কালোবাজারে চাল!

চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন সময়ে নেয়া প্রায় উদ্যোগগুলো সফল হচ্ছে না। সরকারের আন্তরিকতা থাকার পরও যদি সাফল্যের অভাব পরিলক্ষিত হয় তাহলে সেটা ব্যর্থতারই নামান্তর।
সরকারী গুদামের চাল, খোলাবাজারে অবাধে পাচার হওয়ার পর বিক্রি হলে পুরো দায়িত্ব প্রশাসনের। অথচ সরকারী প্রশাসনের একটি অংশ অর্থাৎ গুদামের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে চাল পাচার করছে। মোটা চাল দরিদ্র মানুষের হাতছাড়া হয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। পাচার হয়ে যাওয়া ন্যায্যমূল্যে ওএমএসের চালও পাইকারি ও খুচরা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। গত এক বছর ধরে টিসিবি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে, কমিটি গঠন করেছে কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে ফল শূন্য। যারা বাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কলকাঠি নাড়ছে, যে সিন্ডিকেট দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ এবং শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। সময় কিংবা সদিচ্ছার অভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা কেবলমাত্র রাজধানীর গুটিকয়েক বাজারে কিয়ৎক্ষণের জন্য পরিদর্শন করেন। আর পরিদর্শন করার আগেই ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন তা জেনে যান এবং সঙ্কেত বার্তা ছড়িয়ে দেন সাবধান হওয়ার জন্য। এটার সাথেও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত কি না এমন প্রশ্ন সাধারণ ক্রেতাদের মনে জাগ্রত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ওদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি গঠনের কথা জানা গেল। খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছেন। প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করে তা মন্ত্রীকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন বর্তমানে টি আর, কাবিখা, ওএমএস এবং বিভিন্ন সংস্থায় রেশনের চাল বিতরণ হচ্ছে। টি আর, কাবিখার চাল বাজারে বিক্রি হতে পারে। তবে ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যাপারে মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এক প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন যাতে বলা হয়েছে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতি ট্রাক ডিলারের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রনালয় একজন স্টাফকে সার্বৰণিক অবস্থানের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
যাই হোক, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে সরকারের প্রশংসায় ভাটা পড়বে। কারণ এদেশে দরিদ্রের সংখ্যা বেশি, এদের জন্য মোটা চালের যোগানও দিতে হয় বেশি পরিমাণে।

ওয়াসার পানি

রাজধানীতে ওয়াসার পানিতে ক্যান্সারের উপাদান টিএইচএম (ট্রাই হেলোমেথেন) আছে কি না তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কাছ থেকে পরীক্ষা করে সেই প্রতিবেদন আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া আদালত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছে। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পৰে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
বিষয়টি যে অত্যনত্ম গুরুত্বপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই। রাজধানীতে পানি সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওয়াসা দীর্ঘদিন যাবত পানি সরবরাহ করে আসছে। এই পানির ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা অভিযোগ উঠেছে। কোন সময় অভিযোগ উঠেছে পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, কোন এলাকা থেকে অভিযোগ উঠেছে পানিতে শ্যাওলা জাতীয় বস্তু পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের নানা অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠেছে। হাইকোর্ট বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানিতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উল্লিখিত উপাদান আছে কিনা তা হু-র কাছ থেকে পরীক্ষার জন্য যে নির্দেশ দিয়েছে সেটা অবশ্যই হওয়া উচিত। বিষয়টির সঙ্গে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বার্থ অর্থাৎ সোজা কথায় স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি জড়িত। সবাই এ নির্দেশকে স্বাগত জানাবে, অত্যনত্ম গুরুত্বের সঙ্গে দেখে যথাযথভাবে এ নির্দেশের বাসত্মবায়ন প্রত্যাশা করবে। এই প্রসঙ্গে রাজধানীর পানি সরবরাহ সংক্রান্ত দু'একটি বিষয় এখানে আলোচনা করা যেতে পারে।
ঢাকা মহানগরী এখন সত্যিকার এক মহানগরী। এই মহানগরীতে পানির চাহিদা বিপুল। এই চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা কঠিন। তারপরও যে বিপুল পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয় তার বেশিরভাগই তোলা হয় মাটির নিচ থেকে। বহুদিন ধরে এভাবে চলছে এবং বহুদিন আগেই অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন এভাবে নির্বিচারে মাটির নিচ থেকে পানি তোলা ভাল নয়, এতে রাজধানীর পানি স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে ক্রমাগত। এতে নগরীর পরিবেশের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা কেউ কেউ রাজধানীর মাটির নিচের অবস্থা বিবেচনা করে এখানে মাটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এবং বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে মাটির নিচের এই অবস্থার কারণে তার ফলাফলও মারাত্মক হতে পারে সে আশঙ্কার কথাও কেউ কেউ বলছেন। বিষয়টি আলোচিত হয়েছে বহুদিন ধরে, নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে বিবেচনাও কিছু কিছু হয়েছে, কিন্তু বিকল্প তেমন ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু চাঁদনীঘাটে বুড়িগঙ্গার পানি এবং সায়েদাবাদে শীতলক্ষ্যার পানি যা শোধন করা হয় তার পরিমাণ অল্প। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে উল্লেখিত দুই নদীও খুব দূষিত। এই পানি শোধন করতে, ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করতে নানাবিধ ব্যবস্থা নিতে হয়। দূরের কোন নদী থেকে পদ্মা, মেঘনা বা যমুনা থেকে পানি এনে শোধন করে সরবরাহ করার ব্যবস্থা এখানে গড়ে ওঠেনি, এ নিয়ে কোন প্রকল্পও কখনও নেয়া হয়নি। আজকাল এই আধুনিক যুগে জানা যায়, মানুষ সমুদ্রের নোনা পানিও শোধন করে ব্যবহার করতে পারে। তবে ঢাকা নগরীর নিরাপত্তা, ঢাকাবাসীর কল্যাণ চিন্তা করে রাজধানী নগরীর ভূগর্ভ এবং নদীর পানির বিষয় এখনই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। বিশুদ্ধ, জীবাণুমুক্ত, ব্যাকটেরিয়ামুক্ত, মানবদেহের জন্য ৰতি হতে পারে এমন যে কোন কেমিক্যালমুক্ত পানির কথা ভাবতে হবে। এখন মাটির তলা থেকে বা নদী থেকে তুলে শোধন করে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে সেই পানি নগরবাসী যাবতীয় কাজে লাগাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। দেশে পানিবাহিত রোগ এখনও কম নয়। ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, টাইফয়েড, চর্মরোগ ইত্যাদি রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। মঙ্গলবারই পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানীতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে ঘণ্টায় ২০ জন করে ভর্তি হচ্ছে। যাইহোক, এগুলোর সঙ্গে ওয়াসার পানির সম্পর্ক কতটুকু বা আদৌ আছে কিনা সেটা ভিন্ন ব্যাপার। তবে যেহেতু প্রসঙ্গটি পানির এবং পানির যোগানদার ওয়াসা, তাই ওয়াসার পানির ব্যাপারে এবং পানি উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
টুনা নিধন
সুস্বাদু মাছ হিসেবে টুনা যাদের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু ভোজনরসিকদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে হরহামেশা এই মাছ এখন বাজারে বিকোবে না। অতিরিক্ত হারে টুনা ফিশ নিধনে এর বংশ বিস্তার রোধ হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে টুনা মাছ। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে টুনা রক্ষার্থে এই মাছ অবাধে নিধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা আশি ভাগ টুনা চলে যায় জাপানে।
_আইএইচটি মার্চ-৪, ২০১০

No comments

Powered by Blogger.