টমি হিলফিগার by তৌফিক অপু

বিশ্বের তাবত ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে একটু ব্যতিক্রমী বলা যেতে পারে জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার টমি হিলফিগার। ছোটবেলা থেকেই বেশ ছটফটে এবং জেদি স্বভাবের ছিলেন হিলফিগার।
১৯৫১ সালের ২৪ মার্চ নিউইয়র্কের এলমাইরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাবা-মার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর। সে কারণে ফ্রি একাডেমী অব হাইস্কুলের মতো নামী স্কুলে পড়ালেখা করান। কিন্তু গৎ বাঁধা পড়াতে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না হিলফিগার। তাঁর এটা সেটা করার প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি। যার কারণে ১৮ বছর বয়সেই নেমে পড়েন কাজের সন্ধানে। পেয়েও যান একটি চাকরি। এলমাইরা শহরের একটি শপিং মলের পারচেজার হিসেবে নিউইয়র্ক শহর থেকে জিন্স এবং বেলবটম প্যান্ট পাইকারি দরে কিনে এনে সাজাতেন সেই দোকানে। এভাবেই বেশ কিছুদিন চাকরি করার পর সিদ্ধানত্ম নেন নিজেই একটি শো-রম্নম দেয়ার। সে অনুযায়ী এলমাইরা শহরে ডাউন টাউন বস্নকে পিপল পেস্নস নামে একটি শো-রম্নম প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এলমাইরা শহরের অধিকাংশ লোক শপিং মলকেন্দ্রিক কেনাকাটায় অভ্যসত্ম। এছাড়া শপিং মল আওতাভুক্ত না এমন দোকানগুলোকে ট্রাফিক শিফ্ট মেনে দোকান পরিচালনা করতে হতো। সে করণে পিপল পেস্নস আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। সাত বছর ধরে টেনেটুনে ব্যবসা পরিচালনা করতে করতে অনেক দেনার দায়ে অভিযুক্ত হন হিলফিগার। এক পর্যায়ে পিপল পেস্নসকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। তবে ব্যবসায়িক এই ক' বছরের অভিজ্ঞতায় কাপড়ের খুঁটিনাটি বিষয়ে সিদ্ধহসত্ম হন তিনি। বিশেষ করে কাপড়ের ডিজাইনিংয়ে নিজে নিজেই স্কেচ করে নিত্যনতুন ডিজাইন তৈরি করতেন। কিন্তু ডিজাইনগুলো কখনও ইমপিস্নমেন্ট করার সুযোগ পাননি। ব্যবসায়িক ভরাডুবি থেকে উঠে দাঁড়ানোর অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন ফ্যাশন ডিজাইনকে। সুযোগও এসে যায় হাতের কাছে। বিখ্যাত ব্রান্ড ক্যালভিন কেইন-এর এ্যাসিসট্যান্স ডিজাইনার হিসেবে চাকরি পেয়ে যান। কিন্তু সেখানেও মন পুরোপুরি সায় দিচ্ছিল না। নিজে নিজেই কিছু করার তাগিদে ১৯৮৪ সালে টমি হিলফিগার কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া এই ক' বছরে তাঁর ডিজাইনকৃত বেশ কিছু পোশাক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সেই ভরসাতেই তিনি এই প্রতিষ্ঠান চালু করেন। মেন্স ওয়্যার প্রোডাক্ট নিয়ে যাত্রা শুরম্ন হয় কোম্পানির। এ সময় তাকে মারজানি গ্রম্নপ ভীষণভাবে সাহায্য করে থাকে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টমি হিল ফাইজারের প্রোডাক্ট ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৯২ সালে কোম্পানিটি পাবলিক কোম্পানি হিসেবে রূপানত্মরিত হয়। দ্রম্নত গতিতে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো ফ্যাশন জগতে। এরই সুবাদে ১৯৯৭ সালে কাউন্সিল অব ফ্যাশন ডিজাইনার অব আমেরিকা দ্বারা শ্রেষ্ঠ মেন্স ওয়্যার ফ্যাশন ডিজাইনারের স্বীকৃতি পান টমি হিলফিগার। দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে প্রতিষ্ঠানের পরিসর। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫,৪০০ জন এবং বার্ষিক মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশের বাইরে প্রথম ফ্যাশন শো'র আয়োজন করেন ১৯৯৮ সালে জামাইকায়। নিয়মিত ফ্যাশন শো'র সুবাদে তাঁর ডিজাইনকৃত মেন্স ওয়্যার বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। মেন্স ওয়্যার-এর সফলতা তাঁকে ওম্যান্স ওয়্যারের দিকেও আকৃষ্ট করে। এখানেও তিনি সমভাবে সফলতা অর্জন করেন। এ বছরের ১৮ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ফ্যাশন উইক অব টমি হিলফিগার। এখানে স্প্রিং-এর পোশাক প্রাধান্য পায়। প্রোডাক্ট লাইনের মধ্যে ছিল হিলফিগার ডেনিম, ট্রু স্টারমেন, ট্রু স্টার গোল্ড, টমি গার্ল, রেড লেভেল। প্রতিটি প্রোডাক্টই দর্শক ও সমালোচকদের নজর কাড়ে। যুগের হাওয়া এবং ঋতু বৈচিত্র্যের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে এক অনন্য দৃষ্টানত্ম টমি হিলফিগার। যদিও তাঁর প্রকৃত নাম টমাস হিলফিগার টমি নামেই সারাবিশ্বে সমাদৃত।

No comments

Powered by Blogger.