আজ সারাদেশে ১৪ দলের মানববন্ধন

 একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবিতে এবং বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ রাজধানীসহ সারাদেশে এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে মানববন্ধনের মাধ্যমে দেশজুড়ে মানবপ্রাচীর গড়ে তুলতে চায় ১৪ দল। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার খুলনায় রাজনৈতিক কর্মসূচী থাকার কারণে খুলনা,
বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলা এই কর্মসূচীর আওতামুক্ত থাকবে।
ঢাকা মহানগরীর মানববন্ধনের রুটগুলো হলোÑ গাবতলী থেকে শ্যামলী, আসাদ গেট, ধানম-ি ২৭ নম্বর, রাসেল স্কয়ার, গ্রীন রোড, পান্থপথ, বসুন্ধরা, সোনারগাঁও হোটেল, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, নূর হোসেন চত্বর, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, গুলিস্তান পার্ক, ইত্তেফাক, রাজধানী মার্কেট, সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত। এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় ও মহানগর ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত নিম্নোক্ত ১৩ স্থানে উপস্থিত থাকবেন।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মানববন্ধন কর্মসূচীতে ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সংস্কৃতিসেবী, শ্রমিক, কৃষক, নারী, ছাত্র, যুবক, তরুণ সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যাপকভাবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মানববন্ধন কর্মসূচী উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ১৪ দলীয় নেতারা। বুধবার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ উপলক্ষে ১৪ দলের মহানগর ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি এবং কে কোন এলাকায় থাকবে সেসব বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।
১৪ দল আয়োজিত আজকের মানববন্ধন পূর্বপ্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রথম রায়ে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শোকে পাথর হয়ে গেছেন। শত চেষ্টা করেও তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারেননি। তিনি বলেন, একজনের মাত্র বিচার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব রাজাকারের বিচার হবে। একজন রাজাকার অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত এ বিচার অব্যাহত থাকবে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে এবং বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যেই এ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, সাম্যবাদী দলের আবু হাসেম সাহাবুদ্দিন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম প্রমুখ।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের আত্মাকে আশ্বস্ত করতে চাই, সরকার আইনের মাধ্যমে রাজাকারদের কবর দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবার বিচার হবে। তিনি বলে, তাড়াহুড়া করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়নি। বিচার বিভাগ কারও অঙ্গুলি নির্দেশে কিংবা কারও ইশারায় এ বিচারের রায় দেয়নি। ক্যাঙ্গারু কোর্ট কিংবা সামরিক আদালতের মাধ্যমে এ বিচার হচ্ছে না। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপিই একমাত্র দল যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কে অভিনন্দন জানাতে পারেনি। বিএনপি এ কাজে বিস্মিত হয়েছি। তাদের নীরবতাই জাতির কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা একাত্তরের ঘাতকদের চেয়ে খারাপ। ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জনগণ মেনে নেবে না’ মর্মে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের বক্তব্যের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধও ছিল একটা রাজনীতি। সে রাজনীতি ছিল জনগণের অধিকার আদায় ও শোষণ থেকে মুক্তি পেতে। বাংলার মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ৯ মাস যুদ্ধ করেছে। এ বিচার জনগণের রাজনৈতিক এজেন্ডা।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জনগণের দাবি। এ বিচার বিএনপি মানবে কি মানবে না সেটা জনগণ দেখতে চায় না। জনগণ বিএনপির ভাবনা নিয়ে ভাবতেও না। জনগণ চায় বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করা হোক। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট হত্যাকা- উদীচী হত্যাকা-সহ দেশে সব হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
এর আগে একই স্থানে একই উদ্দেশ্যে ঢাকা মহানগর ১৪ দলের বর্ধিত সভায় অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বীরবিক্রম সভাপতিত্ব করেন। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ মহানগর ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.