বহির্বিশ্বের প্রবল চাপে পড়েছে বিজিএমইএ-যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের রুদ্ধদ্বার বৈঠক by রাজীব আহমেদ

ট্রেড ইউনিয়ন চালু ও কাজের পরিবেশ উন্নত করার চাপ আগে থেকেই ছিল, নতুন করে বেড়েছে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ১১১ শ্রমিকের মৃত্যুর পর। ক্রেতা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেশের কূটনীতিকরা আগের থেকে অনেক জোরালোভাবে এখন ট্রেড ইউনিয়ন চালুর কথা বলছেন, কাজের পরিবেশ উন্নত করার কথা বলছেন। এর ফলে ব্যাপক চাপে পড়েছে বিজিএমইএ।
গতকাল বৃহস্পতিবারও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা গণমাধ্যমকে না জানিয়ে বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বিকেলে বিজিএমইএ নেতাদের ডেকে বৈঠক করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রবার্ট ও ব্লেক জুনিয়র বাংলাদেশে আসছেন আগামীকাল। তিনিও বাণিজ্যের বিভিন্ন বিষয়, শ্রম ইস্যু ইত্যাদি নিয়ে সরকার ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস।
গত কয়েকদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বারবার পোশাক খাতের শ্রমের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। গত বুধবার র‌্যাডিসন হোটেলে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'নিরাপদে পণ্য উৎপাদন ও পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা' নিয়ে এক সভায় বলেন, তাজরীনের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি 'ওয়েক আপ কল' (জেগে ওঠার ডাক)। একই সংগঠনের গতকালের এক প্রাতরাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন কূটনীতিকদের সামনে উঠে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার বিষয়টি। অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর এক নেতা ট্রেড ইউনিয়নের বিপক্ষে যুক্তি দেখাতে বলেন, 'ফিলিপাইন একসময় ডেনিম (জিনস জাতীয় কাপড়) রপ্তানির জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর পর তাদের উৎপাদন কমে গেছে। ফিলিপাইন আর তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।'
গতকাল দুপুরে বিজিএমইএ ভবনে যান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। তিনি বিজিএমইএর সভাপতি সফিউল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা গেছে, তিনি এই সভায় শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড, ট্রেড ইউনিয়ন চালু, 'বেটার ওয়ার্ক' কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) একটি যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প। এই প্রকল্প শ্রমমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেলে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয় দেশটির শ্রম বিভাগ। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও কয়েক মাস ধরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার ও বিজিএমইএকে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন ।
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সঙ্গে দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মজিনা। ওই সভায় সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও পরে থাকতে দেওয়া হয়নি। আয়োজকরা বলেন, রাষ্ট্রদূত কিছু খোলামেলা কথা বলতে চান। যেখানে তিনি গণমাধ্যমের উপস্থিতি চাইছেন না।
মজিনা বিভিন্ন সভায় ১৯১১ সালের ২৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে ট্রায়াঙ্গল শার্টওয়েইস্ট ফ্যাক্টরি নামের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করছেন। ওই দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন মারা যায়। ওই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রকে সচেতনা ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে পাল্টে দিয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। মজিনার মতে, বাংলাদেশের তাজরীন কারখানার অগ্নিকাণ্ডও তেমনই একটা ঘটনা হতে পারে, যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হান্না গতকাল বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাজরীনের ঘটনার পর সংস্থাটি কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চান। বিজিএমইএর নেতারা তাঁকে জানান, তাঁরা একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। ওই টাস্কফোর্স কারখানাগুলো জরিপ করে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সময় দেবে। এই সময়ের মধ্যে কোনো কারখানা সমস্যা সমাধান না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি নিহত সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানানো হয়। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ইইউর রাষ্ট্রদূত চেয়েছেন, বিজিএমইএর নেওয়া উদ্যোগগুলো যেন অব্যাহত থাকে।

No comments

Powered by Blogger.