কবীর চৌধুরীর জন্মদিন আজ

বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ৯১তম জন্মদিন আজ। অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনা অন্যতম পথিকৃত ও ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী আন্দোলনের পুরোগামী এই নেতা ১৯২৩ সালের আজকের এইদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জন্মগ্রহণ করেন।
ইতিহাসের এই মহান ব্যক্তির জন্মদিন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভা। রাজধানীর ধানম-ির বিলিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় স্মারক বক্তব্য প্রদান করবেন দেশের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, গবেষক, লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দাবিতে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। ২১ বছর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগারিক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল তার অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ৭১ এর ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুদ্ধাপরাধী নেতা গোলাম আজমের বিচারের জন্য যে ঐতিহাসিক গণআদালত বসেছিল তার অন্যতম বিচারক ছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। এ কারণে তৎকালীন সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করলেও শাসক শ্রেণীর ক্রোধ ও প্রতিহিংসা তাঁকে কখনও দমাতে পারেনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে প্রায় আড়াই শ’ আলোচনা সভা ও জনসমাবেশে পৌরহিত্য করেছেন তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজপথের মিছিলে। আমৃত্যু একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতিত্বে পথ অলঙ্কৃত করেছেন। তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে শুধু ভাষা সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্বই পড়াননি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদকে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভক্ত করেছেন তিনি। পড়িয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার মৌলবাদীর উত্থান ও প্রকৃতি। প্রতিরোধের পথনির্দেশ করেছেন। সত্য-ন্যায় ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নাগরিক আন্দোলনে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর অবদান ও রচনাবলী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তরুণদের আলোকিত ও অনুপ্রাণিত করবে। ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ নয়াপল্টনে নিজ বাসভবনে ৮৯ বছর বয়সে এই মহান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.