ধান চাষে অনাগ্রহ- ফসল বৈচিত্র্যেও চাই মহাপরিকল্পনা

ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ধানের ক্ষেতে সবজি চাষ করছে কৃষক_ কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা কেবল চট্টগ্রাম অঞ্চলেই দেখা যাচ্ছে না, এমন ধারণা করা যায়।
বুধবারের সমকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উদ্ধৃত ওই অঞ্চলের পাঁচ জেলা_ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের কৃষি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সেখানে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কমেছে। অন্যদিকে সবজি চাষ বেড়েছে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দেশের অন্যান্য অংশেও মিলতে পারে একই ধরনের চিত্র। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে অবিলম্বে জাতীয় সমীক্ষা দরকার। চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকের স্বাধীনতা সমর্থন করবে সবাই। একই সঙ্গে এও মনে রাখতে হবে, প্রধান খাদ্যশস্য ধানের উৎপাদন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সমীক্ষার প্রয়োজন সেখানেই। তাতে করে পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে। এর মানে আইন করে ধান চাষে বাধ্য করার অবকাশ নেই। সম্ভবও নয়।
ধান চাষে যদি কৃষকের একরপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা লোকসান হয় এবং সবজি চাষ করে উৎপাদন খরচের দ্বিগুণ উঠে আসে, তাহলে কৃষক লাভের দিকে ঝুঁকবে না কেন? আমরা মনে করি, ধান চাষে যাতে কৃষকের লোকসান না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া সময়ের দাবি। কারণ, চাষাবাদ বৈচিত্র্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের হাতে এখন অনেক সুযোগ। এখন আর 'বাংলার চাষি, মুখে নাই হাসি'র যুগ নেই। বড় কথা, কোন অঞ্চলে কী চাষাবাদ হবে, কোন ফসলে কী মাত্রায় লাভ হতে পারে_ এ ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমরা জানি, সেচ সুবিধা বিবেচনায় বর্তমান সরকার বোরোর বদলে আমন ধানের জাতবৈচিত্র্য ও ফলন বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। একই সঙ্গে ফসল বৈচিত্র্যের বিষয়টিও মাথায় থাকুক। প্রণীত হোক চাষাবাদের নতুন মানচিত্র ও মহাপরিকল্পনা।

No comments

Powered by Blogger.