মনের কোণে হীরে-মুক্তো-স্লোগানের ধাওয়ায় মূলনীতি বিতাড়িত জনস্বার্থ তিরোহিত by ড. সা'দত হুসাইন

পোল্যান্ডে তখন লেচ ওয়ালেসার নেতৃত্বে এক শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায় করা, শ্রমিক স্বার্থবিরোধী আইন-কানুন, রীতি-পদ্ধতি বাতিল করা। সে সময় পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন।
শ্রমিক অধিকার তথা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও সুবিধাদি কায়েম করা কমিউনিস্ট পার্টির মূল উদ্দেশ্য। শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার স্লোগানের ওপর ভর করেই বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় যে প্রশ্নটি আমার মনকে বারবার আলোড়িত করেছে তা হলো শ্রমিক রাজ কায়েমের স্লোগান দিয়ে যাঁরা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁরা কি তবে শ্রমিক-স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছেন? যদি করে থাকেন তবে কেন?
এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আমি ক্ষমতার রসায়ন এবং এর ক্রিয়া-পদ্ধতি (Dynamics) বুঝতে চেষ্টা করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন দলের আচরণ, বিরোধী দল বা প্রতিবাদী জনতার পদক্ষেপ, তাদের কৌশল এবং চূড়ান্ত অভিযাত্রা গভীর অভিনিবেশ সহকারে পর্যবেক্ষণ করি। দেশে যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে সরকারে কাজ করেছি তাই সাধারণ সময়ে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের সন্ধিক্ষণে ক্ষমতাসীনদের মানসিকতা, তাদের আচরণ এবং সর্বোপরি বিরোধী দলের প্রতিবাদ, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের কৌশল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়েছে। এ রকম পর্যবেক্ষণ করার অভিজ্ঞতা ক্ষমতা এবং আদর্শের সম্পর্ক তথা সমীকরণ বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
ক্ষমতার নিজস্ব রসায়ন এবং শক্তি রয়েছে। ক্ষমতা একটি বিশাল সম্পদ। এ সম্পদ আরাম, আয়েশ ও আনন্দ দিতে পারে। এটি আবার বৈষয়িক সম্পদ বৃদ্ধিতে সক্ষম। নিজস্ব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে, আমিত্ব ও অহমিকা প্রকাশে এবং অন্য সবার ঊর্ধ্বে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা স্থাপনে ক্ষমতা সরাসরি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতার মাদকতা প্রায় সব ক্ষমতাসীনকে গ্রাস করে। বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া ক্ষমতার মেয়াদ প্রলম্বিত করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেউ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়েছে ইতিহাস এমন সাক্ষ্য দেয় না। সুযোগ থাকার পরও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সম্মত না হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, যাঁরা একবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, তাঁরা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চান না। ক্ষমতা একবার ভোগ করার পর তাঁর মোহ ত্যাগ করা সত্যি কষ্টকর ব্যাপার।
রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর লেনিনের সময়কাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজতান্ত্রিক আদর্শ সর্বোচ্চ প্রাধান্য পেলেও স্টালিনের সময় থেকে ক্ষমতার লড়াই বড় হয়ে দেখা দেয়। সমাজতন্ত্র কেবলমাত্র স্লোগান হিসেবে প্রাধান্য পায়। ক্ষমতা কেন্দ ীভূত রাখার স্বার্থে শাসকগোষ্ঠী জনস্বার্থবিরোধী বিশেষ করে মানবাধিকারের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। ফলে জনগণের দুর্দশা বেড়েছে, তাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে জনতার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাতে ভ্রুকুটি করেনি। শাসকগোষ্ঠী সমাজতন্ত্রকে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। একজন বড় মাপের রাজনৈতিক নেতার প্রমোদ ভিলা (ডাসা) দেখতে গিয়ে তাঁর মা মন্তব্য করেছিলেন যে, কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় এলে ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব 'ডাসা' বাজেয়াপ্ত করে নেবে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে কমিউনিস্ট নেতারা আর কমিউনিস্ট ছিলেন না। তাঁরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছিলেন, যাঁরা কমিউনিজমকে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে সমাজতন্ত্রের মূল আদর্শকে প্রকৃতপক্ষে বিতাড়িত করেছিলেন।
