সিরাতুন্নবী প্রশিক্ষণ মাধ্যম by মাওলানা শাহ্ আবদুস সাত্তার

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই ধূলির ধরায় আবির্ভূত হন এবং একই তারিখে তিরোধান করেন। এই কারণেই মুসলিম বিশ্ব তথা সমগ্র মুসলিম জাহানে মানব জাতির জন্য এই মহান দিবসটি অতি পবিত্র ও তাৎপর্যবহ।
পৃথিবীর ইতিহাসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভাগমনের দৃষ্টান্ত মহাবিপ্লবের শামিল। তার আবির্ভাবে আল্লাহপাকের সার্বভৌম কর্তৃত্বের বিকাশ পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং তিনি নিখিল বিশ্বের অত্যাচার-অবিচার, জুলুম ও ফ্যাসাদের অবসান ঘটিয়ে ন্যায় ও সত্যের রাজত্ব কায়েম করে মহাশান্তির নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। পৃথিবীর সব ধর্মের প্রবক্তা এবং প্রচারকদের জীবন ও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, নিখিল বিশ্ব মানুষের সঠিক পথনির্দেশনায় আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো অন্য কোনো ধর্ম-প্রবক্তা যথার্থ আহ্বান রাখতে পারেননি। তারা নিজ নিজ সীমিত পরিসরে ধর্ম প্রচার করেছিলেন। মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তি ও কল্যাণের দিশারি রাহমাতুলি্লল আলামিনই হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যার আবির্ভাব মানবমণ্ডলীকে মহাশান্তির পথের দিশা দিয়েছিল। আল্লাহপাকের রহমত ও হজরত রাসূলে পাককে (সা.) স্মরণ করা এবং এর মাধ্যমে নবীজীবনের আদর্শ ও শিক্ষাকে নিজের জীবনে বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে সিরাতুন্নবী একটি মহাপ্রশিক্ষণ মাধ্যম। আল্লাহপাকের অশেষ শোকর আদায় এবং হজরত রাসূলে পাক (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম, শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন এবং আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের এক মোহনীয় চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে এখন থেকেই নিজেদের বিবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের মহান মাস রবিউল আউয়ালের সারা মাস কিংবা পক্ষকালব্যাপী সর্বস্তরের মানুষ উদ্যোগী হয়ে গ্রাম-মসজিদ ও মহল্লায়-মহল্লায় সিরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ-সালাম, মিলাদ, দোয়া, মোনাজাত এবং হজরত নবী করীম (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিকের ওপর ব্যাপক ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার এবং পথের মোড়ে মোড়ে মহানবী (সা.)-এর হাদিসের উদৃব্দতি সংবলিত পোস্টার, স্মরণিকা, প্রচারপত্র ও পুস্তিকা প্রকাশ, হামদ ও নাত-ই-রাসূল প্রতিযোগিতা এবং সব ধরনের অশালীন-অশ্লীল গান-বাজনা পরিহার করে বেতার-টিভিতে নবী করীম (সা.)-এর জীবনের ওপর ভিত্তি করে ব্যাপক অনুষ্ঠান এবং তার সুমহান বাণী, দরুদ-সালাম ও নাত-ই-রাসূল ঘন ঘন পরিবেশন, জাতীয় সংবাদপত্রগুলোয় মহানবী (সা.)-এর বিভিন্ন দিকের ওপর নিবন্ধ প্রকাশ করে রবিউল আউয়াল মাসটি আরও ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত করা একান্ত আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি, পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ এবং সব ধরনের অনৈসলামিক কার্যকলাপ থেকে বিরত হয়ে খাঁটি উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে যেন আমরা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি এই রবিউল আউয়ালে। শুধু তাই নয়, সারাবছরই যেন এমনিভাবে যথাযথভাবে সিরাতুন্নবী পালন করতে পারি। সুতরাং আসুন, আল্লাহর পেয়ারা নবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা রেখে তার নীতি, শিক্ষা তথা আল্লাহপাকের বিধানগুলো ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার প্রশিক্ষণে সর্বতোভাবে সচেষ্ট হই।

No comments

Powered by Blogger.