প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন- গণতন্ত্রের পথেই অগ্রযাত্রা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার তার কার্যালয়ে সাম্প্রতিক রাশিয়া সফর নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অনেক বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
রাশিয়া সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, অস্ত্র ক্রয় চুক্তিসহ দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন তিনি। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন ধরনের ব্যবস্থাধীনে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আর অস্ত্র চুক্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন এলেও আমাদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন জাতিসংঘ মিশনে মর্যাদাপূর্ণ প্রথম আসনটি অর্জন করতে সক্ষম হওয়ায় তাদের অস্ত্রের চাহিদাও বেড়েছে। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অস্ত্র আমদানি-সংক্রান্ত চুক্তি বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর এবং এগুলো জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখেই করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেছেন, এটা কোনো কৌশলগত চুক্তি নয়। এর ফলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সহায়তাকারী ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বিভিন্নভাবে সাহায্যকারী বন্ধু দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে। এটা অবশ্যই আশা এবং আনন্দের কথা। প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। পদ্মা সেতু প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী তার পুরনো দৃঢ় মনোভাবই আবার ব্যক্ত করেছেন। চলতি মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিলে তার সরকার বিকল্প অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শুরু করবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আশা করব, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন শুরু করবে। সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যকার টানাপড়েন দূর হোক_ এটা দেশবাসীরও প্রত্যাশা। বিশ্বব্যাংকও জানে, একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কোনো না কোনোভাবে পালন করতেই হয়। না হলে পরবর্তী নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক এগিয়ে না এলে সরকারের বিকল্প অর্থায়ন আহ্বান করাটা অযৌক্তিক হবে না। তবে সে অর্থায়ন যাতে দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করে, সে বিষয়টিও দেখতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। অতীতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বললেও এবার বলেছেন, সংসদীয় রীতি মেনে নির্বাচন হবে। এতে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকুও আর থাকবে কি! সংসদীয় রীতি অনুযায়ী যদি নির্বাচন হয় আর তাতে যদি প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করে, সে নির্বাচন কি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্যতা পাবে এমন সংশয় থেকেই যায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল ও টেকসই করার স্বার্থেই সরকার ও বিরোধী দলের এ ব্যাপারে নমনীয় অবস্থানে আসা উচিত বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.