ফুল দেব না ... by শামীম আহসান

বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা প্রবন্ধকার প্রমথ চৌধুরী ভরা বর্ষার এক মেঘমেদুর বরিষারে লিখতে গিয়ে বর্ষার সৌন্দর্য অবলোকনের মুগ্ধতায় বলেছেন, "এমনি দিনে কি লিখতে মন চায়?" তাঁর মতো মহীরুহসম সাহিত্যিকের কাছে লেখার উপকরণের কোন অভাব থাকার কথা নয় এবং মসী ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি সহজেই ফুটিয়ে তুলতে পারতেন নিজ আবেগ-অনুভূতি।
লিখবেন কি লিখবেন না তা নির্ভর করত তাঁর তাৎণিক মন-মানসিকতা ও মেজাজ-মর্জির ওপর। পান্তরে আমার মতো ুদ্রাতিুদ্র অধমের চারদিকে প্রায়শই লেখার এত উপকরণ থাকা সত্ত্বেও লিখতে গেলে লেখনী স্থবির হয়ে যায়। তবে মাঝে মাঝে পরিস্থিতি যখন নাটকীয় মোড় নেয় এবং আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমন বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে হাজির হন তখন লেখাটা কিছুটা হলেও সহজ হয়। এমনকি আমার মতো নাখান্দা বান্দাও লেখার দুঃসাহস দেখায়। এমনি পরিস্থিতির অবতারণা করেছেন সম্প্রতি আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে 'আপোসহীন নেত্রী' পরিচিত বিরোধী দলীয় নেত্রী। সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপল েআয়োজিত ছাত্র সমাবেশে তিনি জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনটির নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তুলতে চাইলেন। বরাবরের মতোই তাঁর বক্তব্য ছিল প্রায় অন্তঃসারশূন্য এবং দিকনির্দেশনাবিহীন। তাঁর ছাত্র সংগঠনটির পথচলার অঙ্গীকার কি হবে, কিই-বা হবে এগিয়ে চলার নিশানা তার কোন উল্লেখ ছিল না তাঁর বক্তব্যে। তাঁর স্বসারগর্ভহীন বক্তব্যে ছিল সরকারের প্রতি একরাশ বিষোদ্গার। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে নিয়ে তাঁর আশঙ্কার কথাও ব্যক্ত হয়েছে এই বক্তব্যে এবং সফরের ফলাফল অর্জনের আগেই অর্জনহীনতার ভবিষ্যদ্বাণী প্রায় করে ফেলেছেন তিনি। দৈববলে তিনি যেন দেখে ফেলেছেন যে, এই সফরে দু'দেশের মাঝে বিরাজমান সমস্যার সমাধান হবে দূরঅস্ত। তবে যদি গ্রহণযোগ্য সমাধান অর্জন সম্ভব হয় তবে সেটা তাঁর জন্য নিদারুণ হতাশাব্যঞ্জক হবে বলে অনুমিত। দ্বিপাকি সমস্যাসমূহের গ্রহণযোগ্য সমাধান যে তাঁর গাত্রদাহের কারণ, এ সমস্যাসমূহের সমাধান হলে তিনি কি নিয়ে রাজনীতি করবেন? প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে দ্বিপাকি স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং ভারতকে সম্পূর্ণ পযর্ুদস্ত করে আমরা সব আদায় করে নেব এমনটি ভাবা হবে বাতুলতা মাত্র। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তা কখনই হয় না। যেটা হয় সেটা হচ্ছে পরস্পরের মাঝে ছাড় দেয়া এবং ছাড় নেয়া। কিন্তু বেগম জিয়ার বক্তব্যে বুঝা গেল তিনি এক চুল ছাড় না দিয়ে সব আদায় করাতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে। তাঁকে কি সবিনয়ে প্রশ্ন করা যায় না যে, আপনার এবং আপনার দলের বিগত শাসনামলগুলোতে আপনারা কী অর্জন করেছিলেন? মনে পড়ে, আপনি গঙ্গার পানি বণ্টনের মতো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আলোচনা করতে 'ভুলে গিয়েছিলেন'? সেই আত্মভোলা আপনি আজ হুঙ্কার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখবেন বলে! ছেলেবেলায় পড়েছি 'বুড়ি নবীর পথে কাঁটা ছড়াইয়া রাখিতো, নবীর পায়ে কাঁটা ফুটিতো এবং বুড়ি দূরে দাঁড়াইয়া খিলখিল করিয়া হাসিতো'। পরবর্তীতে বুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাকে শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী, আপনি শিা গ্রহণ করলেন দুষ্ট বুড়ির কাছ থেকে, মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতা থেকে নয়! মনে রাখবেন, আবু লাহাবের স্ত্রী যেই কাঁটার ঝুলি বহন করেছিল নবী (সা.)-এর পথ কন্টকাকীর্ণ করতে, সেই কাঁটার বোঝাই তার গলার ফাঁস হয়ে তার মৃতু্য ঘটায়।
প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে আপোস না করে অহিনকুল সম্পর্ক বজায় রাখার চানক্য নীতিতে বেগম জিয়া বিশ্বাসী তা জানতাম না। তবে বাস্তবতা নিরীণে প্রতীয়মান যে, বেগম জিয়া অতীতে ভারতের সঙ্গে যতটা অনাবশ্যক, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্তি আপোসমূলক মনোভাব দেখিয়েছেন অন্য কোন সরকারপ্রধান তা করেননি। তা সত্ত্বেও তিনি নাকি 'আপোসহীন নেত্রী'। কী বিচিত্র! আমি মদ না খেয়েও শরাবী, আর তুমি পূজা না করেও পূজারী!
