পাখি- মেটেচাঁদি চড়ুইভরত by সৌরভ মাহমুদ

হাবিপন্ন পাখি শেখ ফরিদ বা কালা তিতিরের খোঁজে ২০০৯ সাল থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কাজীপাড়া গ্রামে যাচ্ছি। গত দুই বছর পাখিটির দেখা পাইনি। এবার ৬ অক্টোবর পুজোর ছুটিতে প্রায় ১৩ ঘণ্টা বাসযাত্রা করে আবার হাজির হই সেই কাজীপাড়ায়। এবার ভাগ্য কিছুটা প্রসন্ন। অনেক চেষ্টা করে কালা তিতিরের এক ঝলক দেখা মিললেও মনমতো ছবি তুলতে পারিনি।

তবে এবার দেখা হলো বাংলাদেশের আরেক বিরল আবাসিক পাখি ‘মেটেচাঁদি চড়ুইভরত’-এর সঙ্গে কাজীপাড়ার ভারতসংলগ্ন একটি শুকনো ভিটায়। ক্ষুদ্রাকৃতির পাখিটির কাছে যতই যাই, সে ততই অলসতার ভান করে দাঁড়িয়ে থাকে; যেন বলতে চায়, ‘আমি সীমান্তের বাসিন্দা, এখানে মানুষজন কম আসে, তাই আমার ভয়ডর একটু কম।’ আসলে কি তাই?
মেটেচাঁদি চড়ুইভরত ছোট আকৃতির মেঠো পাখি। সাধারণত নিরিবিলি বালুময় নদীতীর ও বিরান মাঠে ধীরপায়ে লাফিয়ে ও হেঁটে বেড়ায় এই পাখিরা। কর্ষিত জমি, শুকনো মুক্ত অঞ্চল, শিলাময় এলাকা এ পাখির প্রিয় আবাস। জোড়ায় ও ছোট দলে থাকে। শুকনো ও ধুলাময় মাটিতে ঠোকর দিয়ে খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, পিঁপড়া, গুবরে পোকা ও অন্যান্য পোকামাকড়।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির পিঠ বালি-বাদামি, ডানার পালক কালচে, মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছন ধূসর। পুরুষ পাখির পেট ও বুক থেকে গলা আবধি গাঢ় কালো রঙের পালক থাকে। মেয়ে পাখির এটি থাকে না। মেয়ে পাখির পিঠ ও দেহতল লম্বা লম্বা দাগসহ পুরো বালি-বাদামি। মুখ ফিকে পাটকিলে। দেহ দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬ গ্রাম।
সারা বছরই এই পাখির প্রজনন মৌসুম। এরা ভূমিতে বাস করে। প্রাকৃতিক খোদলে ঘাস, পালক বিছিয়ে বাসা বানায়। দু-তিনটি ডিম দেয়। মা-বাবা মিলে সংসারের বাকি কাজ করে। ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ায় পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে। পাখিটির ইংরেজি নাম Ashy-crowned Sparrow-Lark। বৈজ্ঞানিক নাম Eremopterix griseus।

No comments

Powered by Blogger.