কুটুমবাড়ির নিমন্ত্রণ

কুটুমবাড়ি ০ কিলোমিটার! লেখাটি ঢাকার লালমাটিয়ার এফ ব্লকের রাস্তার মাইলফলকে লেখা। নতুন যারা ঐ রাস্তায় যাবেন তারা হয়তো অবাক হবেন। যান্ত্রিক শহরে রীতিমতো আহ্বান দিয়ে কুটুমবাড়িতে যাওয়ার নিমন্ত্রণ! এ আমন্ত্রণ এড়িয়ে যাবেন নাকি ভিতরে ঢুকে কুটুমদের আপ্যায়ন গ্রহণ করবেন সেটা আপনার ব্যাপার।
তবে আপনার অবগতির জন্য বলে রাখি, এই কুটুমবাড়িতে কিন্তু সবার নিমন্ত্রণ সবসময়ের জন্য। গেলে আন্তরিকতা তো পাবেনই, পাবেন মনোমুগ্ধকর আতিথেয়তা। যা এই শহরে বিরল। ২০০৮ সালে ২/১২ নম্বর বাড়িতে যাত্রা শুরু করেছে কুটুমবাড়ি। আদতে রেস্টুরেন্ট বলতে যা বোঝায় সেই চিন্তাধারা পাল্টে দিতেই কুটুমবাড়ির যাত্রা। শুধু খাওয়া-দাওয়ার জন্য এই শহরে অনেক রেস্টুরেন্টই রয়েছে। কিন্তু আন্তরিকতা, ভিন্নতা, ঐতিহ্য এবং পূর্ণ আতিথেয়তা বলতে যা বোঝায় তা পাওয়া যাবে কুটুমবাড়িতে। খোলামেলা আর নিরিবিলি বলে ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয় নাম এই কুটুমবাড়ি।
রেস্তরাঁ পরিচালক শরীফ সাব্বির বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ ক্রেতা তরুণ-তরুণী। আর আমাদের রেস্তরাঁর জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে ইরানী বিরিয়ানি, ইরানী মোরগ-পোলাও, তেহরানী তেহারি বেশি জনপ্রিয়। এই সব খাবারে ব্যবহৃত সব মসলাও আসে ইরান থেকে। তাছাড়া সামুদ্রিক মাছের তৈরি বিভিন্ন খাবার অনেকেই পছন্দ করেন।’ খেতে আসা এক তরুণ বলেন, ‘এখানে খাবারের মান সত্যিই ভাল এবং পরিবেশটা বেশ আপন মনে হয়।’ ক্রেতাদের নানা বিষয়ে সচেতন করতেও কুটুমবাড়ির উদ্যোগ আছে।
রেস্তরাঁয় বসার পর দেখবেন এক পাশে খাবারের মেন্যু, অন্য পাশে আছে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কথা। যানজট থেকে শুরু করে নদী বাঁচাও আন্দোলন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাবেন আগত অতিথিরা। খাবারের ফরমায়েশ দেয়ার পর খাবার চলে আসবে মাটির তৈরি বাসনে। একবার ব্যবহার করার পর এগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে রেস্তরাঁটি। পার্টি আয়োজন করতে চাইলে আগেভাগে বুকিং দিতে পারেন। ১৬০ থেকে ২০০ জনের আয়োজন করে দেবে তারা। দোতলা রেস্তরাঁর ওপর-নিচ দুই স্থানেই চোখে পড়বে নানা ধরনের নতুনত্ব। বাঁশের বেড়ায় টাঙানো দেশী-বিদেশী নানা গুণী ব্যক্তির ছবি। আছে তিতুমীর থেকে শুরু করে রবিশংকর, হুমায়ূন আহমেদ, তারেক মাসুদসহ অনেকের ছবি।
এতক্ষণ তো শুনলেন রেস্তরাঁর বিভিন্ন বর্ণনা। ভোজনরসিকরা নিশ্চয়ই খাবারের তালিকা জানতে চাইছেন! কি খাবেন এখানে? সকালে পাবেন নানরুটি, পরটা, লাবড়া সবজি, দই-চিড়া ও আলুর দম।
দুপুর বা রাতে পাবেন হরেক পদ। বাসমতি চালের স্টিম রাইস ৫০ টাকা, আচারি গরুর মাংস ১০০ টাকা, মুরগির মাংস ৮০ টাকা, গরুর কড়াই গোশত ১৩০ টাকা। আর মুরগি ১০০ টাকা, সামুদ্রিক মাছ চিলি ১৫০ টাকা, মুরগির ঝাল ফ্রাই ১২০ টাকা, মুরগির টিক্কা ১৪০ টাকা, বারবিকিউ মুরগি ১২৫ টাকা, গরুর শিক কাবাব ৮০ টাকা, গরুর বটি কাবাব ১২০ টাকা, মুরগির রেশমি কাবাব ১৫০ টাকা। এছাড়া ইরানী বিরিয়ানি ১৪০ টাকা, ইরানী মোরগ পোলাও ১৬০ টাকা, দিল্লিকা খিচুড়ি ১৪০ টাকা, তেহরানী তেহারি ১৪০ টাকা। আরও পাবেন নানারকম সমুচা, ¯িপ্রং রোল, শামি কাবাব, কাটলেট, বিভিন্ন বার্গার, স্যান্ডউইচ, শর্মা ও দোসা। আছে ছোলা বাটোরা, দই ফুচকা, সাসলিক ইত্যাদি খাবারও। আছে নানা ধরনের চীনা পদও। খাবার শেষে কফির কাপে চুমুক দিয়ে আনতে পারেন পরিপূর্ণতা। আর আড্ডা! সে তো এখানে চালাতে পারেন অবিরাম। কুটুমবাড়ি বলে কথা।
অপর্ণ রুবেল

No comments

Powered by Blogger.