বয় আমার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে।' তখন এই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে মুশরিকদের পরিহাস করে বলা হয়েছে, শেষ বিচারের দিন তারা যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন তারা থাকবে একা। বন্ধুবান্ধব, আপনজন বা ধনদৌলত_কিছুই তাদের সঙ্গে থাকবে না, আর থাকবে না ওরাও, যাদের তারা আল্লাহর শরিক বানিয়ে পূজা করছে। সেদিন মুশরিকদের ভ্রান্ত ধারণা অবশ্যই ভাঙবে। কিন্তু তাদের তখন আর কিছু করার থাকবে না। তারা তখন শুধু দেখতে পাবে, তাদের জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে। ৯৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং বিশ্বজাহানের স্রষ্টা, এই সত্যটা মানুষের উপলব্ধিতে আনার মতো যুক্তি ও বর্ণনা এসব আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ যদি তার জ্ঞান-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে বিশ্বস্রষ্টার স্বরূপ ও প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করে, তবে তা খুব সহজেই বুঝতে পারে। কিন্তু এর পরও মানুষ উল্টোপথে যায়। এসব দুর্ভাগা মানুষের জন্য এখানে আক্ষেপ করা হয়েছে।
৯৬ নম্বর আয়াতে দিবা-রাত্রির আবর্তন ও চন্দ্র-সূর্যের রহস্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। দিবা-রাত্রি ও চন্দ্র-সূর্যের রহস্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে এখানে মানুষ এগুলোকে যতটা দেখে এবং যেভাবে দেখে, সে দিকটাই শুধু বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজাহানের বিশাল রহস্যভাণ্ডারের সব কিছু জানেন। সব কিছু তিনিই তাঁর ইচ্ছা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই রহস্যভাণ্ডারের সব কিছু মানুষকে জানাতে চেষ্টা করা তাঁর কাজ নয়। এখানে তিনি মানুষকে জানিয়েছেন তাঁর প্রয়োজনীয় দিকটির মর্ম কথাগুলো।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.