একইভাবে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালে এবং পাকিস্তান আমলে ধর্মীয় স্লোগানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মুসলিম লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করতে সফল প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে নেতাদের অনেকেই ধর্মীয় অনুশাসন মানতেন না। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং রীতি-নীতির অনুশীলনেও তাঁরা ছিলেন শিথিল অবস্থানে। কিন্তু ধর্মীয় স্লোগানের ধাক্কায় তারা বিরোধী দল, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানি নেতাদের কাবু করতে চাইতেন। 'ধর্মের শত্রু', 'রাষ্ট্রের শত্রু' এসব স্লোগান তখন প্রায়ই শোনা যেত। একটি বিশেষ গোষ্ঠী কর্তৃক শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ছিল এসব স্লোগান ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য। ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং একে চিরস্থায়ী করার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেও তারা সম্মত ছিল না। এই ভয়ংকর প্রবৃত্তি এবং অপকৌশলের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানি তথা বাংলাদেশিদের ওপর হিংস্রতম সশস্ত্র আক্রমণে। 'ইসলামের শত্রু' এবং 'বিধর্মী' ঘোষণা দিয়ে লাখ লাখ বাংলাদেশিকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে, মা-বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করতে তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেনি। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে ক্ষমতাসীন এবং দখলদার রাজা-বাদশাহরা যে অপকৌশল এবং হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিতেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তার কোনো ব্যতিক্রম করেনি। নীতি-আদর্শকে অবদমিত করে ক্ষমতার নিজস্ব রসায়ন এবং শক্তি সবার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে নানা রকম শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী তাদের নীতি এবং আদর্শের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল। জনগণের একাংশ সরল মনে তা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কোনো শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার রসায়ন এবং তার ক্রিয়া-পদ্ধতির ঊধর্ে্ব উঠতে পারেনি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। অনির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলো ক্ষমতায় আরোহণের পর প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াকে আইনসিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালায়। তারা তাদের শাসনের পক্ষে বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক স্লোগান প্রচার করে। সাধারণ্যে প্রচারিত এসব স্লোগানের সঙ্গে তাদের কার্যকলাপের কোনো সংগতি ছিল না। জনগণের একাংশ এসব স্লোগানকে কিছুকাল বিশ্বাস করলেও শেষ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে যোগ দেয়। আন্দোলন জয়যুক্ত হয়। স্বৈরশাসকের ক্ষমতা স্থায়ী করার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। নব্বই শতকের শুরুতেই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জনগণ স্বাভাবিকভাবে আশা করেছিল যে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত হবে। গণতান্ত্রিক শাসনের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে প্রত্যেক নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণের মুহূর্ত থেকে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে মুহূর্তে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অথবা নির্বাচনের পদ্ধতি-প্রক্রিয়াকে বিকৃত করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চিন্তা মাথায় আসবে সে মুহূর্তে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিপর্যস্ত হতে শুরু করবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী বা ক্ষমতার মেয়াদ প্রলম্বিত করার আকাঙ্ক্ষা থেকে নির্বাচিত সরকার এমন সব সিদ্ধান্ত নেবে, এমন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যা অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং চূড়ান্ত বিবেচনায় জনস্বার্থের পরিপন্থী হবে। গণতান্ত্রিক শাসনের মুখ্য উপাদান হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা, সব দল-গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপচারিতা, নিরপেক্ষ ও ন্যায়ানুগ প্রশাসন, মানবাধিকার সুরক্ষায় অনড় অবস্থান, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করা এবং জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বর্তমান যুগে গণতান্ত্রিক শাসনকে নিম্নমতে সংজ্ঞায়িত করা হয় : "These days democracy does not mean unqualified rule of the majority. Democracy now means governance by consensus, governance by participation and governance by inclusion under the leadership of the majority party. The institution of democracy has to be perennially protected by the instrument of checks and balances and that of accountability- (Husain). বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অবিমিশ্রিত একক শাসন বোঝায় না। গণতান্ত্রিক শাসন বলতে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃত্বাধীনে সবার অংশগ্রহণধর্মী শাসন বোঝায়। গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য নিরন্তর জবাবদিহিতা এবং 'চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স' নিশ্চিত করা আবশ্যকীয়।" (হুসাইন)