বস্তুত 'আপোসহীন' নামালঙ্কার তিনি অর্জন করতে পেরেছিলেন ৮০'র দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা শেখ হাসিনার সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হয়ে। আন্দোলনের স্ট্র্যাটেজি বা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে দুই নেত্রীর '৮৬-এর সংসদ নির্বাচনে যুগপৎভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ, যিনি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি প্রয়োগ করে তদাবধি নির্বিঘ্নে মসনদে বসে মতার স্বাদ আস্বাদনে মগ্ন ছিলেন তাঁর জন্য দেশের দুই প্রধান দলের এহেন কৌশল অশনি সঙ্কেত বয়ে এনেছিল। দুই দলের গৃহিত যৌথ সিদ্ধান্ত অস্বীকার করে এক নেত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়া থেকে সরে এলেন, আর অপর নেত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বুঝলেন তিনি কোন ফাঁদে পা দিয়েছেন। একে গাছে তুলে মই কেড়ে নেয়া বললে কম বলা হবে, এ যেন চাঁদে পাঠিয়ে রকেট কেড়ে নেয়ার মতো। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যখন প্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে ধাবমান হচ্ছিল তখন এক নেত্রীর এই পিঠটানের উদ্দেশ্য-বিধেয় কি ছিল সে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। হতে পারে তিনি শাসককুলের নির্দেশনায় বা মন্ত্রণায় (লোকে বলে ভাই-ভাবি সম্পর্কের তারণায়) এ কাজ করেছিলেন অথবা প্রতিশ্রুত কোন প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। অথচ আজ তিনি আপোসহীন সর্বেেত্র_ কখনও নির্বাচনে না অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে (অবশ্যই পরাজয়ের আশঙ্কায়) তিনি আপোসহীন, আবার কখনও বেতন-ভাতা গ্রহণ করে জাতীয় সংসদে অংশগ্রহণ না করে, জনগণের কথা না বলে, সংসদ বর্জনের সিদ্ধান্তে তিনি আপোসহীন। আপোসহীনতার নেশায় বুঁদ হয়ে অধুনা তিনি সত্যের পথে, সুশাসনের প,ে এমনকি প্রগতি, সমৃদ্ধি এবং সামাজিক শান্তি-শৃংক্মখলা বজায় রাখার প েঅবস্থান না নিতেও আপোসহীন নেত্রী। আঞ্চলিক সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিরুদ্ধে আপোসহীন অবস্থান নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের বাহবা কুড়াচ্ছেন। সেই মধ্যযুগে ইউরোপে করণর্টহ মত ঘণর্্রযদটফধট স্বারিত হবার পর ইউরোপের বিখ্যাত কদধর্রহ চণটর ঘটর-এর সমাপ্তি টানা হয়নি শুধু, একই সঙ্গে জাতিরাষ্ট্রসমূহ পরস্পর পরস্পরের অনেক কাছে চলে এসেছে। আর আধুনিক ঐফমঠটফ গধফফটথণ-এ বসবাস করে আমাদের 'আপোসহীন নেত্রী' আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিভেদ ও সংঘাতের পথ খুঁজছেন।
স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরেই আমাদের সংবিধান রচিত হয়, যার আলোকে পররাষ্ট্র নীতির দিকনির্দেশনা রচিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, 'এরধণভঢ্রদধযর্ ম টফফ বটফধডণর্ ম ভমভণ' বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় এই মূল নীতি মেনে চলেছিলেন অরে অরে। অনেক মহলের ভ্রুকুটি উপো করে ১৯৭৪ সালে লাহোরে তিনি ওআইসি মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাংলার মাটিতে অবস্থানের মেয়াদ তিনি দীর্ঘায়িত হতে দেননি। আমার বিশ্বাস, ইন্দিরা গান্ধীও এতে দ্রুত তাঁর সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেননি। জাতীয় স্বার্থ এবং অহংবোধ বিসর্জন না দিয়েও তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করেন। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ আল সৌদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাাতকালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে পূর্ব শর্ত হিসাবে এদেশের নামের সঙ্গে 'ইসলামিক রিপাবলিক' যুক্ত করার প্রস্তাবনা উত্থাপন করলে তেজস্বী বঙ্গবন্ধু বাদশাহকে পাল্টা প্রশ্ন করেন : "ঔধ্র বটনণর্্রহ, ষদহর্ দণ ভটবণ মত হমলর ডমলর্ভরহ ধ্র ধিভথঢমব মত ওটলঢধ ইরটঠধট, ষদহ ভর্ম কদণ অ্রফটবধড ৗণযলঠফধড মত ওটলঢধ ইরটঠধট?" মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনতান্ত্রিক বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নে তখন তিনি ব্রতী হন জাতীয় মূল্যবোধ এবং জাত্যভিমান সমুন্নত রেখে। জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয় অহংবোধের এই ধারা তিনি তাঁর দল, অনুসারী এবং উত্তরসূরিদের মাঝে গ্রথিত করে গেছেন।
আগস্ট ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় মতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে। প্রথম মেয়াদে পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং ভারতের সঙ্গে ফারাক্কার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদন করে জাতীয় স্বার্থ সাফল্যভাবে সংরণ করেছিল। অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে এক সময় অনাকাঙ্তিভাবে জড়িয়ে পড়েছিল এবং ফারাক্কার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে চরম দুর্বিপাকে ফেলে দেয়। কিন্তু জিয়া-এরশাদ-খালেদার সরকারগুলো যেন এহেন রাষ্ট্রীয় দুর্যোগকে পরম পাওয়া, চরম পরিতৃপ্তি বিবেচনা করে ভারতকে এবং প্রতিপ রাজনৈতিক দলকে গালমন্দ করতেই শুধু ব্রতী হয়, সমস্যার সমাধান নয়। তাদের মেয়াদকালে অনাবশ্যক আস্ফালন হয়েছে, হয়নি দ্বিপাকি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। ফলশ্রুতিতে রক্তে ভিজে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর শুষ্কপ্রায় হয়ে গেছে দেশের খাল-বিল, নদী-নালা। সঙ্কীর্ণ স্বার্থে তৎকালীন সরকারসমূহ ছায়াশত্রু তৈরি করে ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের েেত্র স্থায়ী শত্রু বা মিত্র বলে আজ আর কিছু নেই। শত্রুর সঙ্গে দাঁতাত (ঊর্ণণর্ভণ) এবং মিত্রের সঙ্গে অাঁতাত (ঋর্ভণর্ভণ) স্থাপন সমসাময়িক বিশ্বের একটি অত্যাবশ্যকীয় কৌশল। বিগত বিএনপি সরকারসমূহ এর কোনটিতে না গিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল রাখার প্রয়াস চালিয়েছে। অবশ্য সূক্ষ্ম অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে দেখতে গেলে পরিস্ফুট হয়ে পড়ে গোপন সত্যটি যে, তাঁরা মুখে ভারতবিরোধী জিকির তুলে ময়দান উত্তপ্ত করলেও সংগোপনে ভারত তোষণ নীতিই অনুসরণ করত। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বাদ-বিসংবাদে না গিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব সম্ভবত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি ওইইৗউ (পরবতর্ীতে ওইৗউ) গঠনে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরি বেগম খালেদা জিয়ার মাঝে সেরূপ দূরদৃষ্টির লেশমাত্র রয়েছে কিনা এ বিষয়ে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করলে অবাক হবার কিছু নেই।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের েেত্র আমাদের কৌশলগত অবস্থান (র্ওরর্টণথহ)-এর কি কি বিকল্প পন্থা রয়েছে ভেবে দেখা যাক। প্রথমত আমরা দ্বিপাকি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিরোধপূর্ণ অবস্থান নিতে পারি। কিন্তু সে েেত্র আমাদের পরবতর্ী পদপে কি হতে পারে? আমরা নিশ্চয়ই চাপ প্রয়োগ করে স্বার্থ উদ্ধার করার মতো প্রয়োজনীয় মতার অধিকারী নই। আন্তর্জাতিক পরাশক্তির পর্যায়ে প্রায় উন্নীত ভারতের সঙ্গে সংঘাতময় ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার মতো কোন সামর্থ আমাদের নেই বা অদূর ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনাও দৃশ্যমান নয় আপাতত। দ্বিতীয়ত গঙ্গা এবং অপরাপর নদীর পানি ভারত কর্তৃক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির মতো অন্যান্য বিরোধপূর্ণ বিষয় আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়ে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারি। এই েেত্র সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের স্বপ েযাবে এমনটি ভাববার যথেষ্ট কারণ আছে কি? জাতিসংঘ বা বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র দূরে থাক আমরা যাকে পরম মিত্র ভাবি সেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনও কি এই ইসু্যতে আমাদের পাবলম্বন করে ভারতের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে? অথবা আমাদের ভ্রান্তিপূর্ণ আস্থার প্রতীক তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ কি ভারতকে ইসলামের শত্রু ঠাওরে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে? তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভারত ওৎপ্রতভাবে জড়িত। দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত হলেও সত্য যে ধনাঢ্য শেখগণ বিনোদনের জন্য মুম্বাইকেই বেছে নেন এবং এই শেখকুলের অধিকাংশই সে দেশের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী (রেণ্র্রলরণ থরমলয) হিসাবে কাজ করে থাকে। ভারত মধ্যপ্রাচ্যে স্কিল্ড এবং ননস্কিল্ড উভয় প্রকারের জনশক্তি দিয়ে সেখানে প্রাধান্য বিস্তার করে সে দেশগুলোর জনগণকে অনেকাংশে ভারত মুখাপেী করে ফেলেছে। পান্তরে আমাদের অবস্থান কোথায়? মুসলিম ব্রাদারেনগণ প্রবাসী বাংলাদেশীগণকে প্রায়শই অসম্মানজনক অভিধায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। পাকিস্তানের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অতি মিত্র দেশও কাশ্মীর প্রশ্নে তাদের মুখ থেকে ভারতবিরোধী বক্তব্য বের করতে অসমর্থ। ইয়াসির আরাফাততো একবার ভারত সফরে এসে কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে রায় দিয়েই গেলেন। সুতরাং ুল্রফধব ঠমর্রদণরদমমঢ-এর কথা তারা যতই বলুন, 'আমি তার ছলনায় ভুলব না, কাজ নেই আর আমার...'। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফোরামে গেলে আমাদেরকে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর নির্ভর করতে হবে। অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, আন্তর্জাতিক আইনকে আইন বলে বিবেচনা করা যায় না। কারণ আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একটি সার্বভৌম শক্তির অনুমোদন।
দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি কেমন_ এ প্রশ্নের উত্তরে কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক বলবে যে, দেশে এমন অনাবিল শান্তি-শৃক্মখলা বজায় রয়েছে এবং উন্নয়নের ঢেউয়ে বেলাভূমি উদ্বেলিত। পান্তরে জানবাজ বিএনপি সমর্থক চিত্রিত করতে চাইবে সম্পূর্ণ বিপরীত চাল-চিত্র। একজন নিরপে পর্যবেক হিসাবে আমি মনে করি এক বছর বয়সী বর্তমান সরকারের রয়েছে কিছু সফলতা আর কিছু ছোটখাটো ব্যর্থতা। রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় কোন ইসু্য নেই, যাকে উপজীব্য করে চিন্তা-ভাবনা ও লেখালেখি করা যেতে পারে। এমনি নিস্তরঙ্গ পরিবেশে বেগম জিয়ার 'ফুল দেব না কাঁটা দেব' প্রস্তাবনাটি আমাকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ভাববার ও লেখার এক সুযোগ দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.