বেগম জিয়ার অফিসের সামনে বিস্ফোরণ, নানা প্রশ্ন by রাসেল রানা ‍

 এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ককটেল হামলার অভিযোগ নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের পাশের রাসত্মা থেকে দু'টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়। তাৎৰণিক এক প্রতিক্রিয়ায় কোন প্রমাণ ছাড়া বিএনপি অভিযোগ করে, খালেদা জিয়াকে হত্যা করতেই বোমা পুঁতে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ পর ২৩ ফেব্রম্নয়ারি রাতে কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এৰেত্রেও তাৎৰণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি একই অভিযোগ করে এবং এ ঘটনায় দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আকতার হামিদ পবন আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পুলিশ বলছে, পবনের শরীরে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হওয়ার কোন চিহ্ন নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পবনের হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি রহস্যজনক। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে সাজানো কিন্তু পরিকল্পিত উলেস্নখ করেছে। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক দলের সমাবেশে বা অফিসে বোমা হামলার ঘটনা অনেক ঘটলেও তা ঘটেছে অসাম্প্রদায়িক বা স্বাধীনতার পৰের দলের সমাবেশে বা অফিসে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত বা বিএনপির কোন সমাবেশে বা অফিসে বোমা বা ককটেল হামলার কোন নজির নেই। কারণ হিসেবে বিভিন্ন সময় স্পষ্ট হয়েছে যে, অতীতে যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কোন না কোনভাবে বিএনপি বা জামায়াতের প্রশ্রয়েই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। বোমা বা ককটেল বা গ্রেনেড হামলায় নিহতও হয়েছে আওয়ামী লীগ বা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সমমনা দলের নেতাকর্মীরা। তাহলে হঠাৎ এক মাসে দুই দফা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বোমা হামলার নাটক সাজাল কারা? কেনই-বা এসব হামলায় নূ্যনতম হতাহতের ঘটনাও নেই? জর্দার কৌটায় বানানো কম শক্তিশালী, পুলিশের ভাষ্যমতে, যে বোমা দিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়, এমন বোমা গুলশান কার্যালয়ের শতাধিক গজ দূরে পুঁতে রেখে খালেদা জিয়াকে হত্যা করা কি সম্ভব?
দেশের সচেতন মহলের মতে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব প্রশ্ন পাশাপাশি রেখে উত্তর খুঁজলে বোঝা যায়, বিএনপি নিজেরা সরকারের বিরম্নদ্ধে কোন ইসু্য না পেয়ে বোমা হামলার নাটক সাজাচ্ছে। অথবা জামায়াত তাদের স্বার্থে বিএনপিকে রাজপথে নামাতে দলের নিজস্ব কর্মীবাহিনী দিয়ে এসব নাটক মঞ্চস্থ করছে। ১৫ ফেব্রম্নয়ারির নাটক জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি বলেই তারা দ্বিতীয় দফায় একই নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছে। এৰেত্রে দেলোয়ারপুত্র পবনের আহত হওয়ার বিষয়টিও সাজানো নাটককে বিশ্বাসযোগ্য করার মেকআপ হিসেবে দেখছেন অনেকে। কিন্তু পুলিশ পবনের আহত হওয়ার বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় ২৩ ফেব্রম্নয়ারির সাজানো নাটককেও ব্যর্থ মিশন হিসেবে দেখছে নাটকের কুশীলবরা। শুধু রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে কোন রাজনৈতিক দল এমন সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে প্রতিপৰের ওপর এর দায় চাপানোর ন্যক্কারজনক প্রবণতা নজিরবিহীন বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশেস্নষক।