নব্বই এর দশকে গণতান্ত্রিক শাসন প্রচলিত হওয়ার পর শাসক দলের আচরণে এ পর্যন্ত উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয়নি। ঐকমত্য এবং সর্বদলের অংশগ্রহণকে শাসক দল কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বরং সব শাসক দল স্লোগান হিসেবে প্রচার করেছে যে জনগণ তাদের পাঁচ বছরের জন্য ম্যান্ডেট দিয়েছে। এ পাঁচ বছরে তাদের কার্যকলাপের সমালোচনা বা বিরোধিতা করা যাবে না। কেবল জনতা তথা ভোটাররা পাঁচ বছর পর তাদের কাজের মূল্যায়ন করে রায় দিতে পারবে। বক্তব্যের সুর হচ্ছে এ পাঁচ বছর 'আমাদের সরকার আমরা চালাব, যেমন খুশি তেমন চালাব।' শাসকদল তাদের ইচ্ছামতো কাজ করবে; কেউ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারবে না। সবাইকে মেনে নিতে হবে যে, 'উইনার টেকস ইট অল।' নির্বাচনে পরাজিত দল এবং তাদের সমর্থকদের সব রকম রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে সর্বতোভাবে সরিয়ে রাখা হবে। বিভক্তিকরণের এরূপ মনোভাব ধীরে ধীরে সহিংসতায় রূপ নেয়।
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারেও শাসক দলের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ করা যায়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রাথমিক শর্ত হলো যে ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে শাসক দলকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যে, অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের বিপক্ষে রায় দিলে তারা নির্বিবাদে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। প্রয়োজনবোধে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে তারা সরে দাঁড়াবে। পাকিস্তান-বাংলাদেশের ৬৬ বছরের ইতিহাসে একমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের তেমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। বরঞ্চ দেখা গেছে যে, ক্ষমতায় আরোহণের পর ক্ষমতার মেয়াদ প্রলম্বিত করার প্রতি শাসক দলের দৃষ্টি নিবদ্ধ। নীতি-নির্ধারকরা এ লক্ষ্যে বিভিন্ন স্লোগান প্রস্তুত করে তা প্রচার করতে থাকে। যে প্রতিশ্রুতি ও নীতি ঘোষণা দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছিল স্লোগানের তোড়ে তা শাসন চত্বর থেকে বিতাড়িত হয়। ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল রাজপথ দখল ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের শক্তি প্রমাণ করতে চেষ্টা করে। হিংসাত্মক রাজনীতি এক ভয়াল পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। বিগত দুই দশকের নির্বাচিত সরকারগুলোর সম্পর্কে ড. মিজানুর রহমান শেলীর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য : 'Democratic arrangements fabricated in (other) countries of Asia following fall of dictators are not also reflecting in full, the spirit and substance of democracy. Elective personal rule has taken the place of dictatorship in many of these lands. A new autocracy in the garb of democracy haunts these nations.� (Dr. Mizan R. Shelly).
গণতন্ত্রের পক্ষে বড় গলায় স্লোগান দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব যেসব ব্যক্তি দখল করে নেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূলনীতিতে বিশ্বাস করেন কি না তা আজ পর্যালোচনা করে দেখার সময় এসেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের সবাই কমিউনিজমের নিয়মনীতিতে পুরো মাত্রায় বিশ্বাস করতেন না। কমিউনিস্ট শাসন কায়েম হওয়ার পর তাঁরা প্রশাসনকে তাঁদের ইচ্ছামতো পরিচালিত করেন। উঁচু স্বরে ধর্মীয় স্লোগান তুলে যাঁরা ধর্মভিত্তিক আন্দোলন সংগঠনের নেতৃত্ব দখল করে নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ব্যক্তিজীবনে প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেন না। ধর্মের নামে রাষ্ট্র বা সংগঠন সৃষ্টি করে তাঁরা নিজেদের স্বার্থে ধর্মীয় নীতির পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। নিজ ধর্মের লোককে হত্যা করেছেন। ধর্মের প্রতি তাদের আনুগত্য বা ভক্তি ছিল না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্যের ব্যাপারেও এ সত্য উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আন্দোলন-সংগঠনের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া কোনো কোনো নেতা তাঁর সংগঠনকে এত বেশি প্রভাবিত করতে পারেন যে, পুরো সংগঠন তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে যায়। তাঁর ইচ্ছামতো কাজ করে সংগঠন মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, বিপথগামী হয়। দেশের জনগণ এবং সংগঠনের সদস্যরা আদর্শের প্রতি সক্রিয়ভাবে সতর্ক না থাকলে এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সক্রিয় সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব

No comments

Powered by Blogger.