থাই রাজকন্যার সফর- সড়ক দুর্ঘটনায় কূটনীতিক নিহত

টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় থাই কূটনীতিক পানি্ন নিকানাজুলের মর্মানত্মিক মৃত্যু হয়েছে। থাই রাজকুমারী মহাচাক্রী শিরিনধর্নের বহরের একটি গাড়ি বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মিজর্াপুরে দুর্ঘটনায় পড়লে দূতাবাসের কাউন্সিলর মিস পানি গুরম্নতর আহত হন।
বিকেলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তবে রাজকুমারী অত রয়েছেন। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরে দু'দিন অবস্থান শেষে থাই রাজকুমারী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা ঢাকায় ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই রাজকুমারীর আনন্দযাত্রা বিষাদে পরিণত হয়।
স্থানীয় সূত্রগুলো এবং পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরে গাইবান্ধা থেকে ঢাকা ফেরার পথে টাঙ্গাইলের মিজর্াপুরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে রাজকুমারীর গাড়ি বহরের একটি মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মাইক্রোবাসে থাকা ঢাকায় থাইল্যান্ড দূতাবাসের কাউন্সিলর মিস পানি্ন গুরম্নতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তাঁকে বিমান বাহিনীর একটি এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে তাঁর মৃতু্য হয়।
গত সোমবার পাঁচদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন থাই রাজকুমারী মহাচাক্রী। 'জীবিতা বাংলাদেশ' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আমন্ত্রণে গাইবান্ধা যান তিনি। সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে কুঁড়েঘরে দু'রাত অবস্থান করেন থাই রাজকন্যা।
মিজর্াপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মিজর্াপুর উপজেলার চড়পাড়া নামক স্থানে মিস পানি্নকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি খাদে পড়ে যায়। তাঁকে প্রথমে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়া হয়। কুমুদিনী হাসপাতালের প্রফেসর ডা. দীলিপ কুমার জানিয়েছেন, বিকেল সাড়ে চারটায় তাঁকে বিমান বাহিনীর এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে (বিএইচ ১৩১) করে সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হয়। মিজর্াপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতর্া হাবিবুলস্নাহ সরকার ও গাড়ির চালক মিলন জানান, রাজকন্যার গাড়িবহর সকালে গাইবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। গাড়িবহরটি মিজর্াপুরের চড়পাড়ায় এলে টাঙ্গাইলগামী একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-০২৭৮) সঙ্গে পানি্নকে বহনকারী মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববতর্ী প্রায় ১৫ ফুট নিচের খাদে পড়ে যায়। এতে পানি্ন গুরম্নতর আহত হন। গাড়ির চালক অত থাকেন। আহত অবস্থায় তাঁকে দুপুর সোয়া একটায় মিজর্াপুরের নির্বাহী কর্মকতর্া জিন্নাত রেহানা কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যনত্ম রাখা হয়। পরে তাঁকে সিএমএইচএ পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার খবর শুনে টাঙ্গাইলের এডিএম তাজুল ইসলাম, মেজর কিবরিয়া, টাঙ্গাইল র্যাব-১২ এর উপপরিচালক আঃ সামাদসহ প্রশাসনের কর্মকতর্ারা কুমুদিনী হাসপাতালে ছুটে যান।

ভাপা চিতই খেলেন রাজকুমারী
আবু জাফর সাবু গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ির বালাসীঘাট সংলগ্ন রসুলপুরের বেলের চরে থাই রাজকুমারী মাহা চাক্রী সিরিনধর্নও দু'রাত কাটিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে বুধবার রাতে বেলের চরে বিশেষভাবে নির্মিত কুঁড়েঘরের গ্রামটিতে বিদায় অনুষ্ঠান ও ডিনার সম্পন্ন হয়। সেখানে এ অঞ্চলের ভাওয়াইয়া শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত চেলামপল থানচিট ও তাঁর পত্নী এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব) ডা. আব্দুল কাদের খান ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব আরা বেগম গিনি, জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও থাই রাজকুমারী পরস্পরের মধ্যে উপহার বিনিময় করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম জেলাবাসীর প থেকে থাই রাজকুমারী ও সফরসঙ্গী জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. মাইকেল কাগ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে এ অঞ্চলের কুটির শিল্পীদের দ্বারা বিশেষভাবে তৈরি নকশিকাঁথা উপহার দেয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদায় অনুষ্ঠানে এদেশে এসে নিভৃত পলস্নীর চরাঞ্চলে রাত কাটানোসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করায় দেশের মানুষ এবং সরকারের প থেকে থাই রাজকুমারীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। রাজকুমারী তাঁর বিদায়ী বক্তব্যে এদেশের মানুষের আতিথেয়তা এবং সহজ সরল মনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তাঁকে দেখার জন্য এদেশের মানুষের এত কৌতূহল তাঁকে অভিভূত করে। তাঁর বেলের চরে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে রাজকুমারী গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন তাঁকে যে সহযোগিতা করেছে সে জন্য ধন্যবাদ জানান।
রাতে ডিনারে খাদ্যের তালিকায় ছিল থাই কর্ন সু্যপ, পোলাও, রম্নই মাছ ভাজা, চিকেন ফ্রাই, সবজি, ফলের রস ও সালাদ। সেখানে বেলের চরের পাশর্্ববর্তী রসুলপুর গ্রামের গৃহবধূ হামিদা বেগম, মাসুদা খাতুন ও মিনারা বেগম রাজকুমারীর জন্য ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা বানিয়ে খাওয়ান। তাঁরা চরের ওই রিসোর্টের রান্নাঘরে বসেই ঐতিহ্যবাহী এই পিঠাগুলো তৈরি করেন। রাজকুমারী এগুলো তৈরির পদ্ধতি দেখেন এবং স্বাদ গ্রহণ করেন।
গ্রামের লোকজন জানায়, সাত গ্রামের মধ্যে কাপড়ে নানা রঙের সুতোর কাজ করায় হামিদা বেগমের জুড়ি নেই। তাই তাঁকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি রাজকুমারীর জন্য সুঁই সুতো দিয়ে 'জীবন সাথী' 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে' লেখা কাপড়ের ওয়াল ম্যাট তৈরি করেন। যা কাঁচে বাঁধিয়ে রাজকুমারীকে উপহার দেয়া হয়েছে।
রাজকুমারী চলে যাওয়ার পর পরিত্যক্ত বেলের চরের ওই কুঁড়েঘরের রিসোর্টটি এখন একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে সাময়িকভারে সংরণ করা হবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়। উলেস্নখ্য, প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজকুমারীর বাসযোগ্য এই গ্রামটি নির্মাণ করা হয়। সিনঅফসিস নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় দু'মাস সময় ব্যয় করে ছবির মতো এই সাজানো গ্রামটি নির্মাণ করে। এজন্য স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে ১ বছরের জন্য ৩০ বিঘা জমি লিজ নেয়া হয়েছে। এই গ্রামে বিদু্যত সরবরাহের জন্য ৩৩ কেভি মতাসম্পন্ন একটি জেনারেটর বসানো হয়েছে। এর পাশাপাশি সৌর বিদু্যত সরবরাহেরও ব্যবস্থাও নেয়া হয় সেখানে।

No comments

Powered by Blogger.