সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা নেই- এলপি গ্যাসের দাম বেড়েছে আবার by অরুণ কর্মকার

সারা দেশে আবার বেড়েছে তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের দাম। আমদানিকারকেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। আর ডিলারদের কথা, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বাড়লেও সে তুলনায় সরবরাহ কম। এসবই দাম বাড়ার কারণ।


সরকারি হিসাবে দেশে এখন এলপি গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় চার লাখ টন। কিন্তু সরবরাহ মাত্র এক লাখ টনের কিছু বেশি, যার ৮০ শতাংশই আমদানিনির্ভর।
কয়েকটি আমদানিকারক কোম্পানির সূত্র জানায়, গত মাসের তুলনায় এ মাসে কাঁচামালের দাম প্রায় ২০০ মার্কিন ডলার বেড়ে যাওয়ায় সাড়ে ১২ কেজি গ্যাসের একেকটি সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা বাড়বে।
সর্বত্রই দাম বাড়তি: ঢাকার রোকেয়া সরণির একজন খুচরা বিক্রেতা মমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসে তিনি সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি করেছেন সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ টাকা করে। এ মাসে বিক্রি করতে হবে এক হাজার ৫৫০ টাকা করে। গত কয়েক মাসে তাঁর গ্রাহকদের বেশির ভাগই গ্যাস-সংযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এতে সিলিন্ডার বিক্রি কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় সিলিন্ডারপ্রতি ব্যয়ও বেড়েছে।
বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডের সিলিন্ডার বিক্রেতা মোহাম্মদ সাবের বলেন, গত মাসের চেয়ে এ মাসে প্রতিটি সিলিন্ডার প্রায় ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। ঢাকায় চাহিদা প্রতি মাসেই কমছে।
ঢাকার বাইরের অবস্থাও এক। বরিশালের কালীবাড়ি রোডের একজন খুচরা বিক্রেতা জানান, তাঁর ডিলার বলেছেন, আগামী কয়েক মাস এলপি গ্যাসের দাম বাড়তির দিকে থাকবে। গত মাসের চেয়ে এ মাসে প্রায় ৩০০ টাকা বেশি পড়বে প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম।
বগুড়ার আবদুল হাকিম, নাটোরের মমিনুল হক, সিরাজগঞ্জের আবসারউদ্দিনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আরও কয়েকজন বিক্রেতা প্রথম আলোকে একই কথা বলেছেন।
সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেই: জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকাসহ প্রধান প্রধান শহরে চাহিদা বাড়ছে পাইপলাইনের গ্যাস-সংযোগ বন্ধ থাকায়। আর মফস্বল শহর ও গ্রামাঞ্চলে চাহিদা বাড়ছে কাঠখড়, লতাপাতা প্রভৃতি প্রচলিত জ্বালানির প্রাপ্যতা চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায়। ছোট ও মাঝারি ধরনের হোটেল-রেস্তোরাঁ, কিছু শিল্প এবং যানবাহন চলাচলেও এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যকার বিপুল ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে সরকার দেশীয় উৎপাদন ও আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল দুই বছর আগে। এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে পথনকশা: একটি হালচিত্র শীর্ষক পুস্তিকায় বলেছেন, জ্বালানি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার এলপি গ্যাসের প্রসারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার এর সরবরাহ বৃদ্ধি ও ব্যবহার প্রসারের জন্য দাম কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
পিপিপির অধীনে মংলায় একটি এবং চট্টগ্রামের কুমিরায় আরও একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে ভরার কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর প্রতিটিতে বছরে এক লাখ টন করে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে ভরা যাবে। কারখানাগুলোর কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে সিলিন্ডার-সংশ্লিষ্ট সব ধরনের শুল্ক ও কর কমানো হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এলপি গ্যাসের মূল্য পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগও নিতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, অর্থমন্ত্রী যেসব ব্যবস্থার কথা বলেছেন, তার মধ্যে একমাত্র দাম পুনর্নির্ধারণ করলেই এলপি গ্যাসের দাম দ্রুত কমানো সম্ভব। অন্য সব ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদি।
নিয়ন্ত্রক আন্তর্জাতিক বাজার: দেশে বর্তমান এলপি গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানি হচ্ছে। ফলে এসব কোম্পানির সরবরাহ করা গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারনির্ভর। বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের কাঁচামালের সরবরাহকারী এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এলপি গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন সৌদি অ্যারামকো। গত জানুয়ারি মাসে অ্যারামকো এলপি গ্যাসের দুটি উপাদান প্রোপেন ও বিউটনের দাম নির্ধারণ করেছিল প্রতি টন যথাক্রমে ৮৫০ ও ৯১০ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা হয় যথাক্রমে এক হাজার ১০ ও এক হাজার ৪০ ডলার। মার্চে দাম আরও বেড়ে হয় যথাক্রমে এক হাজার ২৩০ ও এক হাজার ১৮০ ডলার।
এপ্রিল থেকে দাম কমতে থাকে। এপ্রিলে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম হয় যথাক্রমে ৯৯০ ও ৯৯৫ ডলার। কমতে কমতে জুলাই মাসে তা ৫৭৫ ও ৬২০ ডলারে নামে। কিন্তু চলতি আগস্ট মাসে দাম আবার বেড়ে প্রোপেন ও বিউটেন দুইয়েরই দাম হয়েছে প্রতি টন ৭৭৫ ডলার।
কিন্তু দেশের ক্রেতাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে অবিলম্বে কাঁটায় কাঁটায় হিসাব করে এখানে দাম বাড়ানো হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে সেভাবে তার প্রতিফলন হয় না।

No comments

Powered by Blogger.