‘আত্মসমর্পণ নয়, দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই’ by শংকর কুমার দে

আদালতে আত্মসমর্পণ করাটা হবে আত্মঘাতী। আমি দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। তোমরা কি বল?’ দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে তার পরিবারের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলেছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার।
বাচ্চু রাজাকারের দুই ছেলে আবুল কাশেম মুহাম্মাদ মুশফিক বিল্লাহ ওরফে জিহাদ (৩৫) ও শাহ মুহাম্মদ ফয়সাল আযাদ (৩৭), বাচ্চু রাজাকারের শ্যালক কাজী এহতেশামুল হক লিটনের জবানবন্দীতে এই ধরনের তথ্যের উল্লেখ করেছে। র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই ধরনের তথ্য রেকর্ড করা রয়েছে।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মানবতাবিরোধী অপরাধের ওয়ারেন্টে জারি করার পর তার ঢাকার দক্ষিণখানের বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিল তার স্ত্রী, দুই ছেলে, মেয়ে ও শ্যালক। গত ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় পালিয়ে যাওয়ার আগে ঢাকার দক্ষিণখানের বাসায় বৈঠকটি হয়। তার দুই ছেলে ও শ্যালককে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বৈঠকে তার পরিবারের সঙ্গে যে কথোপকোথন হয়েছে জবানবন্দীতে তারা উল্লেখ করেছে। পারিবারিক বৈঠকে যে কথোপকথনের রেকর্ড করা আছে তা তুলে ধরা হচ্ছে।
বাচ্চু রাজাকার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী, শ্যালকসহ আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য বৈঠকে বসে। সে তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞেস করে তার দেশে থেকে আদালতে আত্মসমর্পণ করাটা ঠিক হবে কিনা? বাচ্চু রাজাকার নিজেই আলোচনার সময়ে বলেছে, ‘আদালতে আত্মসমর্পণ করাটা হবে আত্মঘাতী। আমি দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। তোমরা কি বল? তখন সবাই একমত হয় যে, তাহলে দেশ থেকে চলে যাওয়াই ভাল। তার পর তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় দেশ থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে দক্ষিণখানের বাড়ি থেকে বের হয়ে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেয়।
বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সার্বিক সহায়তায় র‌্যাবের গোয়েন্দারা ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের দুই ছেলে আবুল কাশেম মুহাম্মাদ মুশফিক বিল্লাহ ওরফে জিহাদ (৩৫) ও শাহ মুহাম্মাদ ফয়সাল আযাদ (৩৭), বাচ্চু রাজাকারের শ্যালক কাজী এহতেশামুল হক লিটনকে আটক করে। তাদের দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী বাচ্চু রাজাকারের বন্ধু দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের ক্যাপিলা হোটেলের মালিক বাচ্চু রাজাকারের অনুসারী ও তার দোস্ত আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর পর র‌্যাব বাচ্চু রাজাকারকে পালিয়ে যেতে সর্বাত্মক সহায়তাকারী এদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলীকেও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দী ১৬১ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, বাচ্চু রাজাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তোলার পর বুঝতে পারে সে গ্রেফতার হতে পারে। গ্রেফতার হলে তার পরিণতি কি হতে পারে তাও অনুমান করতে পারে। পরিণতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তার পরিবারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ’৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে বাচ্চু রাজাকার যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বাহ্যিকভাবে প্রকাশ না করলেও তার বিবেকের আয়নায় ঘাতকের চেহারা স্পষ্টভাবে দেখার পর অনুমান করেছিল তার পরিণতি কি হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.