গত ৮ ফেব্রম্নয়াির জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেন। এ ঘটনায় সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলে সরকার খুনীদের ধরতে পুলিশী অভিযান জোরদার করে। এ প্রেৰিতে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী শিবির কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে পুলিশী অভিযানের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামতে বিএনপির সহযোগিতা চাইতে ১৩ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে রম্নদ্ধদ্বার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিজামীর প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল আসে না এই বৈঠক থেকে। খালেদা জিয়া বৈঠকে নিজামীর সব কথা শুনে সহযোগিতার আশ্বাসের পরিবর্তে কিছুটা ৰুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেন। শিবিরের বর্বর কার্যক্রমে বেগম জিয়া অসনত্মোষ প্রকাশ করেন। নিজামীর সহযোগিতা চাওয়ার বিপরীতে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধানত্ম নেয়ার কথা জানান। কাজেই হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় নিজামীকে। নিজামী হতাশ হয়ে ফিরে আসার ৩৬ ঘন্ণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে দু'টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎৰণিকভাবে এক প্রতিক্রিযায় বিএনপি অভিযোগ করে, খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছে। পরের দিন এক সংবাদ সম্মেলনেও বিএনপি একই অভিযোগ করে। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, উদ্ধারকৃত বোমা দু'টি তেমন শক্তিশালী ছিল না। জর্দার কৌটায় (ছোট) বেশ কিছু পাথর ও সালফার দিয়ে বোমা দু'টি তৈরি করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত বোমা দু'টির বিস্ফোরণে বড় ধরনের নাশকতা ঘটার কোন সম্ভবনাই ছিল না। তবে বিষয়টি পরিকল্পিত উলেস্নখ করে তিনি জানান, আতঙ্ক সৃষ্টি এবং পরোৰ হুমকি দিতেই বোমা দু'টি পুঁতে রাখা হতে পারে। পুলিশের এ বক্তব্যের পর বিএনপি এ ঘটনা নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য করেনি। আর বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নীরব হয়ে যাওয়ায় পরিকল্পনাকারীদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় বলে দাবি করেছে একটি সূত্র। এই সূত্রমতে, ১৫ ফেব্রম্নয়ারির ঘটনায় বিএনপির নীরব হয়ে যাওয়ার দু'টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত নিজেদের সাজানো ঘটনা ফাঁস হয়ে যেতে পারে, দ্বিতীয়ত শরিক দল জামায়াত উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে, বিষয়টি বুঝতে পেরেছে বিএনপি। তবে প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় আরও আটসাট বেঁধে নামে পরিকল্পনাকারীরা। ২৩ ফেব্রম্নয়ারির ঘটনায় তারা মহাসচিব পুত্র পবনের আহত হওয়ার দৃশ্য যোগ করে। এমনকি পবনকে আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির দৃশ্যও সংযোজন করা হয়। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়ও কিছুটা নতুনত্ব আনা হয়। বিএনপির পৰে এবারও কোন প্রমাণ ছাড়াই যুবলীগকে দায়ী করা হয়। কিন্তু গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে সাধারণ জনগণ প্রদীপ সাহা নামে একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ বুধবার প্রদীপ সাহাকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জানিয়ে কামাল উদ্দিন বলেন, পবনের শরীরে ককটেল বা বোমা বিস্ফোরণে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। আমি সব সাংবাদিককে বলেছি, আপনারা সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখুন, পবনের কিছু হয়েছে কিনা। খামোখাই এসব করা হচ্ছে।
পুলিশের বক্তব্যের পরেও বিএনপি এ ঘটনার জন্য যুবলীগকে দায়ী করায় প্রশ্ন উঠেছে, প্রথম দফায় নাটক সাজিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপিই কি তবে দ্বিতীয় দফার নাটক সাজিয়েছে, নাকি জামায়াত-শিবিরের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে বিএনপি। কেনই-বা পবন সাজানো নাটকের গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছে- পবনকে জিজ্ঞাসা করলেই এই সাজানো নাটকের নেপথ্যে থাকা কুশীলবদের চেহারা উন্মোচিত হবে বলেও মত দিয়েছেন অনেকেই। রাজনৈতিক বিশেস্নষকদের মতে, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে বোমা পুঁতে রাখা বা কার্যালয়ের সামনে বোমা বা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে সরকারের ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি গুরম্নত্বের সঙ্গে নিয়ে আসল রহস্য উন্মোচন করে তা জনগণকে জানানো দরকার।

No comments

Powered by Blogger.